<p>ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলা চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ৪ দিনে দেশের ৫২টি জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছে। এ সময় অন্তত ২০৫টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যে কারণে সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।</p> <p>আজ শুক্রবার (৯ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খোলা চিঠিসহ নির্যাতনে তথ্য তুলে ধরা হয়। সংগঠনের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।</p> <p>খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে নবযুগের সূচনা হয়েছে। তারই কাণ্ডারি হিসেবে আপনাকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই। জনতার এই বিজয় যখন চূড়ান্ত লক্ষ্য অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে। অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি, একটি বিশেষ গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে সহিংসতা ছড়িয়ে এই অর্জনকে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। ইতিমধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হাজার হাজার হিন্দু পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। অনেক মন্দির হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেক মহিলা নিগৃহীত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। অন্য সংখ্যালঘুরাও আক্রান্ত হয়েছে। মূলত ৫ আগস্ট থেকে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত আছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাই অবিলম্বে এই অবস্থার অবসান চাই।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৫২ জেলায় ২০৫টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা আমাদের সুরক্ষা চাই। কারণ আমাদের জীবন বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। এমন ঘটনা আমি আগে কখনো দেখিনি। আমরা রাত জেগে নিজের ঘর ও মন্দির পাহারা দিচ্ছি।’ ড. ইউনূসের নেতৃত্বধীন নতুন সরকারের কাছে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানান তিনি।</p> <p>অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে শুধু পবিত্র কোরআন ব্যতীত অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ না করার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ না করার বিষয়টি আমাদের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বৈষম্যবিরোধী চেতনার বিরোধী। আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠানে প্রধান প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হবে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘একটা মানুষ বাধ্য না হলে নিজের ভিটা, দেবালয়, তুলশীতলা ছেড়ে দেশত্যাগ করেন না। তবে অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এখন নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আমি নিজেও আমার পরিচিত একজনের বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছি। যারা দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার করতে হবে। যদি রাজনৈতিক কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হন, সেটিও কাম্য নয়। কেউ কোনো অপরাধ করলে, তার বাড়িঘর পোড়ানো, লুটপাট নয়, আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবে।’</p> <p>সংগঠনের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করার কথা সবার মুখে শুনেছি, কিন্তু বন্ধ করার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। আমাদের জাতীয় সম্পদ, ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে। এটা আমাদের কাছে মোটেও কাম্য নয়।’</p> <p>হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার ও জে এল ভৌমিক, বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় প্রমুখ।</p>