<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ড. আব্দুর রাজ্জাক কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে তার নিজ উপজেলায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) একটি আঞ্চলিক কার্যালয় তৈরিতে সরকারি টাকায় প্রকল্প বানিয়েছিলেন। শুধু আব্দুর রাজ্জাক নন, ব্রির তৎকালীন মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী এম এ মান্নানের উপজেলায়ও একই প্রকল্পের অধীনে আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাবেক এই কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশে শাহজাহান কবীর স্থান নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজনৈতিক বিবেচনা ও ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য এই প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে যেখানে প্রয়োজন নেই এমন স্থানে ধান গবেষণার জন্য কার্যালয় স্থাপন সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। এরই মধ্যে মন্ত্রী ও মহাপরিচালকের এলাকা থেকে কার্যালয় অন্যত্র স্থানান্তরের বিষয়ে সভা করেছে ব্রি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০২৩ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নতুন ৬টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থানভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষণাগার উন্নয়ন প্রকল্প</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নেওয়া হয়। ৩৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি ২০২৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রকল্পের জন্য শুরুতে ১৭টি স্থানে আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থসংস্থান বিবেচনায় ১১টি বাদ দিয়ে ছয়টি স্থানে এই কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য স্থান নির্বাচন করা হয় কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধান গবেষণার জন্য গুরুত্ব বিবেচনায় ছয়টির মধ্যে একটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের স্থান জামালপুর নির্বাচন করা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশে তার নিজ উপজেলায় টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রকল্পটি তৈরির জন্য গবেষণা করেছেন ব্রির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রথমে একটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের জন্য স্থান জামালপুরে নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে টাঙ্গাইলের মধুপুরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কাউন্সিলের (বিএডিসি) পাশে স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল। মধুপুরেই আঞ্চলিক কার্যালয় উপযোগী ছিল। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশে এটি সাবেক কৃষিমন্ত্রীর নিজ উপজেলায় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধনবাড়ীতে সাবেক কৃষিমন্ত্রীর এক আত্মীয়র বাড়ি ভাড়া নিয়ে কার্যালয় অস্থায়ীভাবে চলছে। আব্দুর রাজ্জাক ছাত্র হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ড শেষে এখন জেলহাজতে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই সময়ে ব্রির মহাপরিচালক ছিলেন ড. শাহজাহান কবীর। ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন এই সংস্থাটির মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্ব পান। নিজে মহাপরিচালক হওয়ায় এই প্রকল্পের জন্য একটি আঞ্চলিক কার্যালয় তার নিজ জেলা নেত্রকোনায় নির্ধারণ করেন। তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সদস্যের বাড়িও ছিল নেত্রকোনায়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে ১০ আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন শাহজাহান কবীর। অবৈধভাবে শ্রমিক নিয়োগ, বিজ্ঞানীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও চাকরিচ্যুতি, প্রকল্পের অর্থের অপচয় এবং আপ্যায়নের নামে করোনার ছুটির সময় লাখ লাখ টাকা খরচ করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মের তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে ১৩ আগস্ট বিক্ষোভ সমাবেশ করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকরা। এতে বক্তব্য দিয়েছিলেন সংস্থাটির পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। বর্তমানে তিনি মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানভিত্তিক ধানের জাত নিয়ে গবেষণা প্রকল্পের জন্য যে স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল তা যৌক্তিক ছিল না। আমরা স্থানগুলোতে পরিবর্তন আনতে চাই।  মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব বিষয়ে শাহজাহান কবীরের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্রির এই প্রকল্পটিতে যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদন মেলে এ জন্য তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকেও খুশি রাখা হয়েছিল। তার নিজ উপজেলায় এই কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রথমে হাওর এলাকা বিবেচনায় স্থান সিলেটে নির্বাচন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে প্রয়োজন বিবেচনায় এটি সুনামগঞ্জ সদরে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সুনামগঞ্জ সদর হলেই উপযুক্ত হতো। কিন্তু স্থান আবারও পরিবর্তন করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মৌখিক নির্দেশে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর নিজ উপজেলা শান্তিগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে আমার কিছুই করণীয় ছিল না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রকল্পটির বর্তমান পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রকল্পটি আমি তৈরি করিনি। প্রকল্প তৈরি হওয়ার পর আমি পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। এ কারণে স্থান নির্বাচনের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ধনবাড়ী ও নেত্রকোনার আঞ্চলিক কার্যালয় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। ব্রির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাবেক কৃষিমন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় প্রকল্প পরিচালনার জন্য পরিচালক হিসেবে মোফাজ্জল হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিন মনে করেন, এভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প গ্রহণ করা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি লাভবান হয়ে থাকেন; দেশের মানুষের ও কৃষির উন্নয়ন হয় না।</span></span></span></span></span></p>