<p>বিশ্ব হার্ট দিবস আজ। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘ইউজ হার্ট, ফর অ্যাকশন’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন ২০০০ সাল থেকেই প্রতিবছর ২৯ সেপ্টেম্বর এই দিবস পালন করে আসছে। আজ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।</p> <p>চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশের সাফল্যের দিক থেকে অবশ্যই আমাদের কার্ডিয়াক চিকিৎসা অন্যতম। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কার্ডিয়াক চিকিৎসায় ক্রমেই মানুষের আস্থা বেড়ে চলেছে।</p> <p>হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ বা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ দেশে মৃত্যুর শীর্ষ কারণ, যা রোধ করার জন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে হার্ট ফেইলিউর ক্লিনিকের প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে চল্লিশোর্ধ্ব জনগণের হঠাৎই হার্ট অ্যাটাকের সংবাদ শোনা যাচ্ছে, যা প্রতিরোধে আমাদের প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস আর নিয়মিত ব্যায়াম অথবা কায়িক পরিশ্রম করার অভ্যাস।</p> <p>কিন্তু গত প্রায় ৪০ বছরে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে দেশে মৃত্যুহার ৩০ গুণ বেড়েছে। প্রতি এক লাখে ১৬ জন থেকে এখন তা ৪৮৫ জনে উন্নীত হয়েছে, যা সত্যিই চিন্তার বিষয়। আমরা হৃদরোগের চিকিৎসায় সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। প্রতিরোধযোগ্য বিপদ এড়াতে আমরা আর্থ-সামাজিক, পরিবেশগত ও আচরণগত পরিবর্তনের ওপর জোর দিচ্ছি। হৃদরোগ প্রতিরোধকল্পে একটি শক্তিশালী সিভিল সোসাইটির পক্ষে আমরা, যারা তৃণমূল পর্যায় থেকে নাগরিকদের সচেতন ও সংগঠিত করব।</p> <p>আকস্মিক হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার অর্থ জোগান দিতে দিশাহারা হয়ে পড়ে অনেক পরিবারও। এই চিকিৎসা ব্যয় কমানোর জন্য স্টেন্টের দামসহ চিকিৎসা খাতে ডিসপোজেবল আইটেমের ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। হেলথ ইনস্যুরেন্স আমাদের প্রান্তিক জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারলে চিকিৎসা ব্যয় আরো সহনীয় হবে।</p> <p>গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে হৃদরোগের প্রকোপ বাড়লেও এ নিয়ে দেশে গবেষণা হয়েছে কম।</p> <p>দেশের গবেষক ও নীতিনির্ধারকরা নির্ভর করে আছেন সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমিত সংখ্যার ওপরই। কত মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে, কত মানুষ মারা যাচ্ছে, কত মানুষ ঝুঁকিতে আছে—এসব নিয়ে জাতীয় জরিপ বা গবেষণাভিত্তিক পরিসংখ্যান প্রয়োজন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের হৃদরোগের কোনো তথ্যও আমাদের কাছে নেই। এ বিষয়ে জাতীয় কর্মকৌশল হবে ভবিষ্যত্মুখী, যেখানে কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স নিয়ে কাজ হবে প্রতিটি কার্ডিয়াক হাসপাতালে।</p> <p>সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরম এনসিডিপোর্টাল ডটকম বলছে, বাংলাদেশে বছরে যত মৃত্যু হয়, তার ৩৪ শতাংশের জন্য দায়ী  হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ। সংখ্যার বিচারে দুই লাখ ৭০ হাজারের বেশি।</p> <p>আজকাল মানুষ অল্প বয়সেই নানা ধরনের রোগ ও সমস্যার শিকার হচ্ছে। হার্টসংক্রান্ত সমস্যা আজকাল খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে। তরুণরাও হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছে। মূলত বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী।</p> <p>হৃদরোগ চিকিৎসায় বাংলাদেশ এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। দক্ষ জনবল, আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি দেশে আছে। তবে দেশে এখনো কার্ডিয়াক ট্রান্সপ্লান্ট বা হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন সে অর্থে শুরু হয়নি। কারণ এ জন্য মরণোত্তর দেহদানে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যায়নি। তার চেয়ে বড় বিষয়, ব্রেইন ডেড একটি হার্ট অতিদ্রুত সময়ে খুঁজে পাওয়ার জন্য আমাদের কাঠামোগত পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি মানুষকেও হার্ট দান করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। একজন ব্রেইন ডেড মৃত ব্যক্তির কর্নিয়া, কিডনি, হৃদযন্ত্র, যকৃৎ ও চামড়া দিয়ে একজন রোগী নতুন জীবন পেতে পারে। এভাবেই একজন মৃত মানুষ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে বেঁচে থাকে অন্যের জীবনে। এটি মানুষকে বোঝাতে হবে।</p> <p>এ ছাড়া দেশে হার্টের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনো শহরকেন্দ্রিক। অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে গ্রাম থেকে শহরে আসতে আসতে পথে মারা যায়। অনেকে চিকিৎসা শুরু করার আগেই মারা যায়।  এসব মৃত্যু কমাতে হলে প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবাকে গুরুত্ব দিতে হবে। হার্ট ফেইলিউর ক্লিনিক স্থাপন ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করতে হবে। এসব গুরুতর রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে হলে জনগণকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনাও জরুরি।</p> <p><strong>লেখক : </strong>সিনিয়র সচিব<br /> স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়</p>