<p>সরকার, মালিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কঠোর নজরদারির পরও দেশের পোশাক শিল্পাঞ্চলগুলোয় এখনো অস্থিরতা কমেনি। মাঝখানে কিছুটা স্বাভাবিক হলেও রহস্যজনক কারণে গতকাল ফের আরো কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ২১৯টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।</p> <p>গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৈরি পোশাক শিল্পে সরাসরি প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। আর পরোক্ষভাবে উপকারভোগী অন্তত দুই কোটি মানুষ। এ শিল্প বিপদগ্রস্ত হলে বিশাল জনগোষ্ঠী বিপাকে পড়বে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি।</p> <p>শিল্প পুলিশের তথ্য অনুসারে গতকাল ২১৯টি কারখানার মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য ৮৬টি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাকি ১৩৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিজিএমইএ জানিয়েছে, মোট বন্ধ কারখানার সংখ্যা ১১৫। এর মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য ৭৫টি, বাকি ৪০টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।</p> <p>জানতে চাইলে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পোশাক শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বেশ কিছু কারখানা গতকালও বন্ধ ছিল। শ্রমিক অস্থিরতা কাটাতে বিজিএমইএ, মালিক-শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করছে।’ তিনি আশা করছেন শনিবার থেকে কারখানা পুুরোদমে চলবে।</p> <p>এদিকে শিল্প মালিকরা বলছেন, দেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাত অস্থিতিশীল করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিভিন্ন জায়গায় নানা অজুহাতে আন্দোলন ও কারখানা ভাঙচুর শুরু করেছে দুর্বৃত্তরা। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে মুখ থুবড়ে পড়বে পোশাক খাত। এতে বেশি লাভবান হবে প্রতিবেশী দেশ।</p> <p>বিজিএমইএ পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘পোশাকশিল্পে অস্থিরতার পেছনে বহিরাগত শক্তির সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্রের যোগসাজশ থাকতে পারে।’</p> <p>আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২১৯টি কারখানার মধ্যে ৮৬টি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাকি ১৩৩টি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শিল্পাঞ্চলের কোথাও  সড়ক অবরোধ, কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। তবে যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে।’</p> <p><strong>টঙ্গীতে দুই কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ</strong></p> <p>আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাজীপুর জানান, গতকাল গাজীপুরের টঙ্গীতে নতুন করে ১৩ দফা দাবিতে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং আট দফা দাবিতে লীরা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে পাশের আরো দুটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।</p> <p>জানা যায়, তিস্তারগেট এলাকার পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের দেড় সহস্রাধিক শ্রমিক গত ২৫ আগস্ট ১৯ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। পরে আলোচনা করে ১১ দফা দাবি মেনে নেয় মালিকপক্ষ। দাবিগুলো আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর কার্যকর করার কথা ছিল। এরই মধ্যে শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলায় মালিকপক্ষ গত বুধবার কারখানার পরিচালক রবিন কুমার পালসহ আরো দুজনকে চাকরিচ্যুত করায় শ্রমিকদের মধ্যে ফের অসন্তোষ দেখা দেয়।</p> <p>এদিকে গতকাল সকাল ৮টা থেকে মিলগেট এলাকার লীরা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দুই শতাধিক শ্রমিক কারখানার অ্যাডমিন লুৎফর রহমানের পদত্যাগ, বেতন বৃদ্ধিসহ আট দফা দাবিতে কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে তাঁদের দাবিগুলো আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান করা হয়। এ ছাড়া চলমান শ্রমিক আন্দোলনের জেরে চেরাগআলী এলাকার ড্রেসম্যান ফ্যাশনওয়্যার লিমিটেড এবং পিনাকী গ্রুপের এজি ড্রেসেস বন্ধ রয়েছে।</p> <p>গাজীপুর শিল্প পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘লীরা ইন্ডাস্ট্রিজের সমস্যার সমাধান হয়েছে। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। দুটি কারখানা বন্ধ রয়েছে।’</p>