<p>২২ নভেম্বর বিশেষ আয়োজনে ব্যান্ড ‘জলের গান’ সদস্যদের নিয়ে হচ্ছে একক কনসার্ট। যার নাম রাখা হয়েছে ‘মনের আনন্দে জলের গান’। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অবস্থিত ঢাকা ট্রেড সেন্টারের অ্যাটেনশন নেটওয়ার্ক অডিটরিয়ামে শুরু হবে এ আয়োজন। ভক্তদের জন্য এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!</p> <p>কনসার্টের সূত্র ধরে ব্যান্ডটির প্রধান রাহুল আনন্দের সঙ্গে আলাপ হলো কালের কণ্ঠের। বাড়তি ব্যঞ্জনা যোগ করলেন কনক আদিত্য, দলের এই সদস্যকেও পাওয়া গেল ফোনের ওপারে। তাঁদের গান ও বন্ধুত্বের গল্প শুনেছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p>অঘ্রাণের নরম বিকেল নেমে গেছে তখন। ফোন রিসিভ করে রাহুল আনন্দ যখন বললেন, ‘হ্যালো’। চারপাশের নির্জনতা টের পাওয়া গেল। আছেন নাগরিক কোলাহল থেকে অনেকটা দূরে—গ্রামে। ক্ষণিক বাদে সে নির্জনতায় শিশির ফোঁটার মতো বিন্দু বিন্দু ছেদ পড়ল, বাদ্যযন্ত্রের টুংটাং শব্দে। ছকে বাঁধা গোছানো সুর নয়, যন্ত্রকে বশে আনার চেষ্টা আরকি। আগ্রহটা জিইয়ে রেখে প্রাথমিক আলাপটা শুরু হলো মনের খবর দিয়ে, ‘মনটা এখনো একটু খারাপ আছে, এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। তবু সবকিছু মিলিয়ে ভালো আছি’—বললেন রাহুল আনন্দ।</p> <p>২২ নভেম্বর কারওয়ান বাজারের ঢাকা ট্রেড সেন্টারে ব্যান্ডটির একক কনসার্ট ‘মনের আনন্দে জলের গান’। দলনেতা রাহুল জানালেন, অনেকদিন পর একক আয়োজনে হাজির হবে তাঁর দল। এতে ব্যান্ডের জনপ্রিয় কিছু গানের সঙ্গে নতুন অ্যালবামের গানও পরিবেশন করবেন।</p> <p>সম্প্রতি ‘জলের গান’ যে ক’টি শো করেছে, মঞ্চে দেখা যায়নি রাহুল আনন্দকে। আগামী শো-তেও থাকবেন না তিনি। কেন? শিল্পী বলেন, ‘প্রথমত মন-মানসিকতা ভালো নেই। দ্বিতীয়ত ইনস্ট্রুমেন্ট ছাড়া মঞ্চে উঠে চেহারা দেখিয়ে লাভ নেই। ইনস্ট্রুমেন্ট তো বানাতে হচ্ছে। অনেকগুলো বানানো হয়েছে, আরো কাজ চলছে। এই যে এই মুহূর্তেও ইনস্ট্রুমেন্ট বানানোর কাজেই আছি।’ </p> <p>কাজ বলতে, বাদ্যযন্ত্রের জন্য কাঠ খুঁজতে গ্রামে গেছেন রাহুল। সঙ্গে তাঁর বন্ধু, ‘জলের গান’-এর আরেক সদস্য কনক আদিত্য। যিনি মাঝে অনেকদিন ব্যান্ডটিতে পারফরম করেননি। সেখান থেকেই নির্জনতা ভেঙে কথা বলেছেন দুই বন্ধু। কনকের প্রসঙ্গ তুলতেই রাহুল বললেন, ‘কনক তো কোথাও যায়নি। মাঝে কিছুদিন কেবল স্টেজে পারফরম করেনি। ওর সঙ্গে আমার দীর্ঘ ৩০ বছরের বন্ধুত্ব। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে ও স্টেজে উঠতে পারেনি। তবে সবসময় ব্যান্ডের সঙ্গেই ছিল, আছে। স্টেজ ছাড়া সব কাজেই ও যুক্ত ছিল।’</p> <p>বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ যখন উঠল, সে পৃষ্ঠায়ও একটু চোখ বোলানো যাক তবে। রাহুল জানালেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় পড়াকালীন তাঁদের বন্ধুত্বের সূচনা। এক বিছানায় থাকা, এক পাতে খাওয়া, একইসঙ্গে শিল্পের ভুবনে বেড়ে ওঠা তাঁদের। রাহুল বলেন, ‘এটা চলমান সম্পর্ক। সম্পর্ক কেবল শুরু হয়, শেষ হয় না। যেটা শেষ হয়ে যায়, সেটা সম্পর্কই না। বন্ধুত্ব হলো শেষ দিন পর্যন্ত থাকার জিনিস। বন্ধুত্বের মধ্যে ঝগড়া, মনোমালিন্য হবে, স্বাভাবিক। আবার ভালোবাসাটাও যে হয়, সেটা কেউ দেখে না।’