<p>প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা। এ উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। কিন্তু এ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও এক বছর ধরে নেই কোনো চালক। এতে সময়মতো চিকিৎসাসেবা নিতে পারছে না উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। এ অবস্থায় সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে এই উপজেলার মানুষকে ভরসা করতে হয় বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স, মাইক্রোবাস অন্য যানবাহনের ওপর। এতে বাড়তি ভাড়া ও চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে রোগীদের।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুল্যান্সচালক প্রায় এক বছর আগে অবসরে যান। এতে চালকশূন্য হয়ে অ্যাম্বুল্যান্স পড়ে আছে। দীর্ঘ এক বছর অতিবাহিত হলেও এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন কোনো অ্যাম্বুল্যান্সচালক পদায়ন না হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গ্যারেজে একটি পড়ে আছে। এতে অ্যাম্বুল্যান্সের যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।</p> <p>মরমি কবি হাছন রাজার জন্মভূমি বিশ্বনাথের রামপাশা। তারই দৌহিত্র দেওয়ার তৈমুর রাজা চৌধুরী ছিলেন একজন মানবতার সেবক। ১৯৭৮ সালে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় অবহেলিত জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবার জন্য উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের কাদিপুর নামক স্থানে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৮৪ সালে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। ২০১৮ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত উদ্বোধন করেন। </p> <p>২০২৩ সালে এ হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা, দেলোয়ার হোসেন যোগদানের পর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে তিনি দিবানিশি পরিশ্রম করে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবার গুণগত মান বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন। ২০০৯ সালে প্রাপ্ত অ্যাম্বুল্যান্সটি পুরনো হওয়ায় এবং চালক পেনশনে যাওয়ায় এক বছর ধরে সেটিও বন্ধ রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুল্যান্স প্রয়োজন। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নকর্মী না থাকায় দুর্গন্ধ, ময়লা-আবর্জনায় বেড, বক্স, টয়লেটসহ আসবাব নষ্ট হচ্ছে। তিনজন ডাক্তার, তিনজন মিডওয়াইফ, ২১ জন নার্স, ৪০ জন স্বাস্থ্যসহকারী, নেই কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য রয়েছে।</p> <p>এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়, সেবাও পায় না ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।</p> <p>সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুতর রোগীদের এখান থেকে স্থানান্তর করা হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। স্থানান্তরিত রোগীদের পরিবহনের জন্য স্বজনদের ছুটতে হয় প্রাইভেট গাড়ির কাছে আর সুযোগ বুঝে প্রাইভেট গাড়িগুলো সরকারি ভাড়ার তুলনায় অনেক বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয়। বিপদে পড়ে বেশি টাকা দিয়েই উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়মিত রোগী নিয়ে যায় স্বজনরা।</p> <p>পালের চক গ্রামের আতিক মিয়া জানান, ‘সপ্তাহখানেক আগে রাতে রোগী নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যাই। রোগীর সমস্যা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সিলেট শহরে যাওয়ার জন্য সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চালক না থাকায় বেশি টাকায় প্রাইভেট মাইক্রো নিয়ে আমাকে যেতে হয়। এতে টাকা বেশি লাগলেও মাইক্রো ম্যানেজ করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।’</p> <p>জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তার এবং অ্যাম্বুল্যান্সচালকের দাবি জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন সুমন বলেন, ‘আমি যোগদানের পর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু ৩১ শয্যার হাসপাতালের জনবল ও যন্ত্রপাতি নিয়ে ৫১ শয্যার হাসপাতালটিতে পরিচালনা করতে হচ্ছে। ডাক্তার না থাকার কারণে চিকিৎসাব্যবস্থায় বাধাপ্রাপ্ত হতে হচ্ছে।’ </p> <p>সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) সুনন্দা রায় বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যদি আমার কাছে কোনো লিখিত দেন তাহলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব।’</p>