<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০০৮ সালের নির্বাচনী হলফনামা অনুসারে শাজাহান খান ছিলেন ঋণগ্রস্ত। ৪২ লাখ টাকার বেশি ঋণ ছিল তাঁর। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দ্রুত দিন বদলে যায় তাঁর। তিনি নিজে পরিবহন শ্রমিক না হয়েও শ্রমিক সংগঠনের নেতা সেজে এই খাতে অলিখিত মাফিয়া হয়ে ওঠেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত ১৬ বছরে শাজাহান খান কী পরিমাণ চাঁদাবাজি করেছেন এবং সেই অর্থ কোথায় কিভাবে ব্যয় হয়েছে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এসব তথ্য কালের কণ্ঠের কাছে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট শ্রমিক নেতা ও ব্যক্তি এবং পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি নিবন্ধিত যানবাহন থেকে ৫০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করত শ্রমিক ফেডারেশন। প্রতিবছর দিনের ও যানবাহনের সংখ্যায় কমবেশি থাকায় প্রতি দুই বছর করে হিসাব করা হয়েছে। সেখানে দুই বছরের মোট দিনের সঙ্গে নিবন্ধিত যানবাহন বিবেচনায় নিয়ে চাঁদার পরিমাণ বের করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে বাণিজ্যিক যানবাহনের সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৯১ হাজার ২৪৭। ২০০৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব গাড়ি থেকে মোট এক হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। অন্যদিকে ২০১১ ও ২০১২ সালের পুরো সময়ে মোট চার লাখ ৮৪ হাজার ৭০৬টি গাড়ি থেকে এক হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা এবং ২০১৩ ও ২০১৪ সালের পুরো সময়ে পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৮৬৭টি গাড়ি থেকে দুই হাজার ৮০ কোটি টাকা আদায় করা হয়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৭৩০ দিনে ছয় লাখ ৭০ হাজার ৬১টি গাড়ি থেকে ৫০ টাকা করে দুই হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৭৩০ দিনে সাত লাখ ৯৩ হাজার ৩১০টি গাড়ি থেকে দুই হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৩০ দিনে আট লাখ ৯৮ হাজার ৬২৭টি গাড়ি থেকে চাঁদা তোলা হয় তিন হাজার ২৮০ কোটি টাকা। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট চাঁদা আদায় করা হয় ছয় হাজার ৯৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে নিবন্ধিত যানবাহনের মাধ্যমে প্রায় ১৯ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ ছাড়া অনিবন্ধিত অটোরিকশা, অটোটেম্পো রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ, ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক ছয় লাখ, নছিমন-করিমন-আলমসাধু ও ভটভটি তিন লাখ। ফলে দেশে অনিবন্ধিত যান রয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। এসব যানবাহন থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৪৯টি ইউনিয়ন বেআইনিভাবে নিয়মিত হারে চাঁদা আদায় করে। এসব চাঁদার এক-পঞ্চমাংশ কল্যাণ তহবিলের নামে ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা দিতে হয়। গত ১৫ বছরের বেশি সময়ে এই খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদা হিসেবে শ্রমিক ফেডারেশনে জমা হয়েছে, কিন্তু এসব টাকার সর্বজনীন সুফল শ্রমিকরা পাননি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোকলেছুর রহমান ছিলেন শাজাহান খানের ঘনিষ্ঠ সহচর। শাজাহান খানের প্রভাব খাটিয়ে তাঁরা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন বেআইনি কাজ করাতেন। এর মধ্যে অন্যতম মিশুক যানের প্রতিস্থাপন। ২০১২ সালে তৎকালীন সরকারের সময় যেসব মিশুকের আয়ুষ্কাল ৯ বছর উত্তীর্ণ হয়, সেখান থেকে প্রকৃত মালিকদের মধ্যে দুই হাজার ৬৯৬টি মিশুক প্রতিস্থাপন করা হবে মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু প্রকৃত মালিকদের বাদ দিয়ে অন্যদের এই সুবিধা দিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন দুজন। দুজনই অঢেল সম্পত্তির মালিক।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এর মধ্যে ওসমান আলীর রয়েছে রাজধানীতে দুটি ফ্ল্যাট, গাজীপুরে স্ত্রীর নামে মার্কেট, পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে ২০টির বেশি বাস, সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন রয়েছে। এই সিএনজি স্টেশনটি আবার সলিড ব্যাটারির বাংলাদেশের একমাত্র পরিবেশক। শেরপুরে রয়েছে ২০০ বিঘার ওপর বাগানবাড়ি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ হানিফ খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, শাজাহান খান শ্রমিক কল্যাণের নামে নিজের কল্যাণ করেছেন। নিজের সম্পদের পাহাড় গড়তেই ব্যস্ত ছিলেন। আর আশপাশের লোকজনের অঢেল সম্পত্তি তৈরিতে সহায়তা করেছেন। মন্ত্রী হয়েও শ্রমিকদের কল্যাণে তিনি কোনো ভূমিকা রাখেননি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জানা গেছে, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী শাজাহান খানের নিজ নামে স্থাবর সম্পদ ছিল মাত্র তিনটি স্থানে। গ্রামের বাড়িতে যৌথ মালিকানায় স্থাবর সম্পত্তি ছিল। ২০২৪ সালে শাজাহান খানের নিজ নামে স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে কমপক্ষে ১৫টি স্থানে। এ ছাড়া যৌথ মালিকানায় রয়েছে ছয়টি স্থানে। স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পদ রয়েছে ১৩টি স্থানে। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর তাঁর সম্পদ শতগুণ বেড়েছে। শাজাহান খান মূলত সার্বিক ইন্টারন্যাশনাল ব্যাবসায়িক গ্রুপের মাধ্যমে বেশির ভাগ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সার্বিক পরিবহনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে দুই শতাধিক গাড়ি। এর বাইরে নির্মাণ ও আবাসন, ফিলিং স্টেশন, কৃষি ও খাদ্য খাত, হোটেল, হাসপাতাল, প্রেস, ইটভাটা, জ্বালানি তেলের ব্যবসা এবং শিপিং ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন তিনি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পরিবহন খাতে অন্যায়ভাবে চাঁদাবাজিকে বৈধতা দেন শাজাহান খান। বছরের পর বছর শ্রমিক ফেডারেশনের নির্বাহী সভাপতির পদে থেকে স্বৈরাচার সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর সর্দার হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৩ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসার বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দিয়ে তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় কিশোর আব্দুল মোতালেব হত্যা মামলায় শাজাহান খান জেলহাজতে থাকায় শাজাহান খানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক তথ্য বলছে, গত ১৫ বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তার বেশির ভাগই তাঁরা বিদেশে পাচার করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ৭০ জনের বেশি মন্ত্রী-এমপি, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত। এই তালিকায় শ্রমিক নেতা হিসেবে শীর্ষে রয়েছেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা তথ্য বলছে, শেখ হাসিনা সরকারের দেড় দশকের শাসনামলের মধ্যে ১৪ বছরে শুধু সড়ক ও মহাসড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজে ২৯ হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, সড়ক ও পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির ব্যাপকতা ও গভীরতা অনেক বেশি। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে দলীয় রাজনীতির কাছে এই খাতটি জিম্মি। চাঁদাবাজির বাণিজ্যের মাধ্যমে গুটিকয়েক মানুষ সম্পদশালী হচ্ছে, কিন্তু প্রকৃত মূল্য দিতে হচ্ছে জনগণকে। এটি নির্মূল করতে হলে এর পেছনের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রভাবশালী শক্তিগুলোকে নির্মূল করতে হবে। </span></span></span></span></span></p>