<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর এস এম আল মামুনের আসল রূপ বেরিয়ে আসে। উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক এ সময় থেকে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নির্বাচনের বিশাল খরচের অজুহাতে সীতাকুণ্ডের শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে তিনি পাঁচ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করে ১০ কোটি টাকার বেশি চাঁদা তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অপকর্মের মূল সহযোগী ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী যুবলীগ নেতা সাইদুর রহমান মারুফ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নির্বাচনে জয়ের পর মামুনের প্রশ্রয়ে পিএস মারুফ আরো ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি শুরু করেন। স্থানীয় প্রশাসনকে পুরোপুরি জিম্মি করে ফেলেন মারুফ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সাবরেজিস্টার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে উপজেলার প্রতিটি টেন্ডার, পিআইও দপ্তরের প্রকল্পের কাজ বাগাতে থাকেন। চলে ত্রুটিপূর্ণ নথিপত্রে নামজারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হয়রানিতে ফেলেন নিজ দলের বিরোধীদেরও। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়ায়, মামুনের সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকি আর হামলার শিকার হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সীতাকুণ্ড আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, গত ২৩ জুন সাবেক এমপি মামুনের নির্দেশে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শাহজাহান জসিমসহ প্রায় শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতির নেতৃত্বে আয়োজিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পণ্ড করে। এ সময় অনুষ্ঠানের কেক ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মামুনের সহযোগী সন্ত্রাসীদের নিপীড়নে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন জাহাঙ্গীর, ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল হক, সাবেক কাউন্সিলর ও প্রবীণ নেতা মাইমুন উদ্দিন মামুুনসহ অনেকে এলাকা ছাড়েন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের সর্ব দক্ষিণে সলিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাবেক এমপি এস এম আল মামুনের বাবা মরহুম আবুল কাশেম মাস্টারও ছিলেন এই আসনের সাবেক এমপি। তিনি দুই দফা এমপি নির্বাচিত হন। আবুল কাসেম মাস্টার ১৯৯৬ সালে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে না থেকেও বাবার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে শিপইয়ার্ডে চাঁদাবাজি, দখল, পাহাড় দখলসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন মামুন। এ সময় পত্র-পত্রিকায় তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদও প্রকাশিত হয়। এতে ছেলের কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তিরস্কৃতও হয়েছেন সাবেক এমপি কাসেম। পরে যুবলীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির সভাপতি হন তিনি। এরই মধ্যে ২০১৪ সালে তাঁর বাবা কাসেম মাস্টারকে পেছনে ফেলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাগিয়ে নেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী দিদারুল আলম। পারিবারিক ক্ষমতা হারানোর পর মামুন সর্বমহলে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। দিদারুল আলম এমপি নির্বাচিত হলেও রাজনীতির সঙ্গে সেভাবে সম্পর্ক না থাকায় সীতাকুণ্ডে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান ছিল দুর্বল। অন্যদিকে বাবা দীর্ঘদিন সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকায় দলের নেতাকর্মী ও ক্যাডাররা ছিল উপজেলা চেয়ারম্যান মামুনের নিয়ন্ত্রণে। এতে উপজেলার সব টেন্ডারবাজি হতো মামুনের ইশারায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, সাবেক এমপি দিদারুল আলমের কথায় কখনো সীতাকুণ্ড উপজেলা চলেনি। পেশিশক্তির কারণে তাঁরা সবাই তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান মামুনের নির্দেশে সব কাজ করতেন। কোন টেন্ডার কে পাবে, কোন চেয়ারম্যানকে রাজস্ব থেকে কোন রাস্তার কাজ দেওয়া হবে, সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন মামুন। তাঁর হয়ে আর্থিক লেনদেন করতেন মারুফ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ সময় সরকারি অর্থের ব্যাপক লুটপাটের বিষয়ে এসব কর্মকর্তা বলেন, সৈয়দপুর, বাড়ৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ডসহ প্রতিটি ইউনিয়নে এমন অনেক রাস্তা আছে, যেগুলোর নির্মাণ অথবা সংস্কারের নামে প্রতিবছরই কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতো। এই টাকার একটি কমিশন মারুফের মাধ্যমে চলে যেত মামুনের কাছে। বাকি টাকা থেকে বিভিন্ন দপ্তর, চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় নেতারা কমিশন নিয়ে টাকা ভাগ করতেন। এভাবে দুই মেয়াদে ১০ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে টেন্ডারবাজি, দখলবাজিসহ বিভিন্ন এলাকার বৈধ-অবৈধ কাজ থেকে মোটা অঙ্কের বাণিজ্য করে শত শত কোটি টাকার মালিক হন মামুন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব চাঁদাবাজির টাকায় চট্টগ্রাম শহরে একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট, মার্কেটে দুটি দোকান ও বড় ফিশিং ট্রলার এবং কক্সবাজারে কয়েক শ কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেন বিলাসবহুল তারকা রিসোর্ট।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এলাকাবাসী জানায়, ১০ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় সাবেক এমপি মামুন যেমন শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তেমনি পাটকাঠি থেকে বৃক্ষ হয়েছেন তাঁর পিএস মারুফ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের পর মামুন এমপি নির্বাচিত হলে তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার ছিল  চোখে পড়ার মতো। প্রথমেই তিনি নিপীড়ন শুরু করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়াসহ তাঁর বিরোধীপক্ষের নেতাকর্মীদের ওপর। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করতে চাইলেও মামুন তাঁর অনুসারী যুবলীগ নেতা শাহাজাহান, ক্যাডার বদিউল আলম জসীমদের পাঠিয়ে দলীয় প্রবীণ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে সেই সভা পণ্ড করে দেন। তাঁর ক্যাডারদের হাতে মারধরের শিকার হন আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক চেয়ারম্যান, সোহাগ, কাউন্সিলর মামুনসহ অন্যরা। পরে মামুন বাহিনীর উৎপাতে নিরাপত্তাহীনতায় দেশ ছাড়েন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকের ভূঁইয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিলানীসহ অনেকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নির্বাচনী বিভিন্ন হলফনামায় মামুন নিজের সম্পদের বেশির ভাগ তথ্য গোপন করেছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনী হলফনামায় মামুন স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ২৯ কোটি ৮২ লাখ ২২ হাজার ৩৬৫ টাকা। এর আগে ২০১৯ সালে তাঁর স্থাবর সম্পদ দেখানো হয় ৮৯ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা। এ হিসাবে পাঁচ বছরে তাঁর স্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২৮ গুণের বেশি। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রীর নামেও দেখানো হয়েছে কোটি কোটি টাকা। তাঁর স্ত্রীকে নামে মালিকানায় রাখা হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি কোনো ব্যবসায়ী নন বলে জানা গেছে। </span></span></span></span></p>