<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও মূল্যস্ফীতির চাপ কমছে না, বরং বাড়ছে। এমনকি দেশের ব্যবসায়ীরা সরকারকে চাপে রেখে একের পর এক পণ্য আমদানিতে শুল্কছাড় বা প্রায় মওকুফ করিয়ে নিচ্ছেন। তবে এত এত শুল্কছাড়ের পরও বাজারে তার সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ, বাড়তি দামেই নিত্যপণ্য কিনতে হচ্ছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ১৩ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাজারে এতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ বলছে দাম কমছে না, অথচ এনবিআর অনেক সুবিধা দিয়েছে, ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার পরও নিত্যপণ্যের দাম কমে না। মানুষ অধৈর্য হয়ে গেছে, এটাই স্বাভাবিক।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বাজারের বেশির ভাগ ক্রেতার আক্ষেপ, কষ্ট এবং দীর্ঘশ্বাস চোখে পড়ার মতো। নিত্যপণ্যের আজ এক দাম, তো কাল আরেক দাম। মানুষের আয় বাড়েনি, অথচ ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। আয়-ব্যয়ের হিসাব ঠিক রেখে সংসার চালানোই দায় হয়ে যাচ্ছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অসংখ্যবার পত্রিকায় লিখেছি। এখন আবার লিখছি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে আরো আট মাস লাগবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বিবিএসের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, অক্টোবরে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০.৮৭ শতাংশ হয়েছে। খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে চাল ও সবজির দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বাংলাদেশ প্রায় দুই বছর ধরে ক্রমবর্ধমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার এরই মধ্যে পেঁয়াজ, ডিমসহ আরো কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে, কিন্তু বাজারে তার প্রভাব নেই। গত ১৪ নভেম্বর একটি দৈনিক পত্রিকার সংবাদে প্রকাশ করা হয় যে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত এক মাসে আলুর দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা, চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা, পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, রসুনের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) মার্জিন তুলে দিয়েছে। তুলে দেওয়া হয়েছে সিঙ্গল বরোয়ার (ব্যক্তির একক ঋণ) লিমিট। অক্টোবরে রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। বেড়েছে প্রবাস আয়। ফলে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু তার পরও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মতামত দিচ্ছেন, বাজারে এখনো সিন্ডিকেট আছে। পণ্য থাকার পরও সরবরাহ চেইনে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি, বাজারে পণ্যের সংকট সেভাবে না থাকলে পণ্যের দাম কেন কমে না! আমার কাছে মনে হয়, পণ্যের দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ বাজার মনিটরিং শক্তভাবে না হওয়া। আর বাজার মনিটরিং না হলে কোনো পদক্ষেপই কাজে আসার সুযোগ নেই। দিনে দিনে দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের সীমাহীন সংকট তৈরি হচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাজার সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। পুরো ব্যবস্থা আগের মতোই। সরবরাহে বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছে। বাজারে চাঁদাবাজি আছে। ফলে সরকারের কোনো চেষ্টাই সফল হচ্ছে না। বাজারে সরকারের মনিটরিং নেই বললেই চলে। নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সেখ বশির উদ্দিন বাজারে স্বস্তি ফেরাতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেশ কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তার আক্ষেপের কথা চোখে পড়ার মতো ছিল। তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ১৫ বছরে আমার বেতন অন্তত ডাবল (দ্বিগুণ) হয়েছে। এতে তো আমার দিন ভালো যাওয়ার কথা। কিন্তু না, অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ। বেতন এক টাকা বাড়লে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। আগে মাসের খরচ চালিয়ে পকেটে কিছু থাকত। এখন বেতনে চলে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৪ নভেম্বর দুপুরে খাদ্য অধিদপ্তরের সভা শেষে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য ক্রেতা হিসেবে নিজেও চাপে রয়েছেন বলে জানান। সাধারণ মানুষের হাহাকারে স্পষ্ট হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কতটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেছে, এসেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা বেশি থাকবে, সেটি স্বাভাবিক। কিন্তু পণ্যের দাম এখনো নিয়ন্ত্রণে না আসায় বিষয়টি ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বলা শুরু করেছে যে আগেই আমরা ভালো ছিলাম। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একসময় ছিল ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি এবং কিছুসংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ীর হাত। তাহলে এখনো কি সেই চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট রয়েছে? গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছি, কিছু জায়গায় শুধু সেটআপ চেঞ্জ হয়েছে। চাঁদাবাজি আগের মতোই চলছে। তাহলে সেগুলো কেন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না? বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, সরকারপ্রধান নিজেই কৃত্রিম সংকটের কথা উল্লেখ করে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকবার। এমনকি তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রীও দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারার কারণ ব্যাখ্যাসহ নিজের অপারগতা প্রকাশ করেছেন। নানা কারণে বিগত সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। কিন্তু এখন সেই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারার কারণ কী? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখন সময় এসেছে, সরকারি সেবা খাতগুলোকে শতভাগ জবাবদিহিতে আনা। দেশের সেবা খাত দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ার কারণে সাধারণ মানুষকে এখনো বিভিন্ন দিক থেকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। দেশে ধনী লোকের সংখ্যা বাড়লেও দারিদ্র্যের হার এখনো উল্লেখযোগ্য। মাত্রাগত দিক থেকে এর ভয়াবহতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। কাজেই সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাব, বর্তমান সময়ে ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধ করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় কিভাবে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যায় সেদিকে নজর রাখুন। পাশাপাশি পণ্য সরবরাহে তদারকি বৃদ্ধি সাপেক্ষে তা যথাযথ বণ্টনে মনোযোগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সার্বিক বিশ্লেষণে এককথায় বলা যায়, বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে এর প্রভাব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই সমানভাবে সামনে আসার শঙ্কা রয়েছে। দেশে এখন এক ধরনের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। এই অবস্থায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে পড়ছে। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত হবে দেশের কথা ভেবে, জনগণের কথা ভেবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষ ভরসা করতে চায়। </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">sultanmahmud.rana@gmail.com</span></span></span></span></p>