<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যসেবা খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদত্যাগের দাবি নিয়ে অস্থিরতা শেষ না হতেই বর্তমানে আবার শুরু হয়েছে বঞ্চিতদের প্রাপ্য ফিরে পাওয়া নিয়ে অস্থিরতা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ নিয়ে প্রতিদিনই মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন করছে চিকিৎসক, নার্সদের বিভিন্ন সংগঠন। এসব কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনেকটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) আধিপত্য শেষ না হতেই বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আধিপত্য শুরু হয়েছে। এতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের স্বাস্থ্য খাতে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে বর্তমানে সেটিই দেখার বিষয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাপক এম এ ফয়েজকে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতি করলেও সম্প্রতি তিনি এই পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ফলে স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিষয়ভিত্তিক সংস্কার- চিকিৎসাসেবার গুণগত মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালীকরণ কাজ আবারও স্তিমিত হয়ে পড়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নজীর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক ঘণ্টার জন্য এই পদটি খালি থাকলে সেবা খাত পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ তাঁর অধীনে প্রায় এক লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী আর হাজার হাজার স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ এক মাস হলো প্রতিষ্ঠানটিকে কাউকে পদায়ন করা যায়নি। এর জন্য জবাবদিহি প্রয়োজন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যেখানে একজন পরিচালককে নিয়োগ দেওয়ার পর মন্ত্রণালয় তাঁর রুমে বসা নিশ্চিত করতে পারছে না, সেখানে এই মন্ত্রণালয় দিয়ে সংস্কার কিভাবে আশা করা যায়?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেউ বাধার মুখে পদত্যাগ, কেউ ওএসডি </span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার পতনের দিন থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত এক দিনের জন্যও অফিস করেননি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। ওই সময়ে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিনকে। কিন্তু বাধার মুখে তিনিও অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি। পরে তাঁকেও সরিয়ে দিয়ে অধ্যাপক নাজমুল হোসেনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে গত ২২ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরকে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের (আইপিএইচ) পরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাকে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক পদে বদলি করা হয়। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাঁদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় তাঁরা যোগ দিতে পারেননি। ফলে পরে তাঁদের ওএসডি করা হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই দিন (২২ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে পদত্যাগ করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শফিকুল আলম চৌধুরী এবং উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দেবেশ চন্দ্র তালুকদার। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের চুক্তি বাতিল এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বেচ্ছায় অবসর চাইলে তাঁদেরও ওএসডি করা হয়। আবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ ও অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসানকে ওএসডি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ বেশ কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাস্থ্য খাতের প্রধান বাধা অদক্ষতা, দুর্নীতি ও অপচয় </span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অদক্ষতা, দুর্নীতি ও অপচয় এই তিন কারণে দেশের স্বাস্থ্য খাত পিছিয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক কারণে যোগ্য ব্যক্তি যোগ্য পদ পান না। যাঁরা দায়িত্বে থাকেন তাঁদের বিরুদ্ধেও এন্তার অভিযোগ। যোগ্যতায় ঘাটতির কারণে স্বাস্থ্য খাতে সরকার যে অর্থায়ন করে, তার সঠিক ব্যবহার করতে পারেন না তাঁরা। এরপর রয়েছে দুর্নীতি ও অপচয়। এসব বন্ধ করতে হবে। সময়ের দাবিতে যাঁরা সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আনতে সক্ষম এমন ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পদায়ন করতে হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশের স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যের মান উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। এর জন্য ওয়ান মেম্বার কমিশন করে দায়িত্ব দিতে হবে। যিনি স্বাস্থ্য খাতের ঘাটতি চিহ্নিত করে বর্তমান অবস্থার একটি রিপোর্ট পেশ করবেন। এরপর স্বাস্থ্য খাতের মানোন্নয়ন করে কোথায় কী চাই, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এভাবেই ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এভাবেই দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়ন দৃশ্যমান হতে পারে। তখন জনগণও দৃশ্যমান উন্নতি লক্ষ করবে। এর জন্য মনিটরিং ও সুপারভিশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। </span></span></span></span></p>