<p>সিজারিয়ান ডেলিভারিতে রাবেয়া আক্তার (৩৪) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সিজারিয়ান ডেলিভারি করার ৩০ মিনিটের মধ্যে তার মৃত্যু হয়। গাইনি ডাক্তার না হয়েও চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর বাজারে ‘টাওয়ার হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার (প্রা.) লি.’ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে সিজারিয়ান ডেলিভারি করছেন মো. সারোয়ার জাহান।</p> <p>নিহতকে অপারেশন থিয়েটারে রেখেই আত্মগোপানে যান সারোয়ার জাহান। ঘটনাটি জানাজানি হলে হাসপাতাল এলাকা জুড়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ভীড় করে। পরে স্থানীয় একটি মহলের সহযোগিতা নিয়ে মাত্র পাঁচ লাখ টাকায় বিষয়টি ধামাচাপা দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।</p> <p>রাবেয়া চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের পাঁচধারা গ্রামের আশিকুর রহমান আশুর স্ত্রী। এটা তার তৃতীয় সন্তান প্রসব। ১৫ বছর বয়সী বড় কন্যা সন্তান মাকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছে। নিহতের স্বামী পাঁচ লাখ টাকায় স্ত্রী হত্যার বিচার না চাইলেও সন্তানসহ স্বজনরা বলছেন, ‘টাকা নয়, কসাই ডাক্তারের বিচার চাই’।</p> <p>সংশ্লিষ্টরা জানায়, দোল্লাই নবাবপুর দক্ষিণ বাজারের চার তলা ভবনের ওই হাসপাতালটির কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও রয়েছে ৪০টি শয্যা। এর মধ্যে ১২টি কেবিন রয়েছে। পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পাঁচজন ও স্থানীয় একজনসহ মোট ছয়জন পরিচালকের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে হাসপাতালটি। চিকিৎসার মান ও পরিবেশ নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।</p> <p>স্থানীদের অভিযোগ, চান্দিনা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরের একটি বাজারের ‘টাওয়ার হাসপাতাল’ নামের ওই প্রাইভেট হাসপাতালটিতে অহরহ সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান ডেলিভারিসহ নানা জটিল অপারেশন করা হয়। কিন্তু ওই হাসপাতালে কোনো অভিজ্ঞ ডাক্তার আসে না। এমনকি সিজারিয়ান করার সময়ও কল করে কোনো বিশেষজ্ঞ গাইনি ও এ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তারকে আনা হয় না। </p> <p>স্থানীয়রা আরো বলেন, গ্রামের সহজ সরল মানুষকে বেশির ভাগ ঘটনাই দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে স্থানীয় রাজনৈতিক লোকদের ছত্রছায়াতে ধামাচাপা দেয় তারা। একইভাবে রাবেয়ার মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে তারা।</p> <p>রাবেয়ার স্বামী আশিকুর রহমান আশু জানান, ‘আমরা স্ত্রীর প্রসব ব্যথা হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ওই হাসাপাতালে আনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমার স্ত্রীর সিজারিয়ান ডেলিভারি করে ডাক্তার সারোয়ার জাহান। কিছুক্ষণ পর আমাকে জানান, আমার স্ত্রীর আরো ওষুধ ও রক্ত লাগবে। পাঁচ মিনিট পর বলেন, তারাতারি এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসেন অন্য জায়গায় পাঠাতে হবে। আমার স্ত্রী কী সমস্যা হয়েছে জানতে ওটি রুমে প্রবেশ করতে গেলে আমাদের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি তারা। সন্ধ্যা ৭টার পর আমরা জোর করে ওটি রুমে প্রবেশ করে দেখি আমার স্ত্রীর মুখ ঢেকে রেখেছে তারা। এ সময় ডাক্তারও ছিল না। পরে জানতে পারি, ওই ডাক্তার নাকি গাইনি ডাক্তার না।</p> <p>সরেজমিনে বুধবার ওই হাসপাতালে গিয়ে ছয়জন পরিচালকসহ ডাক্তার সারোয়ার জাহানকেও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর ডা. মো. সারোয়ার জাহান আত্মগোপন করার পাশাপাশি মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায় পরিচালকদেরও।</p> <p>নবাবপুর টাওয়ার হাসপাতাল প্রাইভেট লি.-এর সহকারি পরিচালক মো. সোহাগ জানান, প্রসূতি মারা গেলেও বাচ্চা সুস্থ্য আছে। বাচ্চাটি পার্শ্ববর্তী মেডিনোভা হাসপাতালে ভর্তি আছে। এটি একটি দুর্ঘটনা। এ ঘটনার পর নিহতের পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করেছি। ডাক্তার প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।</p> <p>চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান জানান, ‘ঘটনাটি শুনেছি। তবে নিহত প্রসূতির পরিবারের কেউ কোনো অভিযোগ করেনি আমাদের কাছে। আর ওই হাসপাতালের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।’</p> <p>চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাজমূল হুদা জানান, ‘এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’</p>