<p>তিন দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার পূর্ব সোনাপুর গ্রামের যুবক আনিচুর রহমান। যাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ৩০টি কোপ দেওয়া হয়েছে। তার হাত-পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে তাকে ঘনঘন রক্ত দিতে হচ্ছে। আনিচুরের পরিবার আশঙ্কা করছে, তিনি বেঁচে থাকলেও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হতে পারে এবং একটি পা কেটে ফেলা হতে পারে।</p> <p>প্রথমে কৃষক আনিচুরকে কোপানোর কারণ জানা যাচ্ছিল না। তবে কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, আনিচুর সালথা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবং সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাবুর সমর্থক, আর তার ওপর হামলা করেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা প্রভাষক জয়নাল আবেদিনের সমর্থকরা।</p> <p>চার বছর আগে ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর, একটি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আনিচুর এবং তার পরিবার বিএনপি কর্মী আতিক ফকিরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছিল। আতিকের পরিবারের দাবি, তার উপর হামলার ন্যায় বিচার পাননি তারা, কারণ আতিক বিএনপি কর্মী ছিলেন।</p> <p>এরই প্রতিশোধ নিতে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর, আতিক ও তার সমর্থকরা আনিচুরকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা নেয়। গত ১৩ নভেম্বর সকালে, ফসলি জমির মাঠে একা পেয়ে আতিক ফকির ও তার লোকজন আনিচুরকে চারদিক থেকে ঘিরে এলোপাথাড়ি কোপায়। আনিচুরকে অন্তত ৩০টি কোপ দেওয়া হয়, যার ফলে তার দুটি হাত এবং একটি পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।</p> <p>শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকালে সাবেক উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, আনিচুরের অবস্থা খুবই খারাপ। তাকে অন্তত ৩০টি কোপ দেওয়া হয়েছে। তার দুটি হাত ও একটি পা প্রায় বিচ্ছিন্ন। তাকে ১৫ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা তার হাত-পায়ের মাংসে পচন ধরেছে কি না, তা পরীক্ষা করছেন। এমন অবস্থায় আনিচুর বাঁচলে পঙ্গু হয়ে বাঁচতে হবে এবং একটি পা কেটে ফেলতে হতে পারে।</p> <p>বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদিন বলেন, চার বছর আগে আতিককে কুপিয়েছিলেন আনিচুর ও তার পরিবার। সেই ঘটনায় মামলা এখনও চলমান রয়েছে। মূলত ন্যায় বিচার না পেয়ে ক্ষোভে প্রতিশোধ নিতে পারে।</p> <p>সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, আনিচুরকে কোপানোর ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আনিচুরের ভাই হাফিজুর রহমান ১৭ জনকে আসামি করে এই মামলা করেছেন। এই ঘটনায় অভিযুক্ত আতিক ফকিরসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।</p>