<p>বহুমাত্রিক গানে কণ্ঠ দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেন জনপ্রিয় গায়িকা আলম আরা মিনু। রেডিও, টেলিভিশন, অডিও (ফিতা ও সিডি), সিনেমা, নাটক এবং মঞ্চ- নব্বই ও শূন্য দশকের প্রায় পুরো সময়টাজুড়ে অজস্র গানে নিজেকে প্রমাণ দিয়েছেন নানাভাবে। মাঝে নানা কারণে গান থেকে খানিকটা দূরে ছিলেন এই কণ্ঠশিল্পী। অবশেষে ফিরেছেন। সম্প্রতি কণ্ঠ দিয়েছেন ‘মন করেছি চুরি’ শিরোনামের একটি গানে। মিনুর সঙ্গে গান, রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে সঙ্গে কথা বলেছেন সুদীপ কুমার দীপ।</p> <p><strong>হৈচৈ মনে হচ্ছে! আপনি কি বাইরে?</strong></p> <p>আমরা শুটিংয়ে আসছি। কয়েকটি দেশের গান, ফোক গান ও আধুনিক গানে কণ্ঠ দিয়েছি। সেগুলোর ভিডিও শুটিং করছি ঢাকার আশপাশে। আমার সঙ্গে ইউনিট আছে। হয়তো তাদের কথাই শুনতে পাচ্ছেন।</p> <p><strong>এ সপ্তাহে </strong><strong>‘</strong><strong>ক্লোজআপ ওয়ান</strong><strong>’</strong><strong>খ্যাত নোলক বাবুর সঙ্গে একটি গান করেছেন। কবে প্রকাশ পাবে গানটি?</strong></p> <p>গানটি রেকর্ড করার আগে নোলকের সঙ্গে আমার আলোচনা চলেছে অনেক দিন। তার ইচ্ছা আমার সঙ্গে একটা দ্বৈত গান করবে। কথা ও সুর পাঠাল, শুনে ভালো লাগল। নোলককে বললাম, গানটি ভালো হবে। এখন তো ভিডিওর যুগ। সেখানে কিন্তু ছাড় দেওয়া যাবে না। নোলক রাজি হওয়ার পরই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছি। তরুণ সিংয়ের কথায় ‘যে বাতাসে ফোটে ফুল’ সুর করেছে নোলক নিজেই, সংগীত করেছে এসডি সাগর। তিনজনই দারুণ করেছে। খুব শিগগির ভালো একটা গানচিত্র নির্মাণ করার পর বড় কোনো কম্পানি থেকে প্রকাশ করা হবে।</p> <p><strong>গানে ৩৫ বছরের ক্যারিয়ার আপনার। </strong><strong>এই দীর্ঘ সময়ে সংগীতাঙ্গনে কী কী পরিবর্তন দেখলেন?</strong></p> <p>ক্যাসেটের যুগ থেকে সিডি আর এখন তো ইউটিউব—তিন মাধ্যমেই গান করছি আমি। ক্যাসেটের সময় মানে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের দিকে গান ছিল মেলোডিনির্ভর। শ্রোতারা মিষ্টি গান শুনতে পছন্দ করত। এই শতাব্দীর শুরুতে সিডি ক্যাসেটের প্রচলন শুরু হলো। গানগুলোতে ধীরে ধীরে মেলোডি কমতে থাকল এবং চটুল কথার গান পছন্দ করতে শুরু করল শ্রোতারা। আর এখন ইউটিউবের যুগে তো গান যেমন-তেমন, ভিডিওর দিকে মনোযোগ বেশি সবার। আমি তিনটি সময়ের কোনোটিকেই ছোট করে দেখছি না। আমাদের তো সময়ের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে হবে।</p> <p><strong>একটা সময় প্লেব্যাকে নিয়মিত ছিলেন। এখন এই মাধ্যমে আপনাকে পাওয়া যায় না কেন?</strong></p> <p>সিন্ডিকেট মেনে চলতে পারি না। আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন আমি সোজাসাপ্টা মানুষ। ভালোকে ভালো, মন্দকে মন্দ বলে ফেলি মুখের ওপর। এই কারণে অনেকে পছন্দও করেন না। চলচ্চিত্রের গানে শুরু থেকে একটা গ্রুপ ছিল, এখনো আছে। ঘুরেফিরে একই সংগীত পরিচালক, একই শিল্পী-গীতিকার কাজ করেন। আমি হয়তো তাঁদের সুনজরে আসতে পারিনি। এ নিয়ে ক্ষোভও নেই। অন্যান্য মাধ্যমে তো নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।</p> <p><strong>বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনেও মাঝখানে অনিয়মিত ছিলেন...</strong></p> <p>চেয়ে কাজ নেওয়ার অভ্যাস আমার কোনো দিনই ছিল না। যখন কেউ ডেকেছে সাড়া দিয়েছি। না ডাকলে তো কিছু করার নেই। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনকে সব সময় নিজের পরিবার মনে করেছি। তারা যখন প্রয়োজন মনে করেছে আমাকে ডেকেছে। প্রয়োজন মনে না করলে ডাকেনি। এটা একান্তই তাদের ব্যাপার। এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি নই। তবে এখন নিয়মিত এই দুই মাধ্যমে গান করছি।</p> <p><strong>এখনকার বেশির ভাগ শিল্পী নিজের ইউটিউব চ্যানেল করছেন। এদিক থেকে আপনি পিছিয়ে আছেন...</strong></p> <p>প্রযুক্তি অতটা বুঝি না। কিভাবে গান আপলোড করতে হবে, মেইনটেইন করতে হবে সেসব বোঝার বয়স কি এখন আছে? হাঃ হাঃ হাঃ। তার চেয়ে বরং অন্যদের জন্য গান করছি সেটাই ভালো। আর এখন তো মানুষ আমাকে গান করতে নিয়মিত ডাকছেনই। তাহলে নিজের ইউটিউব চ্যানেল করার দরকার কী?</p> <p><strong>সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে প্রথম থেকেই সমর্থন দিয়েছিলেন। এই আন্দোলন সফল হওয়ার পর কেমন লাগছে?</strong></p> <p>যে প্রাণগুলো হারিয়েছি তাঁদের তো আর ফিরে পাব না। অনেকে পঙ্গু হয়েছেন, অঙ্গ হারিয়েছেন। তাঁরাও কতটা সহযোগিতা পাচ্ছেন সেটা দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, অনেক প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে নতুন স্বাধীনতা এসেছে। একটা কথা আছে, স্বাধীনতা পাওয়ার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। এখন এই চ্যালেঞ্জকে ধারণ করতে হবে সবার। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাতে হবে, চিকিৎসাক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি ঘুষ-বাণিজ্য দমন করতে হবে। তাহলে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।</p>