<p>যাঁদের গবেষণার মধ্য দিয়ে ‘মেশিন লার্নিং’ বা যন্ত্রকে শেখানোর পথ খুলে গিয়েছিল, সেই দুই বিজ্ঞানী পাচ্ছেন চলতি বছরের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল। গতকাল মঙ্গলবার সুইডেনের স্টকহোমের দ্য রয়াল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলবিজয়ী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন জে হপফিল্ড এবং কানাডার জিওফ্রে ই হিন্টনের নাম ঘোষণা করে।</p> <p><img alt=" যন্ত্রকে শেখার পথ দেখানোর স্বীকৃতি পেলেন দুই পদার্থবিদ" height="94" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/09-10-2024/2 (1).jpg" style="float:left" width="96" />‘কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে মেশিন লার্নিং সম্ভব’—এই মৌলিক আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের জন্য এই দুই বিজ্ঞানীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে দ্য রয়াল একাডেমি অব সায়েন্সেসের স্থায়ী সেক্রেটারি হ্যান্স এলেগ্রেন বলেন, ‘এ বছরের পুরস্কারটি মেশিন লার্নিং বিষয়ক হলেও বিশ্বের গবেষকরা এরই মধ্যে ১৯৮০-এর দশকে কৃত্রিম নেটওয়ার্ক নিয়ে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।’</p> <p>নোবেলবিজয়ী দুজন পদার্থবিদ্যার মৌলিক টুলগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে এমন সব পদ্ধতি তৈরি করছেন, যা আধুনিককালের শক্তিশালী মেশিন লার্নিংয়ের ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। জন হপফিল্ড একটি সংঘবদ্ধ ‘মেমরি’ তৈরি করেছেন, যা ডাটাতে চিত্র বা ইমেজ এবং বিভিন্ন ধরনের নিদর্শনগুলো সঞ্চয় এবং পুনরায় তৈরি করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি জিওফ্রে হিন্টন এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যা ডাটাতে বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্যগুলো স্বাধীনভাবে খুঁজে পেতে পারে এবং চিত্রগুলোর বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে পারে।</p> <p>জন হপফিল্ড এমন একটি নেটওয়ার্ক আবিষ্কার করেছেন, যে পদ্ধতিতে সংরক্ষণ এবং পুনরুৎপাদন সম্ভব। নোডগুলোকে পিক্সেল হিসেবে ধরে হপফিল্ড নেটওয়ার্ক এমন পদার্থবিদ্যা ব্যবহার করে, যা পরমাণুর ঘূর্ণন থেকে নির্দিষ্ট ধরনের উপাদানের বৈশিষ্ট্যগুলোকে চিত্রিত করে এবং যা এমন একটি ভর, যা পদার্থের প্রতিটি পরমাণুকে একেকটি ক্ষুদ্র চুম্বকে পরিণত করে। সামগ্রিকভাবে নেটওয়ার্কটিকে এমন একটি বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, যা পদার্থবিজ্ঞানের স্পিন সিস্টেমের শক্তির মতো কাজ করে। নোডগুলোর মধ্যে সংযোগের মানগুলোকে সামঞ্জস্য করে নেটওয়ার্ককে প্রশিক্ষিত করা হয়, যাতে সংরক্ষিত চিত্রগুলো কম শক্তি পায়। তারপর যখন নেটওয়ার্ককে একটি বিকৃত বা অসম্পূর্ণ চিত্র দেওয়া হয়, তখন সেটি নোডগুলোর মাধ্যমে লুপ করার এবং তাদের মানগুলো আপডেট করার একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করে, যাতে নেটওয়ার্কটি কম শক্তি পায়। এভাবে নেটওয়ার্কটি এমনভাবে সংরক্ষিত চিত্রে অগ্রসর হয়, যা ইনপুটের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।</p> <p>জিওফ্রে হিন্টন হপফিল্ড নেটওয়ার্ক থেকে তাঁর কাজ শুরু করেন এবং একটি নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি করেন, যা একটি ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে এবং বোল্টজম্যান মেশিন নামে পরিচিতি পায়। এটি একটি নির্দিষ্ট ধরনের ডাটার বেশ কয়েকটি অনুরূপ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে আলাদা করতে প্রশিক্ষণ দিতে পারে। জিওফ্রে হিন্টন পরিসংখ্যানগত পদার্থবিদ্যা থেকে টুলস বা সরঞ্জাম ব্যবহার করেছেন। জিওফ্রে হিন্টন তাঁর কাজের মাধ্যমে মেশিন লার্নিংয়ের বর্তমান আকাশচুম্বি বিকাশে সীমাহীন সহায়তা করেছেন।</p> <p>বর্তমানে মানুষ যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে কথা বলে, তখন তাঁরা সাধারণত কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে মেশিন লার্নিংয়ের বিষয়টিকেই মূলত বোঝান। প্রযুক্তিটি তৈরির শুরু থেকেই মস্তিষ্কের গঠন প্রণালি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। একটি কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক, মস্তিষ্কের নিউরনগুলোর অনুকরণে নোড বা সংযোগ স্থলগুলোর সঙ্গে একীভূত হয়ে অনুমাননির্ভর বিভিন্ন মান নির্ধারণ করে। নোডগুলো আবার পারস্পরিক সংযোগের মাধ্যমে একে অপরকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে সিন্যাপসের মতো শক্তিশালী বা দুর্বল হয়। নেটওয়ার্কগুলোকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যে বড় মান ধারণকৃত নোডগুলোর মধ্যকার সংযোগগুলোকে শক্তিশালী করে। এ বছরের বিজয়ীরা ১৯৮০-এর দশক থেকে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার কাজগুলো করেছেন।</p> <p>জন জে হপফিল্ড ১৯৩৩ সালের ১৫ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি, এনজেতে কর্মরত আছেন। জিওফ্রে ই হিন্টন ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।</p> <p> </p>