<p>অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলেন অ্যালেন শুভ্র। একের পর এক জনপ্রিয় নাটকে দেখা গেছে তাকে। অনেকে বলেন, এ প্রজন্মের অন্যতম সেরা অভিনেতা তিনি। সম্ভাবনার শিখাও জ্বালিয়েছিলেন অ্যালেন শুভ্র। তবে এরপরই ঘটে ছন্দপতন। বহুদিন ধরেই কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না অ্যালেন শুভ্রকে। মাঝে অজানা কারণে অভিনয় থেকে দুই বছর দূরে ছিলেন।</p> <p>তবে বিরতির পর আবার অভিনয়ে ফিরলেন ভার্সেটাইল অভিনেতা। সম্প্রতি একটি মিনি সিরিজে (দেনা পাওনা) অভিনয় করেছেন। নাটকের গল্পটি একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে, যেখানে ছোট ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অ্যালেন শুভ্র। ছেলেটি পড়াশোনা শেষ করেছে। তার বাবা স্কুল শিক্ষক। বড় ভাই শহরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকে। একপর্যায়ে জীবনের কঠিন একটি সত্য জানতে পারে ছোট ছেলে। ইতোমধ্যে শুটিং শেষ করেছেন তিনি। এর সূত্র ধরে শুভ্র-কথা শুনেছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p><strong>কত দিন পর নতুন কাজ করলেন?</strong></p> <p>রোজার ঈদের কিছু দিন পর অভিনয় করেছিলাম নুহাশ হুমায়ূনের ‘পেট কাটা ষ’-এর দ্বিতীয় সিজনে। এখন ‘দেনা পাওনা’ করলাম।</p> <p><strong>‘দেনা পাওনা’ কেমন? মানে, অ্যালেন শুভ্র কিছু করলে তো দর্শক অনুমান করে নেয় এতে নিশ্চয়ই কোনো বিশেষত্ব আছে...</strong></p> <p>এটা নির্মাণ করছেন কে এম সোহাগ রানা। গল্পটা খুব সুন্দর। একটু আভাস দিই, এক পরিবারে আমি পালিত ছেলে। বাবা মফস্বলের স্কুলশিক্ষক। তাঁর এক পুত্র রয়েছে, স্ত্রী নিয়ে ঢাকায় থাকেন। দুই ছেলেকেই তিনি শিক্ষিত করেন। তবে বড় ছেলের প্রতি তাঁর এত ভালোবসা যে নিজের বাড়ি বন্ধক রেখে তার জন্য টাকা পাঠান। সে টাকা শোধ করতে না পারায় বাড়ি ছেড়ে আমরা ঢাকায় যাই। সেখানে নানা জটিলতা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে গভীর রাতে আমরা বড় ভাইয়ের বাসা থেকে বের হয়ে যাই এবং ঘটনাচক্রে এক বস্তিতে গিয়ে আশ্রয় নিই। আশ্রয় দেয় এক রিকশাচালক, যে কিনা বাবার স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিল। সিরিজটির গল্পে দারুণ কিছু শিক্ষণীয় বিষয় আছে। দর্শক সেটি দেখলে বুঝতে পারবে।</p> <p><strong>গ্রাম থেকে শহর, এরপর বস্তিতে—একটা জার্নি টের পাওয়া যাচ্ছে...</strong></p> <p>হ্যাঁ, একটা জার্নি আছে। অনেকে ভিউ গোনে। ভিউর জন্য কোনো রকম ফুটেজ নেয়। এটা সে রকম কাজ নয়। আমি না হয় অনিয়মিত। কিন্তু এখানে আমার যাঁরা সহশিল্পী, তাঁরা তো নিয়মিত কাজ করেন। তাঁরাও বারবার বলেছেন, গল্পটা খুব সুন্দর। শুটিং করতে গিয়ে আমাদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন গড়ে উঠেছিল। শেষ দিন আমি তাঁদের ভীষণ মিস করতে শুরু করলাম। ফলে শুটিং শেষ হয়ে গেলেও পরে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে।