<p>শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের বারান্দার এপাশ-ওপাশ আর ক্লাস রুমে বসেই অবসর সময় কাটায়। সামনে বিশাল জায়গা থাকলেও একটি মহল সেখানে ইজারা নিয়ে পুকুর খনন করে সেখানে মাছ চাষ করছে। এই চিত্র ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পশ্চিম ভালুকা পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। প্রতিনিয়তই ঝুঁকিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।</p> <p>গৌরীপুর রেলস্টেশনের প্রবেশপথের পাশ দিয়ে চলে গেছে স্থানীয় বেকারকান্দা মোড় পর্যন্ত একটি আঞ্চলিক সড়ক। তার পাশে অবস্থিত পশ্চিম ভালুকা পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।</p> <p>গতকাল রবিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ের সামনে বিশাল পুকুর। চার পাশে নেট দিয়ে ঘেরা। পানি থৈথৈ। এক মুহূর্তের জন্যও পানি কমে না। কারণ শ্যালো মেশিন দিয়ে অনবরত পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রবেশের কোনো পথ না থাকায় ওই পুকুরের পার দিয়ে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। আগত শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে একবার প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। কেউ বের হতে চাইলেও অনেক কষ্ট করতে হয়।</p> <p>বিদ্যালয়ের সামনে এই পুকুরের আদোপান্থ জানতে চাইলে সুষমা নাসরিন তানিয়া নামে এক শিক্ষিকা জানান, তিনি এই বিদ্যালয়ে একযুগ ধরে শিক্ষকতা করছেন। বিদ্যালয়ের জমিদাতা পাশের মহল্লার আব্দুল হান্নান কমিশনার। ১৯৭৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের আশপাশে বাংলাদেশ রেলওয়ের পতিত জমি। বিদ্যালয়ের ঠিক সামনে রয়েছে প্রায় ৫০ শতক (৫ কাঠা) পতিত জমি। এই জমিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করত। মহানুভবতার বশে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ব্যবহার করতে দিয়ে আসছিল। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সুযোগ বুঝে লিজের নাম করে প্রায় সাত বছর আগে বিশাল পুকুর খনন করেন। পরে সেখানে শুরু করেন মাছ চাষ। ফলে এক রকম বিদ্যালয়ে বন্দি হয়ে যান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে ওই পুকুরে যখন শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি প্রবেশ করানো হয় তখন পানির চাপে ভেঙে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের সামনের মাটি। বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যালয়ের ভবন। এ বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা কয়েকবার উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পুকুরে এখনো মাছ চাষ করা হচ্ছে।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পুকুরটি ইজারা নিয়েছেন বিদ্যালয়ের পাশের গ্রামের মোহাম্মদ আলী নামে একজন। তিনি জানান, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকায় তিন বছরের জন্য পতিত থাকা জায়গা লিজ নিয়ে তিনি পুকুর খনন করেছেন। এতে তিনি মাছ চাষ করছেন।</p> <p>আব্দুল্লাহ নামে এক শিক্ষার্থী বলে, ‘বারান্দার লগেই দিঘি (পুকুর)। এর পার দিয়া হাইট্যা স্কুলে যাওন লাগে আওন লাগে। মাঠ না থাহায় খেলতাম পারি না। দিঘিত যেদিন মাছেরে খানা দেয় হেইদিন কী যে গন্ধ লাগে, ক্লাস করতাম পারি না।’</p> <p>বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা আকন্দ জানান, এই পুকুর নিয়ে সার্বক্ষণিক খুবই আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। এ বিষয়ে এলাকার লোকজন ছাড়াও কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো কাজে আসেনি।</p> <p>গৌরীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমানারা বেগম জানান, তিনি শুনেছেন, তবে তাঁকে প্রধান শিক্ষক অবহিত করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।</p> <p>গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিল আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে জানান, এ বিষয়ে তিনি জানলেও কেউ তাঁর কাছে আবেদন নিয়ে আসেনি। এ ছাড়া লিজ নিয়ে তো পুকুর খনন করা যায় না।</p>