<p>হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর অবস্থান ধ্বংসের নামে লেবাননের রাজধানী বৈরুতসহ দেশটির বিভিন্ন অংশে গতকাল মঙ্গলবারও ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের তীব্র আক্রমণের মুখে দক্ষিণ লেবাননের আতঙ্কিত লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। গাজায় হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের হামলা ক্রমশ বাড়ছেই। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ধরনের যুদ্ধ বাধার আশঙ্কাও দিন কে দিন বেড়েই চলেছে।</p> <p>এদিকে লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর এক কমান্ডার নিহত হয়েছেন। বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলিতে মঙ্গলবার এ হামলা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশটির দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তা। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিহত ওই কমান্ডারের নাম ইব্রাহিম কুবাইসি। তারা আরো জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন কুবাইসি। ওদিকে, লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৈরুতে ইসরায়েলের হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে। লেবাননের রাজধানীতে হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।</p> <p>লেবাননে ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী হামলায় উদ্বিগ্ন বিশ্বনেতারা ও জাতিসংঘ আঞ্চলিক সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে সব পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের আহবান জানিয়েছে। হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে লড়াই আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।লেবাননে গত সোমবার থেকে ব্যাপক হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় দুই হাজার মানুষ। ১৯৯০ সালে গৃহযুদ্ধ অবসানের পর লেবাননে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন।</p> <p>ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা লেবাননে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর বিভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘ গতকাল মঙ্গলবার বলেছে, লেবাননে চলমান ইসরায়েলি হামলায় সোমবার থেকে কয়েক হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র ম্যাথিউ সল্টমার্শ বলেন, ইসরায়েলি বিমান হামলার কারণে  লেবাননে হাজারো মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে এবং এই সংখ্যা বাড়ছে।</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ওপর হামলা গ্রহণযোগ্য নয়। লেবাননে ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী হামলা নিয়ে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, গ্রিস, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, চীন, ইরান, জর্ডান, মিসর, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জি৭ ভুক্ত দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত উত্তেজনা প্রশমনের আহবান জানিয়েছে।</p> <p>ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সংঘাত বৃদ্ধি মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করার ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে সাবধান করেছে রাশিয়া। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে লেবাননে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে  ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেন, ‘এটি এমন ঘটনা, যা এই সংঘাতের সম্ভাব্য বিস্তৃতি বিবেচনায় অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটি ওই অঞ্চলকে পুরোপুরি অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।</p> <p>অবশ্যই এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।’ গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ ইয়ারাপেত্রিতিস বলেছেন, লেবাননের সংঘাত বৃদ্ধি একটি ‘মাইনফিল্ড’, যেটি বিশ্বসম্প্রদায় হয়তো সামাল দিতে পারবে না। ফ্রান্স অবিলম্বে সংঘাত বন্ধে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর প্রতি আহবান জানিয়েছে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক করার আহবান জানিয়েছে।</p> <p>লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতে ইরানকে জড়াতে ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ শুরু করতে ইসরায়েল উসকানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।  তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার কারণ হতে চাই না আমরা। আমরা  যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। কিন্তু ইসরায়েল সর্বাত্মক সংঘাত তৈরি করতে চায়।’ যুদ্ধের কিনারা থেকে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল ফিরে আসতে পারে বলে এখনো আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্র।</p> <p>হোয়াইট হাউসে বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ বিন জায়েদ নাহিয়ান। আমিরাতের প্রেসিডেন্টকে বাইডেন বলেছেন, ‘আমার দল অবিরামভাবে অন্যপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। আমরা এমনভাবে উত্তেজনা নিরসনের জন্য কাজ করছি, যাতে লোকজন নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারে।’ এদিকে লেবাননে ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় পেন্টাগন বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে আরো মার্কিন সেনা পাঠাচ্ছে তারা।  তবে কতজন সেনা সেখানে যাচ্ছেন বা তাঁদের কাজের ধরন কী হবে তা নিয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু জানায়নি তারা। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০ হাজার সেনা রয়েছে। </p> <p>সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা, বিবিসি</p>