<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৭ সালের ২২ অক্টোবরের সন্ধ্যাটি এখনো বিভীষিকাময় হয়ে আছে মাওলানা মোজাফফর হোসেনের জীবনে। ওই দিন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের পুরনো ছাত্রাবাসের মসজিদে মাগরিবের নামাজে ইমামতি শেষে সবে বাইরে বের হয়েছেন তিনি। উদ্দেশ্য রাস্তার উল্টো দিকে একটি বাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া ছাত্রীকে আরবি পাঠদান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাওলানা মোজাফফর বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">“</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্রাবাসের গেটে আসার সঙ্গে সঙ্গে এক পুলিশ সদস্য কাছে এসে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটু এদিকে আসেন, স্যার কথা বলবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কয়েক গজ যাওয়ামাত্র ওই ব্যক্তি ও তার সহযোগীরা আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে উঠিয়ে নেয় পুলিশের গাড়িতে। সেখান থেকে সোজা আমার বাড়ির পথে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বাড়ির কাছে গিয়ে দেখি সেখানে অনেক পুলিশ। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ কৌতূহলী হয়ে ব্যাপারটা বুঝতে চাইছে। কিছু সময় পর জানতে পারি আমি জঙ্গি। আমার বাড়িতে অস্ত্র-বিস্ফোরক আছে। পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">”</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৭ সালের এই ঘটনার পর কেটে গেছে সাতটি বছর। গত ১৮ অক্টোবর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন মাওলানা মোজাফফর। সম্প্রতি যশোর শহরতলির পাগলাদহ এলাকায় তার বাড়িতে বসে কথা হয় মোজাফফরের সঙ্গে। কালের কণ্ঠকে তিনি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জঙ্গিনাটক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> মঞ্চায়নের কাহিনি সবিস্তারে বলেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাওলানা মোজাফফরের জন্ম বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার একটি গ্রামে। মৃত আজিজুর রহমানের ১০ সন্তানের একজন তিনি। অভাবী বাবা লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারতেন না বিধায় মোজাফফর ১৯৯২ সালে চলে আসেন যশোর শহরের অন্যতম প্রাচীন কওমি মাদরাসা দড়াটানা জামিয়া ইসলামিয়ায়। সেখানে বিনা পয়সায় পড়ার সুযোগ আছে। মোজাফফর এখান থেকে মাওলানা পাস করেন জানিয়ে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৯৬ সালে মাত্র ৭০০ টাকা বেতনে ইমামতি শুরু করি এমএম কলেজের পুরনো ছাত্রাবাসের মসজিদে। ২১ বছরের মাথায় গ্রেপ্তার হওয়ার সময় বেতন বেড়ে হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। কয়েকটি বাচ্চাকে আরবি পড়িয়ে কিছু আয় হতো। সঞ্চিত টাকা দিয়ে শহরতলির পাগলাদহে ভৈরব নদের ধারে সস্তায় দুই কাঠা জমি কিনে টিনের ছাপরাঘর তৈরি করি। বাড়িতে গাভি পালতাম, স্ত্রী সেলাইয়ের কাজ করতেন। কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হইনি। স্ত্রী ও তিন মেয়ের ভরণপোষণের টাকা রোজগার করতেই ব্যস্ত সময় কাটাতাম।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাওলানা মোজাফফরকে তার কর্মস্থলের কাছ থেকে আটক করা হলেও পুলিশ সে সময় জানিয়েছিল বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে ধরা হয়েছে। সেই সময় সন্ধ্যার পর চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে লোকজন নিয়ে বসতেন যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তা। আওয়ামী লীগের এই নেতা কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেন, মোজাফফরকে ছাত্রাবাসের গেট থেকেই তুলে নিয়েছিল পুলিশ। এলাকাবাসীর ভাষ্যও একই রকম।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাওলানা মোজাফফর জানান, তার বাড়িতে পানির লাইনের জন্য কিছু অ্যালবো কেনা ছিল। পুলিশ সেগুলো গ্রেনেড বলে চালিয়ে দেয়। বাড়ি তল্লাশি করে পশু কোরবানির জন্য রাখা ছুরি উদ্ধার দেখায়। আর আগ্নেয়াস্ত্র ও তরল পদার্থ পুলিশ বাইরে থেকে সংগ্রহ করে এনেছিল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাওলানা মোজাফফর ও তার প্রতিবেশী কওসার বিশ্বাসের বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় একাত্তর টিভির যশোর প্রতিনিধি এস এম ফরহাদের কথায়। তিনি জানান, তৎকালীন এসপি আনিসুর রহমানের ফোন পেয়ে তিনিসহ গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে উদ্ধার কথিত বিপজ্জনক সরঞ্জামের মধ্যে নতুন অ্যালবো ছিল, যেগুলো পানির পাইপলাইনে ব্যবহার করা হয়।</span></span></span></span></p>