<p style="text-align:justify">প্রতিদিন রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ দপ্তরগুলোকে এ বিষয়ে সোচ্চার থাকতে দেখা যায়। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের কাছে সচেতনবার্তার পাশাপাশি ওষুধ ছিটানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হতেও দেখা যায়। তবে ডেঙ্গুতে ভুগতে থাকা রাজধানী ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে ‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর’ থাকলেও কার্যত মশা নিধনে কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।</p> <p style="text-align:justify">সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসলে নামে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর হলেও মূলত মশা মারার সক্ষমতা নেই এই দপ্তরের। দপ্তরের কর্মীরা সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেন। এই দপ্তরকে কার্যকর করতে নেই কোনো পরিকল্পনাও।</p> <p style="text-align:justify">এটা বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রায় ২১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও কিছু কর্মচারীকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন দায়িত্ব পালন করাচ্ছে। বাকিদের বেতন-ভাতা নেওয়া ছাড়া কোনো কাজ নেই। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ভবন ও পর্যাপ্ত জনবল থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দপ্তরটিকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।<br /> লালবাগের নূর ফাতাহ লেনে এক একর ৩৯ শতাংশ জমির ওপর ১৯৪৮ সালে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর প্রতিষ্ঠা করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। সে সময় ম্যালেরিয়া মোকাবেলায় পুরো ভূমিকাই রাখত এই দপ্তর। অনেক জনবল ছিল সে সময়। ১৯৭২ সালে দপ্তরটির ৩৩৮ জনবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয় সরকার। ১৯৮৪ সালে এ বিভাগকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা হয়। তখন ঢাকা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।</p> <p style="text-align:justify">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মশা নিধন করা প্রধান কাজ হলেও তাঁদের কোনো ক্ষমতাই নেই। সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী মশা মারার ওষুধ বিভিন্ন জোনে বিতরণ করাই এখন তাঁদের কাজ। কয়েকজন কর্মচারী জানান, তাঁদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বেতন দেওয়া হয়। এতে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। কারণ মাঝেমধ্যেই তাঁদের বেতন-ভাতা পেতে দেরি হয়। সিটি করপোরেশন তাঁদের কার্যক্রম মনিটর করলেও জোরালো কোনো নজর নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও এ দপ্তরের ব্যাপারে উদাসীন। অনেকটা অভিভাবকহীনই বলা যায় এ দপ্তরকে।</p> <p style="text-align:justify">এই দপ্তরের সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জনবলের সংখ্যা ২১১ জন। পদ রয়েছে ৩৯৬টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু দপ্তরের নিজস্ব ভবন থেকে শুরু করে পর্যাপ্ত জনবল সবই আছে, সঠিক পরিকল্পনা এবং যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হলে মশক নিবারণী দপ্তরের কার্যক্রম সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।</p> <p style="text-align:justify">দপ্তরটির গুরুত্বের কথা তুলে ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটিকে ভালোভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ থাকলেও লাগানো হচ্ছে না। এতে সব দিক থেকেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এই দপ্তরকে একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ দপ্তরে রূপান্তর করার সুযোগ রয়েছে। এখানে মশার বংশবিস্তার নিয়ে গবেষণাগার, পরীক্ষাগার এবং মশা নিয়ন্ত্রণে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজিত হতে পারে।’      </p> <p style="text-align:justify">দপ্তরটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী সচিব দীপ্তিময়ী জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে দপ্তরের কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে নেই। দুই সিটির আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই দপ্তরের লোকজন মাঠে মশক সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছেন।’</p>