<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব আশঙ্কা সত্যি করে অবশেষে ইরানের ভূমিতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত ১ অক্টোবরের হামলার বদলা নিতে ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালাবে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছিল। এখন প্রশ্ন, এটি কি কেবল ইরানকে ইসরায়েলের শক্তি জানান দেওয়ার জন্য একটি বার্তা, নাকি ইরানের বিরুদ্ধেও যুদ্ধের সূচনা। বিষয়টিকে স্পষ্ট না করলেও এই হামলার আগে ইরানের পক্ষ থেকে সর্বশেষ জানানো হয়েছিল যে ইসরায়েল যদি ইরানে হামলা চালায়, তাহলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে। তারা এটিই জানিয়েছিল যে সে ক্ষেত্রে ইসরায়েলে অন্তত হাজারখানেক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। তার পরও আমরা দেখলাম, এই হামলাটি ঘটানো হলো ইসরায়েলের দিক থেকে এবং এর নেপথ্যে মার্কিন কূটনীতিই যে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে, সেটি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাত্র কয়েক দিন আগে ইসরায়েল সফর করে গেলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটি মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর ১১তম সফর। ইসরায়েল থেকে তিনি সরাসরি চলে যান সৌদি আরব। কয়েক দিন আগে ইরানে হামলার কৌশল নিয়ে মার্কিন ও ইসরায়েলের যৌথ কৌশল নিয়ে তৈরি করা গোপন নথি ফাঁসের পর ধারণা করা যাচ্ছিল যে তাঁর এবারের মধ্যপ্রাচ্য সফরটি হবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ইরানে হামলার মধ্য দিয়ে বোঝা গেল যে তিনি নিজ থেকে এসে এই <img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/27-10-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="273" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/27-10-2024/2/kalerkantho-ed-2a.jpg" style="float:left" width="400" />হামলার সবুজ সংকেত দিয়ে গেলেন এবং কোনো নথির ওপর নির্ভর না করে সশরীরে ইসরায়েলকে কী করণীয় সে সম্পর্কে ধারণা দিয়ে গেলেন। এই সময়ে এসে এটি কারো বুঝতে না পারার কথা নয় যে ইসারায়েলের তরফ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে হামাস ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে চলমান সর্বাত্মক যুদ্ধের বাইরে ইরানে হামলা এই যুদ্ধকে আরো বিস্তৃত করার একটি বার্তা দেওয়া। ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের অপরাপর দেশগুলোর তুলনায় আকারে অনেক ক্ষুদ্র এবং অন্যান্য দেশের সামগ্রিক শক্তির তুলনায় অনেক দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েলের পেছনে সর্বশক্তি নিয়োগ করে এই যুদ্ধটি পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এক বছর ধরে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক চাপের কাছে তারা দৃশ্যত যুদ্ধবিরতির আহবান জানালেও প্রকারান্তরে এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যেভাবে ব্যাপক গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে, এর সবটারই দায় যুক্তরাষ্ট্রের।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে মিসরের মধ্যস্ততায় একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে গত ২৪ অক্টোবর আলোচনার পর ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের তরফ থেকে ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাতারের দোহায় এই আলোচনা চলে আসছিল, তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এতে আগ্রহ দেখানো হয়নি। সে সময় তারা বলেছিল, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস না করা পর্যন্ত তারা এই যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তারা লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধ শুরু করে। প্রায় তিন মাস ধরে তারা সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত হেনে প্রথমে হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং লেবাননে সংঘাত শুরুর পর হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করে। সর্বশেষ কয়েক দিন আগে গাজায় হামলা চালিয়ে হামাসের নতুন নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করে। সিনওয়ারকে হত্যার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শেষের শুরু হলো।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সর্বশেষ তাদের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে আসার ইতিবাচক ইঙ্গিতের মধ্য দিয়ে নেতানিয়াহুর কথাই প্রতিধ্বনিত হলো। এদিকে হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার পর হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরিকেও হত্যা করেছে ইসরায়েল। জানা যায়, হাসেম সফিউদ্দিন হিজবুল্লাহপ্রধান হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তিন সপ্তাহের বেশি সময় আগে বৈরুতে এক বিমান হামলা চালিয়ে ইসরায়েল তাঁকে হত্যা করেছে বলে দাবি জানালে কয়েক দিন আগে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এর সত্যতা স্বীকার করে বিবৃতি দেওয়া হয়।