<p>ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর বাসিন্দা অতুল কুমার (১৮ তিন্তিনি গত জুন মাসে জানতে পারেন, ভারতের একটি বিখ্যাত প্রযুক্তি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য তিনি কঠিন পরীক্ষা পাস করেছেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই তিনি খুবই আনন্দিত হন। কিন্তু কলেজটিতে ভর্তি নিশ্চিত করতে সাড়ে ১৭ হাজার রুপি ফি অনলাইনে জমা দিতে হবে, যা তার পরিবারের জন্য একটি বড় অঙ্ক ছিল। অতুলের বাবা সে জন্য ধার করেন। কিন্তু অতুল তা-ও ফি জমা দিতে পারেন না। কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তিনি কয়েক সেকেন্ডের জন্য ফি জমা দেওয়ার সময়সীমা মিস করে ফেলেন।</p> <p>এর পরও অতুলের পরিবার হাল ছাড়েনি। তারা অতুলকে ওই কলেজে ভর্তি করতে পিটিশন ও মামলা করে। এই সপ্তাহে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সেই মামলায় হস্তক্ষেপ করেন এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি), ধানবাদকে অতুলের ভর্তি পুনর্বহালের নির্দেশ দেন।</p> <p>একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট ভারতের সংবিধানে প্রদত্ত অসাধারণ ক্ষমতা ব্যবহার করে বলেছেন, ‘আমরা এমন একজন মেধাবী তরুণকে হারাতে পারি না।’</p> <p>আইআইটির কলেজগুলো ভারতের সেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানটির ২৩টি কলেজে প্রতিবছর ১০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রায় ১৮ হাজার আসনের বিপরীতে আবেদন করে। শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তাদের মা-বাবা বিশ্বাস করেন, আইআইটিতে ভর্তি হওয়া জীবনের সফলতার টিকিট।</p> <p>কিন্তু এত প্রতিযোগীর ভিড়ে পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা এবং নানা বাধা পেরিয়ে আসার জন্য অতুলের গল্প ভারতে আলোচিত হয়েছে। অতুল দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য, যা ভারতের বর্ণব্যবস্থার নিচে ও সবচেয়ে অবহেলিত। তার বাবা দিনমজুর রাজেন্দ্র কুমার প্রতিদিন ৪৫০ রুপি উপার্জন করেন এবং তার মা বাড়িতে চৌকি বুনেন।</p> <p>রাজেন্দ্র কুমার বলছেন, তার সন্তানদের শিক্ষার চেয়ে তার কাছে আর কিছুই গুরুত্বপূর্ণ না। তিনি একবার তার বড় ছেলের পড়াশোনার জন্য নিজের ঘরও বিক্রি করেছিলেন। অতুলের দুই ভাই ভারতের নামকরা কলেজে প্রকৌশল পড়ছেন। আর তৃতীয়জন মুজাফফরনগরের এক কলেজে স্নাতক করছেন।</p> <p>অতুলও জানতেন, তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তিনি প্রতিদিন তার ঘরের একটি অন্ধকার কোণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন। বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যাটি আরো তার কষ্টকে আরো বাড়িয়ে তুলেছিল। তাদের অঞ্চলে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হতো।</p> <p>অতুল কাছের একটি শহরে অবস্থিত একটি বিনা মূল্যের কোচিং সেন্টারে যোগ দিয়েছিলেন, যা সমাজের অবহেলিত শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালিত হয়। আইআইটিতে প্রবেশের পরীক্ষায় দুইবার অংশ নেওয়া যায়। এই বছর ছিল তার শেষ সুযোগ। যখন অতুল পরীক্ষায় পাস করেন, তার বাবা এক স্থানীয় মহাজনের কাছে সাহায্যের জন্য যান। কিন্তু ওই ব্যক্তি ফি জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা আগে অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানান।</p> <p>এরপর তার বাবা বন্ধুদের কাছে যান। তারা তাৎক্ষণিকভাবে ১৪ হাজার রুপি দিয়ে সাহায্য করেন এবং রাজেন্দ্র কুমার তার সঞ্চয় থেকে বাকি সাড়ে তিন হাজার রুপি যোগ করেন। তিনি দ্রুত সেই অর্থ তার বড় ছেলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেন। এরপর অতুল অনলাইনে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন। তখন হাতে সময় ছিল মাত্র ১৮০ সেকেন্ড। কিন্তু পোর্টাল হঠাৎ থমকে যায়। অতুল সময়সীমা মিস করে ফেলেন।</p> <p>রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ‘আমরা কয়েক মিনিটের কাজ তিন মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছিলাম।’</p> <p>এ ধাক্কায় পরিবারটি এক দিন না খেয়ে থাকে। অতুলের কোচিং সেন্টার ধানবাদে আইআইটির সঙ্গে যোগাযোগ করে। পিটিশন অনুসারে, তারা কোনো সাহায্য করেনি। এরপর পরিবারটি কলেজসংক্রান্ত বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইল পাঠায় এবং অন্য একটি আদালতে আবেদন করে। কিন্তু কোনো কিছুই কাজে আসে না।</p> <p>এ পর্যায়ে শেষ আশ্রয় ছিল সুপ্রিম কোর্ট। ২০২১ সালে আদালত একজন দলিত শিক্ষার্থীকে আইআইটি, বোম্বেতে ভর্তি হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। তিনি আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সময়মতো ফি জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। অতুল ও তার বাবা সেই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা অতুলদের মামলাটি পরিচালনার জন্য একজন আইনজীবীর সন্ধান দেয়।</p> <p>সুপ্রিম কোর্টে আইআইটি, ধানবাদ যুক্তি দেয়, অতুল বিকেল ৩টায় ফি জমা দিতে পোর্টালে লগ ইন করেছিলেন, যা প্রমাণ করে যে এটি শেষ মুহূর্তের প্রচেষ্টা ছিল না। তারা এটাও উল্লেখ করে, অতুলকে নির্ধারিত সময়সীমার আগেই একাধিকবার টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল।</p> <p>কিন্তু আদালত আইআইটি, ধানবাদকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন তারা তার ভর্তি বাতিলের বিরুদ্ধে এত উৎসাহী। আদালত বলেন, আবেদনের অর্থ পরিশোধ করার ক্ষমতা থাকলে তাকে ভর্তি হতে বাধা দেওয়ার কোনো কারণ নেই। পাশাপাশি অতুলের জন্য বর্তমান ব্যাচে একটি অতিরিক্ত আসন তৈরি করতে আদালত নির্দেশ দেন।</p> <p>এ নির্দেশ দেওয়ার সময় ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় অতুলকে পড়াশোনায় শুভ কামনা জানান। তিনি বলেন, ‘শুভেচ্ছা, ভালো কোরো!’</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>