<p>শ্রম মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর গাজীপুরের কলম্বিয়া মোড় এলাকা থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন টিএনজেড গ্রুপের পাঁচ কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা মহাসড়ক থেকে ঘোষণা দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।</p> <p>শ্রম মন্ত্রণালয়ের আলোচনায় সন্তুষ্ট হয়ে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের বাসন থানার ওসি রাহেদুল ইসলাম।</p> <p>গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন রাত সাড়ে ১০টার পর জানান, শ্রম মন্ত্রণায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী রবিবারের মধ্যে এক মাসের বেতন পরিশোধ করা হবে। বাকি বকেয়া নভেম্বরের ২৮ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন শ্রমিকরা। এখন মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক।</p> <p>এর আগে প্রত্যাহারের এক ঘণ্টা পর ফের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন টিএনজেডের পাঁচ কারখানার শ্রমিকরা। ফলে আবারও স্থবির হয়ে পড়ে পুরো গাজীপুর।</p> <p>অবরোধ শুরুর ৫৩ ঘণ্টা পর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বেতন-ভাতা পরিশোধের ব্যবস্থা নেবেন—এই আশ্বাস দিলে গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে অবরোধ তুলে নিয়েছিলেন শ্রমিকরা। কিছুক্ষণ পরই তাঁরা সিদ্ধান্ত পাল্টান। বেতন নগদ বুঝিয়ে দেওয়া এবং আলোচনার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া শ্রমিক প্রতিনিধিরা ফিরে না আসা পর্যন্ত অবরোধ তুলে নেবে না বলে জানিয়েছিলেন শ্রমিকরা।</p> <p>অবরোধে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো কার্যত অচল ছিল গাজীপুর। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যানজটের প্রভাব পড়ে সংযোগ সড়কগুলোতেও। পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন, অ্যাম্বুল্যান্সসহ অসংখ্য যানবাহন পথে আটকা পড়ে। নিত্যপণ্য ও সবজিবাহী যানবাহনগুলো আটকা পড়ায় বাজারে অনেক পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়।</p> <p>জানা গেছে, গতকাল দুপুরে গাজীপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়া ঘটনাস্থল ভোগড়ার কলম্বিয়া মোড়ে যান। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ইউএনওর মোবাইল ফোনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান শ্রমিকদের উদ্দেশে কথা বলে আগামী রবিবার বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেন। ওই আশ্বাসে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল শুরু হয়। আলোচনার জন্য প্রশাসন ও সেনাবাহিনী ২০ জন শ্রমিক প্রতিনিধিকে সচিবালয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু এক ঘণ্টা পরই শ্রমিকরা ফের মহাসড়ক অবরোধ করেন।</p> <p>শ্রমিকরা জানিয়েছিলেন, তিন দিন ধরে মহাসড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করলেও তাঁরা যানবাহন ভাঙচুর বা ধ্বংসাত্মক কোনো কাজ করেননি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করে ঘরে ফিরবেন তাঁরা।</p> <p>অবরোধের কারণে হাজার হাজার যাত্রী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় নেমে হেঁটে অথবা বিকল্প পথে রাজধানী ঢাকায় যাত্রা করে। আর ঢাকা থেকে আসা উত্তরের জেলাগুলোর যাত্রীরা চন্দ্রা হয়ে বাইপাইল বা গাবতলী হয়ে যাতায়াত করেছে। এতে ভাড়া ও সময় লাগে বেশি। কিছু যানবাহন গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস দিয়ে এবং জয়দেবপুর থেকে বনমালা হয়ে টঙ্গী দিয়ে চলাচল করেছে।</p> <p>মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ-উত্তর) নাজির আহমেদ জানান, দুপুরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্রমিকদের উদ্দেশে মোবাইল ফোনে বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্য মাইকে প্রচার করা হয়। শ্রমসচিব শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, সরকার আগামী রবিবারের মধ্যে ছয় কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে। অন্যান্য দাবি ও পাওনা কিভাবে কবে পরিশোধ করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। এ জন্য শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধিদলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান তিনি। তখন শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন। কিন্তু এক ঘণ্টা পর তাঁরা ফিরে এসে আবারও মহাসড়ক অবরোধ করেন।</p> <p>বাসন থানার ওসি রাহেদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, আলোচনার জন্য ২০ জন শ্রমিক প্রতিনিধি ইউএনও এবং কলকারখানা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকায় গেছেন। তাঁরা ফিরে না আসা পর্যন্ত এবং বেতন না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা।</p>