</p> <p><strong>এটা ছাড়া হাতে আর কী কাজ আছে?</strong></p> <p>আর কিছু করছি না এখন। কারণ এই সিরিজের দ্বিতীয় সিজন আসবে। সেটার জন্য আমার চেহারায় অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। এ কারণে অন্য কাজ আপাতত হাতে নিচ্ছি না।</p> <p><strong>অভিনয়ে জ্বলে উঠেছিলেন। অনেক দিন ধরে সে আগুন নিভু নিভু। এর দায়টা আসলে কার?</strong></p> <p>যখন জ্বলে উঠেছিলাম, সেটার কৃতিত্ব কার ছিল? নিশ্চয়ই সবার। নির্মাতা, প্রযোজক, সহশিল্পী সবার সমন্বিত সহযোগিতায়ই তো জ্বলে উঠেছিলাম। সুতরাং নিভু নিভু হওয়ার দায় নিশ্চয়ই আমার একার নয়।</p> <p><strong>আপনাকে নিয়ে ফেসবুকে মাঝেমধ্যে দর্শকের আক্ষেপ দেখা যায়। আপনার চোখে পড়ে?</strong></p> <p>ফেসবুক তো আছেই; কিন্তু আমি যখন রাস্তায় বের হই, মানুষ রীতিমতো আমাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করে, কাজ করি না কেন। এ কারণে মুখ ঢেকে চলতে হয়। কারণ তাদের দেওয়ার মতো উত্তর আমার কাছে নেই। তাদের জন্য আমার সত্যিই খারাপ লাগে। কারণ তারা আমার কাজ দেখতে চাইছে, কিন্তু দিতে পারছি না। একটা বিষয় আপনারা জানেন কি না জানি না; তবে আমি জানতাম না, তা হলো বিভিন্ন বয়সী মানুষ আমার ভক্ত। একেবারে তরুণ থেকে বৃদ্ধ মানুষ। একবার গাড়ির কাজ করাতে একটি গ্যারেজে গিয়েছিলাম। সেখানে একজন মধ্যবয়স্ক নারী আমাকে দেখে এগিয়ে এলেন। আমার প্রতি ভালোলাগা জানালেন, নতুন কাজ কেন করি না, তাও জানতে চাইলেন। ওই ঘটনায় আমি সত্যিই অবাক হয়েছিলাম।</p> <p><strong>দীর্ঘদিন ধরে থিয়েটার চর্চা করছেন। অভিনয় ছাড়া সেখান থেকে আর কী শিখলেন?</strong></p> <p>কোন পরিস্থিতি কিভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়, ব্যস্ততার সময়েও কিভাবে অভিনয়ের চর্চা, শিল্পের চর্চা অব্যাহত রাখা যায়, এসব শিখেছি। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। নাটক-সিনেমা দেখে যা উপলব্ধি করা যায় না, বই পড়ে তার অনেক বেশি অনুভব করা যায়। </p> <p><strong>অভিনয়ের বাইরে আর কিছু করেন?</strong></p> <p>অভিনয় ছাড়া কিছু করতে পারব না। অভিনয়টাই পারি আমি। আর অভিনয়ের বাইরে সময় কাটে পরিবারের সঙ্গে। আমি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তাঁদের দেখাশোনা করি, ঘুরতে যাই। আমি অনিয়মিত হলেও শোবিজের বন্ধুদের সঙ্গে ঠিকই যোগাযোগ হয়, নিয়মিত আড্ডা হয়। দেখুন, প্রফেশনাল জেলাসি থাকবেই, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব রাখতে হবে। আমার সঙ্গে যে ঘটনাটি (২০১৮ সালে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন) ঘটেছিল, সেটা ঠিক হয়নি। পরে তারাও বিষয়টি উপলব্ধি করেছে। আমার অনিয়মিত হয়ে যাওয়ার পেছনে ওই ঘটনারও প্রভাব আছে। যা-ই হোক, এখন কাজ করছি। সামনে নিয়মিতই কাজ করে যেতে চাই।</p>