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইসরায়েল এবং হামাস উভয়ের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর আগ্রহ মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও ইরানে হামলার পর নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া আমরা দেখেছি এই আলোচনায় সম্মত হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজায় তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে। হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের হামলা চলমান রয়েছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে তারা পাল্টা হামলা চালিয়ে ইরানকে নতুন করে এই যুদ্ধে আমন্ত্রণ জানানো হলো। সম্প্রতি ইরানে হামলা চালানোর বিষয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের গোপন পরিকল্পনার নথি ফাঁস হওয়ার পর এই হামলা পরিচালনায় কয়েক দিন বিলম্ব হয়েছে মাত্র। ইরানের কাছেও এ ধরনের তথ্য ছিল যে তারা যেকোনো সময় আক্রান্ত হতে পারে এবং সম্ভাব্য হামলা মোকাবেলায় তারা কী পদক্ষেপ নেবে, তা নিয়ে সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে তারা সহস্রাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পাল্টা জবাব দেবে। এখন ইরানের প্রতিক্রিয়া দেখার পালা। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অপরাপর শক্তিগুলো, বিশেষ করে সৌদি আরব, জর্দান, মিসর, সিরিয়া ও তুরস্কের তরফ থেকে এটিকে কিভাবে দেখা হবে, তারা কি ইরানের সঙ্গে নেপথ্যে থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখবে, নাকি আপাতত মৌনতা অবলম্বন করবে, এটি জানার জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যদি এটি কেবল একটি প্রতীকী প্রতিশোধ হিসেবে বিবেচনা করে এখানেই লাগাম টেনে ধরা হয়, তাহলে ইরানের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখনো না-ও হতে পারে। সুতরাং গাজা যুদ্ধবিরতি সার্বিক অর্থে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতায় বিশ্ববাসীর নজর গাজা থেকে সরিয়ে দিলেও লেবাননে চলমান হামলা এবং ইরানে সংঘটিত হামলার বিষয়ে নজর এড়ানোর সুযোগ থাকছে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের ইসরায়েল সফর শেষে সৌদি আরবে যাওয়া ও এর পরপরই লেবাননের বন্দরনগরী টাইরে এবং গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা পরিচালনা এই অঞ্চলের অস্থিরতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যক্কারজনক ভূমিকার প্রমাণ তুলে ধরে। হামলা হয়েছে গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরেও। জানা গেছে, শিবিরে হামলায় ৩১ জন মারা গেছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। ইরানে হামলার রাতেও তারা হামাসের বিরুদ্ধে আবারও হামলা চালিয়েছে, যেখানে আরো ১২ জন নিহত হয়েছে। জবাবে তেল আবিবের কয়েকটি শহর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে হিজবুল্লাহ। বন্দরনগরী টাইরে মৎস্য শিকারি এবং পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এ ছাড়া জাতিসংঘের শান্তি মিশনের সদস্যরা সেখানে কাজ করছেন। সম্প্রতি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বিস্তৃত এই এলাকা খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। লাখো মানুষ এরই মধ্যে এলাকাটি ছেড়ে পালিয়েছে। লেবাননের সাধারণ মানুষ ধারণা করছে, এই যুদ্ধবিরতি গাজার ক্ষেত্রে সফল হলেও লেবাননের অবস্থা গাজার মতোই হবে। বছরাধিককাল ধরে ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৪৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ছোট গাজা উপত্যকা। এই মুহূর্তে তারা সব কিছু হারালেও যুদ্ধবিরতি তাদের জন্য নিরাপদ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারে। সম্প্রতি জাতিসংঘের আংকটাড কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে গাজার অর্থনীতি উঠে দাঁড়িয়ে ২০২২ সালের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে ৩৫০ বছর লাগবে। এর থেকেই এর ভয়াবহতা অনুমান করা যায়। লেবাননের ক্ষেত্রে তাই ধারণা করা যায় যে ইসরায়েল সম্ভবত শিগগিরই সেখানে তাদের হামলা বন্ধ করবে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের এই নির্দয় হামলা মেনে নিতে পারছে না খোদ সে দেশের অনেক নাগরিক। ইসরায়েলের হামলার জবাবে হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইরানের পক্ষ থেকে পাল্টা হামলা এবং নাগরিকদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তারা অনেকেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা এরান এিজউন তাঁর এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় যুদ্ধাপরাধ করছে জানিয়ে সেনা সদস্যদের এ ধরনের কর্মে আদেশ অমান্যের অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, তিনি নিজে হলেও এই আদেশ মানতেন না, যদিও এরানের এই উপলব্ধির অনেক আগেই জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধাপরাধ চলছে জানিয়ে এর প্রতিকার চাওয়া হয়, যার সবই বিফলে গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে ইরানে ইসরায়েলের এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে নিঃসন্দেহে কেবল থমকেই দেবে না, এর মধ্য দিয়ে অঞ্চলটিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা যায়। ইসরায়েল যদি ইরানের বিরুদ্ধে সংযত না থাকে এবং সেই সঙ্গে এর মধ্য দিয়ে চীন ও রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তিবর্গও যদি জড়িয়ে পড়ে, তাহলে ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয় দেখবে বিশ্ব।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">mfulka@yahoo.com</span></span></span></span></p>