<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী পটিয়ার সাধারণ মানুষকে মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করতেন। তাঁর করা ভুয়া মামলায় পুরুষশূন্য হয়ে যায় এলাকা। এমনকি মানুষ মারা গেলে লাশ দাফনের জন্যও গ্রামে পুরুষ খুঁজে পাওয়া যায়নি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জানা গেছে, পটিয়া উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের করল গ্রামের সাধারণ মানুষের  বিরুদ্ধে সাতটি মামলা দেন সামশুল হক চৌধুরী। তিন শতাধিক গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ২০১২ সালে মামলাটি করা হয়। পটিয়া থানার তৎকালীন ওসি এম এ সবুর ও তৎকালীন এসআই কামাল উদ্দিনকে (ওসি কামাল) দিয়ে মামলাটি করান। সামশুল হকের নির্দেশে ভুয়া মামলা করার পর পুরো এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছিল। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রাজনৈতিক বিরোধের কারণে পটিয়া থানার তৎকালীন এসআই কামালের (বর্তমানে ওসি) নেতৃত্বে পুলিশ ভাটিখাইন গ্রামের বক্কর, আবুল বশর, খতিজা বেগম, মফজল আহমদসহ বেশ কিছু মানুষের ঘরে ঢুকে আসামি ধরার নামে তাণ্ডব চালায়। এ সময় পুলিশ কাউকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ঘরের চেয়ার, টেবিল, টিভি, ফ্রিজ, খাট, কাপড়চোপড়, ক্ষেতের আলু-মরিচসহ সব কিছু তছনছ করে দেয়। পরে সামশুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ নুরুল ইসলামের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম বাদী হয়ে ৩০০ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">করল গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সামশুল হক চৌধুরীর নির্দেশে এলাকায় অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল তার পেটোয়া বাহিনী নুরুল ইসলাম গং। সে সময় আতঙ্কে আমার স্বামী স্ট্রোক করে মারা যান। তাঁকে দাফন ও জানাজা পড়ার জন্য এলাকায় লোক পাওয়া যায়নি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিনি সামশুল হক চৌধুরী, পুলিশসহ সব দোষীর বিচার দাবি করেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সামশুল হকের ভুয়া মামলা দায়েরের পর ভাটিখাইন ইউনিয়নের করল গ্রামের তিন শতাধিক ভুক্তভোগী নারী-পুরুষ গণস্বাক্ষর দিয়ে তৎকালীন পুলিশ সুপার, ডিআইজি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে সামশুল হক চৌধুরীসহ তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সরেজমিনে ভাটিখাইন ইউনিয়নে গেলে স্থানীয় জয়নাব বেগম, মনোয়ারা বেগমের মতো আরো কয়েকজন নারী জানান, সামশুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ নুরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, তাঁদের ছেলে জহিরুল ইসলামসহ অন্যরা মিলে এলাকায় বর্বরোচিত হামলা চালান।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভুক্তভোগী মনোয়ারা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমার ছেলে-মেয়ে দুজন প্রতিবন্ধী। হামলার সময় আমাকে ও আমার দুই প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েকেও বেধড়ক পিটিয়ে গুরতর আহত করেছিল সামশুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ নুরুল ইসলামের পরিবারের লোকজন। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আমরা এই ঘটনার কোনো ন্যায়বিচার পাইনি। এখন আমরা সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাই।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একই এলাকার আকতার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সামশুল হক চৌধুরীর নির্দেশে আমাদের ওপর হামলা, ভাঙচুর, নির্যাতন চালিয়েছিল। তখন এলাকায় কোনো পুরুষ ছিল না। সবাই ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সে ঘটনায় আমার বৃদ্ধ বাবাকেও আসামি করা হয়েছে। সেই কষ্টে আমার বাবার মৃত্যু হয়। কিন্তু আদালতে যখন আমরা যাই তখন সামশুল হক চৌধুরীর আইনজীবীরা বিচারককে বলেন, আমার বাবা মারা যাননি। তাঁকে যেন আদালতে হাজির করা হয়। তখন আমি বাবার মৃত্যু সনদও দেখিয়েছি। কিন্তু সামশু অমানুষিক নির্যাতন, হামলা, মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিল। আমরা এখন সেই সামশুল হক চৌধুরী ও তার গুণ্ডা বাহিনীর কঠিন বিচার চাই।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফজল আহমদ নামের এক বয়োবৃদ্ধ কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমাকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয় সামশুল হক চৌধুরীর নির্দেশে। সে সময় আমরা এলাকায় আসতে পারিনি তার সন্ত্রাসীদের ভয়ে। পালিয়ে থাকতে হয়েছে পরিবার-পরিজনদের ছেড়ে। এখনো সেই মামলায় নিয়মিত আদালতে সশরীরে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি। যার হুকুমে আমাদের এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আমাদের জীবন বিপন্ন করেছে, আমরা তাদের বিচার চাই, যেন আমাদের এলাকার মতো পটিয়ার আর কোনো এলাকায় এ ধরনের নারকীয় হামলা চালানো না হয়।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তৎকালীন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১২ বছর আগে আমার এলাকায় পুলিশ নিরীহ ব্যক্তিদের গণহারে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার করছিল। এ কারণে সে সময় পুরো এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছিল।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভুক্তভোগী ভাটিখাইন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য পল্লী চিকিৎসক আব্দুল জলিল কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সামশুল হক চৌধুরীর নির্দেশে ভাটিখাইন এলাকাটি বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় তার লাঠিয়াল বাহিনী নুরুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এবং তৎকালীন পটিয়া থানার ওসি, এসআই কামালকে দিয়ে আমাদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়েছিল। বেশ কয়েকটি মামলা পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে সামশুল হক চৌধুরীর ইন্ধনে পুলিশকে ব্যবহার করে এলাকার নিরীহ লোকজনকে আসামি করা হয়। জেল খেটেছি। এখনো সেই মিথ্যা মামলা বয়ে বেড়াচ্ছি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p> </p>