<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের  বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ অন্যান্য প্রশাসনিক পদে আসীন শিক্ষকরা পদত্যাগ করেছেন। কেউ স্বেচ্ছায় আবার অনেকে পদত্যাগের আলটিমেটামে পদ ছাড়তে বাধ্য হন। যাঁরা পদত্যাগ করেননি, তাঁরা একেবারে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, যেখানে এখনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার অন্যান্য স্তর স্বাভাবিকভাবে চললেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল। অন্তর্বর্তী সরকার হাতে গোনা কয়েকটিতে উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে। মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বলছেন, একসঙ্গে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেবেন। সাময়িক সময়ের জন্য ডিনস কমিটি এবং প্রয়োজনে বিভাগীয় প্রধানদের পরামর্শক্রমে একজন সিনিয়র শিক্ষককে প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য একটি পরিপত্র সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার কতগুলো যোগ্যতা নির্ধারণ করেছে, যেখানে দলনিরপেক্ষ, ভালো একাডেমিক জ্ঞান এবং শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ এবং এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। আমরাও চাই এমন ব্যক্তিবর্গ উপাচার্য হোন।  কিন্তু বাস্তবতা হলো এমন উপাচার্য পাওয়া নিতান্ত কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। একটু সময় নিলে এমন উপাচার্য পাওয়া যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অতীতের সব রাজনৈতিক সরকার রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনায় উপাচার্যসহ অন্যান্য প্রশাসনিক পদ পূরণ করত। একসময় আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল হাতো গোনা। তখন রাজনৈতিক বিবেচনা গুরুত্ব পেলেও মেধাকেও মূল্যায়ন করা হতো। উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে অনেককে দেখা যেত না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় আমি এমন শিক্ষকদের উপাচার্য হিসেবে পেয়েছি, যাঁদের একাডেমিক জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলা কঠিন ছিল। এখনকার সময় অনেকেই উপাচার্য হতে চান। কেন উপাচার্য হতে চান, তা আমাদের কাছে মোটামুটিভাবে বোধগম্য। অথচ বিষয়টি এমন হবে, যেখানে একজন ভালো শিক্ষাবিদকে সরকার উপাচার্য পদের জন্য আমন্ত্রণ জানাবে। বিপরীতে দেখা যায় উপাচার্য হওয়ার জন্য একজন শিক্ষক তদবির করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও এখন অনেক বেড়েছে। মনে হয়, উপাচার্য হলে অনেক ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায়। তা না হলে কেন উপাচার্য হওয়ার জন্য এমন দৌড়ঝাঁপ। এমনকি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও অনেককে উপাচার্য হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে দেখা যায়। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষকই কোনো না কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুশীলন করেন। অল্পসংখ্যক রয়েছেন, যাঁরা সরাসরি কোনো মতাদর্শে সংযুক্ত নন। একজন শিক্ষকের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই মতাদর্শ যখন প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজে সরাসরি অনুশীলন করা হয়, তখন সমস্যা তৈরি হয়। যখন রাজনৈতিক মতাদর্শ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কাজ করা হয়, তখন শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। এমনকি একই মতাদর্শের শিক্ষকদের মধ্যেও দেখা যায় একাধিক গ্রুপ এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। শিক্ষক সমিতি নির্বাচন এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ড তাঁরা আলাদাভাবে পালন করেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এমন বিভাজন লক্ষ করি। কখনো কখনো বিভাজন এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে একসঙ্গে ওঠাবসা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের কাছে মনে হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উপাচার্য নিয়োগের মানদণ্ড সঠিক। তবে নির্বাচন করতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। নিরপেক্ষ ও ভালো শিক্ষক পেলেও কেউ কেউ আসতে চাইবেন না। কেননা তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। যিনি উপাচার্য হিসেবে নতুন আসবেন, তাঁকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তিনি কাকে নিয়ে কাজ করবেন এবং কাকে বাদ দেবেন, এটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির বাইরেও কিছু শিক্ষক আছেন, কিন্তু তাঁরা সংখ্যায় কম এবং প্রশাসনিক কাজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ না-ও হতে পারেন। কেননা তাঁকে কখনো কাজে লাগানো হয়নি বলে তাঁর অভিজ্ঞতা নেই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার যদি ঠিক থাকেন, তাহলে অনেক কিছু সম্ভব। তাঁকে সহযোগিতা করার মানসিকতা আমাদের থাকতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যদি তাঁকে সহযোগিতা করেন, তাহলে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা অসম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক সদস্যকে মনে করতে হবে, আমি সব সময় ন্যায়ের পক্ষে থাকব। হলের সিট বণ্টন থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ পর্যন্ত যাবতীয় কাজ যখন নিয়ম-নীতির মধ্যে চলবে, তখন বৈষম্য থাকবে না। আমরা বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের কথা বলছি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়কেও সংস্কারের মধ্যে আনতে হবে। রাষ্ট্রের বড় বড় বিষয়ের মতো প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর মধ্যেও পরিবর্তন আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দল-মতের শিক্ষকদের যুক্ত করতে হবে। কেননা আমি আগেই বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষকই রাজনৈতিক মতাদর্শ চর্চা করেন। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন আর আগের মতো সব কিছু চলবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। এ জন্য সময় একটু বেশি লাগলেও ভালো শিক্ষকদের উপাচার্য হিসেবে বেছে নেওয়া উচিত। তিনি এমন একটি কাঠামো তৈরি করে যাবেন, যা পরবর্তী সময়ে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি এমন একটি পদ্ধতি বেছে নেবেন, যেখানে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারও অনেক কিছু পরিবর্তন করতে পারবে না। আর তা না করতে পারলে আমরা আগের তিমিরেই থেকে যাব। শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের আত্মত্যাগ কোনো সাফল্য বয়ে আনবে না। আমাদের শিক্ষকদের মধ্য থেকেও জোরালো দাবি আসা উচিত। উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে যাতে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় থাকে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের ব্যক্তি ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে চিন্তা করতে হবে। নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে এবং সহকর্মীদের পরিবর্তনে উৎসাহিত করতে হবে। তবেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষা ও গবেষণায় সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। আমাদের প্রত্যাশা মেধাবী ও দলনিরপেক্ষ উপাচার্য যিনি হবেন, তিনি হবেন সবার। সব দল-মতের ঊর্ধ্বে। আমরা এমন উপাচার্যের অপেক্ষায় আছি।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">neazahmed_2002@yahoo.com</span></span></span></span></p> <p> </p>