<p>উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বারখ্যাত পাবনার কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটে বন্ধ রয়েছে স্পিডবোট চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। দ্রুত সময়ে ঢাকায় যাতায়াতে স্পিডবোট জনপ্রিয় যাত্রীদের কাছে। ফলে বাধ্য হয়ে বর্তমানে লঞ্চ ও ফেরিতে চলাচল করছেন তারা। তবে দ্রুত স্পিডবোট চালু করতে বিআইডব্লিউটিএর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।</p> <p>যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০১৬ সালের দিকে এই নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরির পাশাপাশি স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়। কাজিরহাট থেকে আরিচা নৌরুটের দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। এই রুটে ৪টি ফেরি ও ৯টি লঞ্চ চলাচল করে। তবে সময় কম লাগায় রাজধানীতে যাতায়াতের জন্য স্পিডবোটই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই রুটের যাত্রীদের কাছে। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মানুষ এই রুটে স্পিডবোটে চলাচল করে। ঈদের সময় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার যাত্রী এই রুটে স্পিডবোটে পারাপার হয়।</p> <p>বিগত সরকারের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের লোকজনের মাধ্যমে স্পিডবোটগুলো পরিচালনা করতেন। কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যায় আওয়ামী লীগ নেতারা ও তাদের লোকজন। ফলে সেই দিন থেকে বন্ধ হয়ে যায় স্পিডবোট চলাচল। এমন পরিস্থিতিতে লঞ্চ ও ফেরিতে চলাচল করছেন যাত্রীরা। তবে সময় বেশি লাগায় অস্বস্তিতে পড়েছেন তারা। দাবি জানিয়েছেন দ্রুত স্পিডবোট চালু করার।</p> <p>গতকাল সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) কাজিরহাট ঘাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে বেশ স্রোত। তার মাঝেই আরিচার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে ফেরি ও লঞ্চ। অনেকে ঘাটে এসে স্পিডবোট খুঁজছেন। যারা ফেরি বা লঞ্চে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তেমনি একজন বেড়া উপজেলার মাসুমদিয়া গ্রামের আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় চাকরি করি। মাসে এক-দুবার বাড়ি আসা-যাওয়ায় স্পিডবোটেই যাতায়াত করি। এর কারণ সময় কম লাগে। আজকে ঘাটে এসে জানতে পারি, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ আছে। যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে দ্রুত স্পিডবোট চালু করার দাবি জানাই।’</p> <p>স্পিডবোট না পেয়ে লঞ্চে ঢাকায় যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ব্যবসার প্রয়োজনে প্রায়ই ঢাকায় যেতে হয়। কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটে দূরত্ব কম। দ্রুত ঢাকায় যাওয়া-আসা যায়। আর স্পিডবোটে দেখা যায় ২০-২৫ মিনিট সময় লাগে। অথচ ফেরি বা লঞ্চে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। এই দুর্ভোগ লাঘবে স্পিডবোট থাকলে সুবিধা হয়।’</p> <p>কাজিরহাট ঘাটের স্পিডবোট ব্যবসায়ী ফেরদৌস হোসেন ও আব্দুল বাতেন বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় ১৫ বছর আওয়ামী লীগ নেতারা অবৈধভাবে স্পিডবোট ঘাট পরিচালনা করেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নিয়েছে। এই রুটে যেখানে ২০ থেকে ২৫টি স্পিডবোট চালানো যথেষ্ট। সেখানে তারা ৮০টি স্পিডবোট চালাত। বড় একটা স্পিডবোটে ১৬ জন ধারণাক্ষমতা, সেখানে তারা বেশি টাকার আশায় ২১ জন নিত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে জনবান্ধব স্পিডবোট চালু করতে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’</p> <p>এ বিষয়ে বিআইডাব্লিউটিএ’র নগরবাড়ী-কাজিরহাট-নরাদহ নদীবন্দরের পোর্ট অফিসার মো. আব্দুল ওয়াকিল বলেন, ‘আমরা স্পিডবোট মালিক সমিতির সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। তারা আমাদেরকে বারবার আশ্বস্ত করেও স্পিডবোট চালু করতে পারেননি। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আমরা জানতে পেরেছি, স্পিডবোট মালিকদের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে বিগত সরকারের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ফলে তাদের সবাই এখন আত্মগোপনে চলে গেছেন। এই প্রেক্ষাপটে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে এই রুটে চলাচলকারী সব স্পিডবোটের রুট পারমিট বাতিল করে, নতুনভাবে রুট পারমিট আহ্বান করার জন্য প্রস্তাব করেছি। আমরা দ্রুত স্পিডবোট সেবা চালু করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’</p>