<p>‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ বা ডিজিটাল গ্রেপ্তারি নামের এক নতুন জালিয়াতি সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে একের পর এক এই জাতীয় অপরাধমূলক ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসছে। ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতারকরা সরকারি কর্মকর্তা সেজে যোগাযোগ করেন।</p> <p>পুলিশ বা আয়কর কর্মকর্তা সেজে ভিডিও কলের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল প্রতারকরা। তারপর ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই নতুন পদ্ধতিতে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের ‘ডিজিটাল গ্রেপ্তার’ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল।</p> <p>পুলিশ বা আয়কর কর্মকর্তার ভুয়া পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করা প্রতারকরা ওই ব্যক্তিদের (ভুক্তভুগীদের) কোনো একটা নির্দিষ্ট জায়গায় (মূলত সেই ব্যক্তির বাড়িতেই) থাকার নির্দেশ দিয়েছিল। একই সঙ্গে বাইরের কারো সঙ্গে যোগাযোগ না করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।</p> <p>প্রধানমন্ত্রী মোদি তার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ভারতীয় আইনে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ বলে কিছুই নেই। শুধু তা-ই নয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কখনোই ফোন বা ভিডিও কলের মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে না বা তাদের ব্যক্তিগত বিবরণও চাইবে না।</p> <p>দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ‘প্রতারকরা পুলিশ, সিবিআই কর্মকর্তা, নারকোটিকস বিভাগের (নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো বা মাদকসংক্রান্ত অপরাধ দমন শাখা) কর্মকর্তা এবং কখনো কখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তার ছদ্মবেশ ধারণ করে যোগাযোগ করে।’</p> <p>পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে কোনো স্টুডিওতেই পুলিশ স্টেশন, আয়কর অফিস বা তদন্ত সংস্থার দপ্তরের মতো ‘সেট আপ’ তৈরি করে প্রতারকরা। তারপর ফোনে ভিডিও কল করে নিশানায় থাকা ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ফোনের পর্দায় একঝলক দেখে ওই স্টুডিওর ‘সেটআপ’ কোনো সরকারি দপ্তরের মতোই মনে হতে পারে।</p> <p>পুরো বিষয়টাকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে প্রতারকরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের (যে দপ্তরের কর্মকর্তা সেজে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে) কর্মকর্তাদের মতোই পোশাক পরেন। জাল পরিচয়পত্র বানিয়ে সেটা টার্গেট করা ব্যক্তির সামনে ফোনের পর্দায় পেশও করেন।</p> <p>প্রকাশ্যে আসা অভিযোগগুলো থেকে জানা যায়, প্রতারকরা মূলত কয়েকটা বিষয় নিয়েই ভুক্তভোগীদের নিশানা করেন। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা প্রতারকরা নিশানায় থাকা ব্যক্তিদের জানান, তারা আইনবহির্ভূত কোনো পণ্য পার্সেল হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাদের নামে কোনো বেআইনি পণ্য পার্সেলে পাঠানো হয়েছে। কোনো সময় আবার বলা হয়, ভুক্তভোগীদের মোবাইল ফোন কোনো আইনবহির্ভূত কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার ‘ডিপ ফেক ভিডিও’ ব্যবহার করা হয়। সেই ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ‘ফলস অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট’ বা ভুয়া গ্রেপ্তারি পরওয়ানা দেখানোও হয় ভুক্তভোগীদের।</p> <p>সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ নামের এই প্রতারণার অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। গত আগস্ট মাসে ব্যাঙ্গালুরু পুলিশ এমনই এক ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই ব্যক্তিরা এক ভুক্তভোগীকে প্রতারণা করে তার কাছ থেকে ভারতীয় মূল্যের দুই কোটি রুপি আদায় করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।</p> <p>যে ব্যক্তি পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতারকরা তাকে বলেছিলেন, তার ঠিকানায় পাঠানো একটা পার্সেল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তিকে ফোন করে দাবি করা হয়েছিল, পার্সেলে ‘এমডিএমএ’ নামের মাদক রয়েছে এবং পুলিশ তা বাজেয়াপ্ত করেছে। এর পরই হোয়াটসঅ্যাপ কলের মাধ্যমে তাকে প্রতারকরা হুমকি দেয়। ওই ব্যক্তিকে বলা হয়, টাকা না দিলে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তার বিরুদ্ধে।</p> <p>এ ছাড়া চলতি মাসেই মালা পার্বতী নামে দক্ষিণ ভারতের একজন অভিনেত্রী এই জালিয়াতির শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্রধানত মালয়ালাম ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুম্বাই পুলিশের কর্মকর্তার ভুয়া পরিচয় দিয়ে ওই অভিনেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। প্রতারকরা তাকে নিজের ভুয়া পরিচয়পত্রও দেখিয়েছিলেন।</p> <p>অভিনেত্রী মালা পার্বতীকে বলা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে তাইওয়ানে মাদক পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ‘ভার্চুয়াল গ্রেপ্তার’ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। অভিনেত্রী দাবি করেছেন, কোনো রকম আর্থিক লেনদেনের আগেই তিনি বুঝতে পারেন, পুরো বিষয়টাই আসলে প্রতারণার একটা অংশ।</p> <p>এই জাতীয় ঘটনা থেকে সাবধান করতেই সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ সম্পর্কে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সতর্ক করেছেন দেশবাসীকে। জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি সুরক্ষিত থাকার জন্য সাধারণ মানুষকে তিনটি পদক্ষেপ অনুসরণ করার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে কোনো পরিস্থিতিতেই যাতে কেউ আতঙ্কিত না হয়ে পড়েন, সে কথাও বলেছেন তিনি।</p> <p>নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘প্রথমত, শান্ত থাকুন ও আতঙ্কিত হবেন না। সম্ভব হলে রেকর্ড করুন বা স্ক্রিন (মোবাইল ফোনের স্ক্রিন) রেকর্ডিং করুন। দ্বিতীয়ত, মনে রাখবেন, কোনো সরকারি সংস্থা অনলাইনে আপনাকে হুমকি দেবে না। তৃতীয়ত, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। ন্যাশনাল সাইবার হেল্পলাইনে ফোন করে এবং এই অপরাধ সম্পর্কে পুলিশকেও জানিয়ে দিন।’</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>