<p>শীত এলে ত্বকের লাবণ্য গিয়ে তলানিতে ঠেকে। নিষ্প্রাণ পাতার মতো শীতের রুক্ষ এবং ঠাণ্ডা হাওয়া আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা, প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয়। ত্বক হয়ে পড়ে শুষ্ক ও খসখসে। আয়নার সামনে দাঁড়ালে হাত, পা, মুখ, ঘাড়, গলার ত্বক নির্জীব লাগে। অনেকেই এতে হতাশ হয়ে পড়েন। আবার অনেকেই ভাবেন শীত চলে গেলে সমস্যা কমে যাবে। আদতে তা নয়। বিন্দিয়া বিউটি কেয়ারের স্বত্বাধিকারী ও রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বলেন, ‘ত্বকের শুষ্কতা কেবলই মৌসুম ভিত্তিকই হয় না। সব সময়ই থাকে। শীত বাতাসে আর্দ্রতার অভাবে সমস্যা আরো বেশি হয়। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে ত্বকের ধরন বুঝে, ঠিকঠাক যত্ন-আত্তিতে প্রয়োজন ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার। যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করবে।’</p> <p><img alt="শীতে ত্বক থাকুক লাবণ্যময়" height="272" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/print/Magazine%202023/18-11-2024/kalerkantho01.jpg" width="450" /></p> <p>ত্বকের শুষ্কতা কখনো কখনো চর্মরোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। গুলশান মা ও শিশু ক্লিনিকের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী গোলাম আহসান বলেন, ‘শীতের প্রভাবে ত্বকের শুষ্কতায় পরম বন্ধু ময়েশ্চারাইজার। রোজ গোসলের পরে এবং রাতে ঘুমানোর আগে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। তবে বডি ময়েশ্চারাইজার শুধু শরীরে ব্যবহার করা ভালো। মুখের জন্য আলাদা ফেস ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। কেননা মুখের এবং দেহের অন্যান্য অংশের ত্বক এক নয়। শীতকালে ত্বক কোমল রাখতে তেল বা পানিবেইজ ময়েশ্চারাইজার ভালো কাজে দেয়।’</p> <p>শীতে অনেকের মধ্যে গোসলে অনীহা দেখা দেয়। এ অভ্যাসও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। বরং নিয়মিত গোসলে ত্বক আর্দ্র থাকে। গোসলের সময় পানিতে এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বকে একটি ময়েশ্চারাইজারের স্তর তৈরি হবে। শীতের সময় রোদ গায়ে মাখতে ভালো লাগলেও নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। না হলে ত্বক পুড়ে কালচে হয়ে যেতে পারে। এমনকি অন্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বাইরে যাওয়ার আধাঘণ্টা আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন। পায়ের রুক্ষতা বেশি হলে বা ফেটে গেলে রাতে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে মোজা পরে ঘুমান। অনেকটাই কমে যাবে।</p> <p><img alt="শীতে ত্বক থাকুক লাবণ্যময়" height="272" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/print/Magazine%202023/18-11-2024/kalerkantho02.jpg" width="450" /></p> <p>শীতে প্রতিদিন ত্বকের যত্ন নিতে হবে। আর্দ্রতা ধরে রাখতে নিয়মিত ত্বকে লোশন ও ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। শীতকালে ঠোঁটেরও চাই বিশেষ যত্ন। শীতে ঠোঁট অনেক বেশি নাজুক অবস্থায় থাকে। ঠোঁট শুকিয়ে ফেটেও যায় অনেক সময়। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে লিপবাম লাগানো জরুরি। এমনকি ঘুমাতে যাওয়ার আগেও লাগিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করার জন্য সপ্তাহে ২-৩ বার লিপ স্ক্রাব করে নেওয়াও জরুরি। এ জন্য চিনি, মধু, লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে ঠোঁটে স্ক্রাব করে নেয়া যেতে পারে।</p> <p>শীতে ত্বকের যত্ন ধাপে ধাপে নেওয়াটা বেশি উপকারী। রেড বিউটি স্যালনের স্বত্বাধিকারী ও রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, ‘শীতে শুষ্ক হাওয়ায় ধুলাবালির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এ সময় বাইরে থেকে ফিরে মুখ পরিষ্কার করুন। দুধে তুলার বল ডুবিয়ে পুরো মুখ মুছে নিন। এভাবে দুই থেকে তিনবার করুন। শুকিয়ে গেলে ভালো করে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। দুধে থাকা ল্যাকটিক এসিড মূলত এক ধরনের আলফা-হাইড্রোক্সি এসিড, যা ত্বকের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কারে সাহায্য করে।’</p> <p>ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ত্বকে ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে এক্সফোলিয়েশন বেশ জরুরি। এটি মৃত কোষের আস্তরণ সরিয়ে ভেতরের নরম, সজীব ত্বককে বের করে আনে। এসবের পাশাপাশি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।</p> <p>সঙ্গে খাবারের পাতে বিভিন্ন ফল, তরল বা পানিযুক্ত খাবার রাখতে হবে। ভিটামিন-ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ খাবার যেমন বাদাম, তেল বা চর্বিযুক্ত মাছ, বীজজাতীয় খাবার ত্বকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগাবে। শীতেও ত্বক হয়ে উঠবে দীপ্তিময়।</p>