</p> <p>আলাপের এ পর্যায়ে যোগ দিলেন কনক। তাঁর কাছ থেকেও বন্ধুত্বের বয়ান শুনতে চাইলাম। বললেন, ‘বন্ধুত্বের কোনো রকমফের নেই। ১৯-২০ বছর বয়সে আমাদের পরিচয়। ফলে ঢাকা শহরে আমাদের বেড়ে ওঠা একসঙ্গে, একইভাবে। একসঙ্গে থাকা, থিয়েটার করা। জলের গানের বয়স বেশি না, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর ব্যান্ডটা করা। কিন্তু তারও অনেক আগে থেকে আমরা একসঙ্গে গান করি। একটা বিষয় বলি, আমি যে গাইতে পারি, লিখতে পারি, এটার শিক্ষক বলা যায় রাহুলকে।’</p> <p>কনক জানান, ‘জলের গান’ প্রচলিত ব্যান্ডের ফরমুলায় চলে না। এটি থিয়েটার গ্রুপের মতো। ফলে কোনো একজন সদস্য না থাকলেও ব্যান্ডের পথচলা বাধাগ্রস্থ হয় না। তিনি ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় কিছুদিন কেবল স্টেজ থেকে দূরে ছিলেন। পুনরায় স্টেজে ফেরার অনুভূতি কেমন? কনক বলেন, ‘আমি চোখ বন্ধ করে গান করি। অর্থাৎ নিজের সন্তুষ্টির জন্য গান করি। আমরা আমাদের মতো গান বানাই, পারফরম করি, এখন সেগুলো মানুষ পছন্দ করে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাকে, এটা বাড়তি পাওনা। তবে কেউ যদি না-ও ডাকে, আমরা গাছতলায়, রাস্তা-ঘাটে গান করে যাব।’ </p> <p>ফেরা যাক আনন্দ-কথায়। আওয়ামী সরকার পতনের পর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। সে ঘটনায় আক্রান্ত হয় রাহুল আনন্দের বাড়িও। তাঁর বাড়িটিও পুড়ে যায়, ধ্বংস হয়ে যায় তাঁর বানানো অনিন্দ্য সব বাদ্যযন্ত্র। সে ঘটনাটা নিয়ে কিছু বলতে চান? ‘ওটা একটা দুর্ঘটনা। এটা নিয়ে কিছু বলার আগ্রহ নেই। ভুলতে চাই। নতুন করে শুরু করতে চাই। আমার বাসাটা ওই জায়গায় ছিল বলে দুর্ঘটনায় পড়ে গেছে, ওই যে বলে কোলাটেরাল ড্যামেজ। সেটা ভুলে নতুন করে দাঁড়াতে চাই। কারো প্রতি আমার অভিযোগ নেই, আক্রোশ নেই। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করিনি। মানুষকে ভালোবেসেছি, ভালোবাসব। ওই ঘটনা নিয়ে যদি আপনি কিছু শুনতে চান, তাহলে আমাকে অভিযোগ করতে হবে। আমার মানুষের বিরুদ্ধে আমি কোনো অভিযোগ করব না।’ </p> <p>ভস্ম হয়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্রগুলো কি পুনরায় বানানো সম্ভব? উত্তরে পাওয়া গেল সংগীতের প্রতি তাঁর অদম্য ভালোবাসার আভাস, ‘আবার বানাচ্ছি। হ্যাঁ, সময় লাগবে। তবে বানাব। একটা কথা বলি, প্রতি বছরই উপকূলের মানুষের ঘর ভেঙে যায় ঝড়ে। তাই বলে কি তাঁরা উপকূল ছেড়ে চলে যায়? না, নতুন করে ঘর তোলে। এ ব্যাপারটাও একইরকম। জীবন বহমান। চলতে থাকুক। নদী যেমন এঁকে-বেঁকে চলে, নানা বাঁকে নানান গল্প থাকে, আনন্দ-বেদনা থাকে, সবমিলিয়েই তো জীবন। এই জীবন উদযাপন করাই হলো মূল বিষয়। কারো অনিষ্ট না করে উদযাপন করলে তা আনন্দের।’ </p> <p>সবশেষে রাহুল জানালেন, দলের নতুন অ্যালবাম ‘আয়না জলের গান’। এর কয়েকটি গান ইতোপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। প্রস্তুত আরো তিনটি। আসবে ক্রমশ।</p>