<p>ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে মোট ১০৪টি ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট তালিকাভুক্ত রয়েছে। তবে আট থেকে ১০ বছর ধরে ব্যবসা করতে পেরেছে মাত্র পাঁচ-ছয়টি এজেন্ট। এর মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি ব্যবসা করেছে ‘খলিফা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।</p> <p>বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিঅ্যান্ডএফ মূলত পণ্য আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত ব্যবসা হলেও পরিবহনের ওপরও ছিল ওই সিন্ডিকেটের থাবা। পণ্যের জন্য কাজল সিন্ডিকেট থেকে গাড়ি নেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক; অন্যথায় গাড়ি আটকে দেওয়া, এমনকি উধাও করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটত। তবে সরকারের পটপরিবর্তনের পর সেই কাজল সিন্ডিকেট বন্দর থেকে সটকে পড়েছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে বন্দরের ব্যবসায়ীদের মধ্যে।</p> <p>সরেজমিনে ঘুরে আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে বন্দরে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মো. তাকজিল খলিফা কাজল। খলিফা এন্টারপ্রাইজ নামে নিজের একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে তিনি বন্দরের ব্যবসা কার্যক্রমে প্রবেশ করেন। এরপর নিজেকে বন্দরের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অলিখিত দাবি করেন। তাঁর বড় ভাই ফোরকান খলিফাকে বানান সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। তাকজিল খলিফা কাজলের ঘনিষ্ঠজন মো. শফিকুল ইসলামকে করা হয় আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। মূলত তাঁদের নির্দেশনায়ই বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। ফোরকান খলিফার নিজস্ব কোনো ব্যবসা না থাকলেও অন্যের পণ্য আনা থেকে প্রতিদিন তিনি টাকা হাতিয়ে নিতেন। তাকজিল খলিফা কাজলের চাচাতো ভাই ইবনে মাসুদ খলিফা লাকসু নিয়ন্ত্রণ করতেন বন্দরের পরিবহন ব্যবসা।</p> <p>বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা তাকজিল খলিফা কাজলের আখাউড়া রাধানগরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এর পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তাঁরা জানান, তাকজিল খলিফার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে চাকরি বাণিজ্য, দখলদারি, জোর করে পদবি নেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তাদের ভয়ে তটস্থ ছিল আখাউড়ার মানুষ।</p> <p>ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সাবেক আইনমন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে তাকজিল খলিফা কাজল বন্দরে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। ভারত থেকে যে কেউ পণ্য আনলে তাঁর মালিকানাধীন খলিফা এন্টারপ্রাইজের কাগজপত্র ব্যবহার করা ছিল অলিখিত নিয়ম। </p> <p>আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী ফারুক ভূঁইয়া বলেন, কাজলের ভয়ে কোনো ব্যবসায়ী আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসা করতে পারতেন না। তাঁর কারণে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে অন্য বন্দরে চলে গেছেন। ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, ‘এখন আর এখানে কোনো সিন্ডিকেট বলে শব্দ নেই। যে যার মতো ব্যবসা করবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখন নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যে ব্যবসায় স্বাভাবিক গতি ফিরে আসবে।’</p> <p>আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসিবুল হাসান বলেন, ‘সিন্ডিকেটের কবলে বন্দরের ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। সবাইকে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। এখন এ অবস্থার অবসান হয়েছে। আশা করছি, এখন সবাই স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করতে পারবে।’</p> <p> </p>