<p>ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠকে নিরাপত্তাসংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উঠে এসেছে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ড্রোন চুক্তির প্রসঙ্গও। উঠে আসে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সম্পর্কিত বাণিজ্যিক সহযোগিতাসংক্রান্ত বিষয়গুলোও। এ ছাড়াও কলকাতায় ‘সেমিকন্ডাক্টর কারখানা’ তৈরির সম্ভাবনাময় দিক নিয়েও আলোচনা হয়েছে তাদের।</p> <p>মোদির সঙ্গে বাইডেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। চতুর্দেশীয় অক্ষ বা ‘কোয়াড’ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন মোদি। তার মাঝেই দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা রবিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।</p> <p>প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মার্কিন সংস্থা জেনারেল অ্যাটোমিকসের কাছ থেকে ৩১টি ‘এমকিউ-৯বি’ ড্রোন কিনছে ভারত। এর মধ্যে ১৬টি রয়েছে ‘স্কাই গার্ডিয়ান’ ও ১৫টি ‘সি গার্ডিয়ান’। এই ড্রোনগুলো আসলে পাইলটহীন যুদ্ধবিমান, যা ভারতের সশস্ত্রবাহিনী ব্যবহার করবে। ক্যালিফোর্নিয়ার ওই সংস্থার সঙ্গে ভারতের চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন বাইডেন। </p> <p>সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক যে পথে এগিয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের এই সামরিক ড্রোন চুক্তি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। পূর্ব লাদাখ ও অরুণাচলের সীমান্তে চীনা সেনাবাহিনীর সেনা ও সমরসজ্জা বিগত দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। শুধু তা-ই নয়, পাকিস্তানকেও চীন সামরিক সাহায্য করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, চীন থেকে কাই হং-৪ ও উইং লুং-২ ড্রোন সরবরাহ করা হচ্ছে পাকিস্তানকে। ইতিমধ্যে সাতটি কাই হং-৪ ড্রোন রয়েছে পাকিস্তানের হাতে। সম্প্রতি বেজিংয়ের কাছ থেকে আরো ১৬টি কাই হং-৪ চেয়েছে ইসলামবাদ। এই পরিস্থিতিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন চুক্তি দিল্লির জন্য আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p>আনন্দবাজারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ৪০ হাজার ফুটের বেশি উঁচু জায়গা থেকে নজরদারি চালাতে পারে এই পাইলটহীন ড্রোন। এক টানা ৪০ ঘণ্টারও বেশি আকাশে উড়তে পারে। এতে রয়েছে ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র, যা লক্ষ্যবস্তুতে অব্যর্থ নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই ৩১টি ‘হান্টার কিলারের’ জন্য মার্কিন সংস্থা দর হেঁকেছে ৩.৯ বিলিয়ন ডলার। সঙ্গে দেবে ১৭০টি ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র, ৩১০টি বোমা, দিকনির্ধারণ যন্ত্র, সেন্সর ও মাটি থেকে ওই লড়াকু ড্রোন চালনার যন্ত্র।</p> <p>পাশাপাশি সি-১৩০জে ‘সুপার হারকিউলিস’ বিমানের জন্য মার্কিন সংস্থা লকহিড মার্টিন ও টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেডের মধ্যে সাম্প্রতিক চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে দুই দেশের রাষ্ট্রনেতার। ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য পরিবহণ বিমান সি-১৩০ সুপার হারকিউলিস রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য সে দেশের মাটিতেই তৈরি হচ্ছে কারখানা। মার্কিন বিমান নির্মাতা সংস্থা লকহিড মার্টিনের সঙ্গে এই প্রকল্পে শামিল হচ্ছে টাটা শিল্পগোষ্ঠী। সি-১৩০ হারকিউলিস বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশ্বজুড়ে ২৩টি দেশে লকহিড মার্টিনের ২৭টি মেন্টেন্যান্স-রিপেয়ারিং-ওভারহলিং (এমআরও) রয়েছে। এবার টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভারতে যৌরভাবে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করছে তারা।</p> <p>এ ছাড়াও কলকাতায় এবার তৈরি হতে পারে ‘সেমিকন্ডাক্টর কারখানা’। মোদির দপ্তর থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা, নতুন প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক সেন্সিং ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা হয়েছে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের। সেই প্রসঙ্গেই সেমিকন্ডাক্টর তৈরির একটি নতুন কারখানার তৈরি নিয়ে আলোচনা হয়েছে দুজনের। এর ফলে দুই দেশেরই কর্মসংস্থান তৈরি হবে।</p>