<p>বছর ছয়েক আগে স্বামী মারা যান আসমা বেগমের। সহায়-সম্বল বলতে স্বামীর রেখে যাওয়া সরকারি জায়গার ওপর দোচালা একটি টিনের ঘর রয়েছে তার। খেয়ে না খেয়ে ওই ঘরেই মাথা গুজে থাকেন তিনি। সম্প্রতি সেই ঘরটি দখলে চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। জায়গা দখলের উদ্দেশে হামলা চালিয়ে বিধবা আসমার বসতবাড়ি ভেঙে চুরমার করে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর বিধবা আসমার অঝোরে কান্নার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। যা নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার ঝড় বইছে। ঘটনাটি ফরিদপুরে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের রসুলপুর বাজার এলাকায় ঘটে।</p> <p>আসমার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিধবা আসমার জায়গা দখলের চেষ্টাকারীর নাম সালাহউদ্দিন কবির। তার বাড়ি একই এলাকায়। তিনি নিজেকে বিএনপির নেতা দাবি করেন।</p> <p>জানা গেছে, অভাবের তাড়নায় ২৫ বছর আগে মুন্সীগঞ্জ থেকে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের রসুলপুর বাজার এলাকায় এসে প্রথমে স্থানীয় প্রভাবশালী সালাহউদ্দিন কবিরের চাচাতো ভাইকে বিয়ে করেন আসমা। পরে আসমার সেই স্বামী মারা গেলে স্থানীয় মফিজ মিয়া নামে আরেক ব্যক্তিকে বিয়ে করে রসুলপুর বাজার এলাকায় কুমার নদের পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গার অপর দোচালা একটি টিনের ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। স্বামী মফিজ অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু গত ৬ বছর আগে আসমার স্বামী মফিজও মারা যান। এরপর থেকে বিধবা আসমা অসহায় অবস্থায় ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="রুট পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দা‌বি‌তে ট্রেন আটকে বি‌ক্ষোভ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/03/1730611335-7151184986aed9f8f418938930271d37.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>রুট পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দা‌বি‌তে ট্রেন আটকে বি‌ক্ষোভ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/03/1442192" target="_blank"> </a></div> </div> <p>আসমা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই জায়গায় ঘর তুলে বসবাস করে আসছি। এই ঘরটা ছাড়া আমার কোনো জায়গা-জমি নেই। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয় প্রভাবশালী সালাহউদ্দিন কবির জাল স্ট্যাম্প দেখিয়ে আমাকে জায়গা খালি করে দিতে বলেন। এতে আমি রাজি না হওয়ায় সালাহউদ্দিন ও তার লোকজন সম্প্রতি আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এখন বাড়ি না ছাড়লে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আমাকে আপনারা রোহিঙ্গাদের মতো একটু থাকার জায়গা করে দেন। আমি আর পারছি না। সালাহউদ্দিন প্রতি শুক্রবার আমার বাড়িতে এসে হুমকি দেয়। তার যন্ত্রণায় আমার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমি নারী মানুষ, কোথায় যাব? আমাকে একটু থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আমার দাবি জোর দাবি জানাচ্ছি।’</p> <p>স্থানীয়রা জানান, সালাহউদ্দীন কবির সাবেক এমপি শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তার কাছ থেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে থেকে অঢেল সম্পদের মালিকও হয়েছেন। বিগত সরকারের পতনের পর সালাহউদ্দিনের সুর পরিবর্তন হয়ে গেছে। তিনি এখন নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করছেন। বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে বিধবা আসমার জায়গা দখলের চেষ্টা করছেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমদানি সমস্যার সমাধান হলে কমবে পেঁয়াজের দাম" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/03/1730612335-d82319912041449cd31bdb7e7569d171.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমদানি সমস্যার সমাধান হলে কমবে পেঁয়াজের দাম</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/03/1442197" target="_blank"> </a></div> </div> <p>অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন কবির বলেন, ‘ওই জমি ও ঘর আমার। ২০১৩ সালে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ওই জায়গাটি আমি কিনে ছিলাম। আসমার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। তিনি রসুলপুরেই থাকতেন। আমি তাকে ওই বাড়িটা ভাড়া দিয়েছিলাম। গত ৬ মাস ধরে আমি আসমাকে বাড়িটা ছেড়ে দিতে বলে আসছি। কিন্তু সে বাড়ি ছাড়ছে না। আমি ওখানে বিল্ডিং করব। স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগের লোকজনের ইন্ধনে আসমা বাড়ি ছাড়ছে না।’</p> <p>সরকারি জায়গা কিভাবে কিনলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রসুলপুর বাজারের সব জায়গায়ই সরকারি। বাজারে যতগুলো দোকান আছে, সব সরকারি জায়গার ওপর। এখানে এভাবে বেচাকেনা হয়।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমি বিএনপি পরিবারের সন্তান। আমি নিজেও বিএনপি করি। আওয়ামী লীগের আমলে স্থানীয় এমপির সঙ্গে তোলা আমার একটা ছবি নিয়ে সবাই এখন রাজনীতি করছে।’</p> <p>আজ রবিবার (৩ নভেম্বর) সকালে নগরকান্দা উপজেলার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কবির বিএনপি করে না। তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। তবে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ অপরাধ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’</p> <p>নগরকান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুম বিল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিধি মোতাবেক সরকারি খাস জায়গা লিজ দেওয়া হয়। তবে সরকারি জায়গা ক্রয়-বিক্রয়ের কোনো সুযোগ নেই।’</p>