<p>বন্যার পানি কমার পর স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র। আকস্মিক এই বন্যায় পানিতে ভেঙে গেছে শত শত মানুষের ঘর-বাড়ি ও এলাকার রাস্তাঘাট। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত একর কৃষিজমি। বন্যার পানি কমলেও দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ এখনো কাটেনি। ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বন্যাকবলিত এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। এমন চিত্র মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের।</p> <p>মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে বন্যাকবলিত টিলাগাঁও ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া, হাজীপুর গ্রামে গেলে এমন দুর্দশার চিত্র দেখা যায়।</p> <p>বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, অনেকে স্বপ্নের রোপা আমন ধান ও সবজিক্ষেত বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বন্যায় সর্বস্বান্ত কৃষক, মৎস্যজীবী, শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষ পড়েছেন এখন চরম বিপাকে। তাদের ঘর মেরামতে কেউ এগিয়ে আসছে না। ঘর মেরামত করার জন্য তাদের কোনো সামর্থ্য নেই। তারা আক্ষেপ করে বলেন, ত্রাণ নয়, এখন পুনর্বাসন দরকার।<br />  <br /> সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া গ্রামে ২০-২৫টি ঘর পুরো বিধ্বস্ত ও ১৫-১৬টি ঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামের হতদরিদ্র বিধবা মহিলা তরিবুন বেগম (৪৫) নদীর পাড়ে বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, অনেক আগে স্বামীকে হারিয়ে ১৬ বছরের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে আমার দুঃখের সংসার। স্বামী মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে দিনাতিপাত করছেন। ছেলে এতিমখানায় থেকে পড়াশোনা করছে। এরপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। <br />  <br /> একই গ্রামের মহরম উল্লার ছেলে সিএনজি চালক সুজন মিয়া জানান, ‘মিয়ারপাড়ার যে স্থানে প্রায় ৫০০ ফুট বাঁধ ভেঙেছে, ওই বাঁধের নিচে আমাদের ছয় ভাইয়ের পাকার ঘর ছিল। তিন ভাইয়ের পাকা ঘরটি বন্যার পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের আরো তিন ভাইয়ের ঘরের বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’<br />  <br /> সরকারের কাছে পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা কামনা করে দিনমজুর শামীম আহমদ বলেন, ‘বন্যায় আমার কাঁচা ঘরটি ভেঙে গেছে। এখন খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি।’<br />  <br /> এভাবে প্রায় ২৫-৩০টি মাটি ও বেড়ার তৈরি কাঁচা ঘর বন্যার পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। তারা সব কিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। দুর্গত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ চলমান এই কঠিন দুর্যোগে তাদের ঘর পুনর্নির্মাণে সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।<br />  <br /> টিলাগাঁও ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জুনাব আলী বলেন, প্রাথমিকভাবে তালিকা করে দেখা যায়, ওয়ার্ডে অর্ধশতাধিক ঘর পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। আরো ৬০-৭০টি ঘর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।<br />  <br /> ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ঘর পুনর্বাসনে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে টিলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মালিক বলেন, শত শত মানুষের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, মৎস্য খামারসহ অনেক সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তাদের এই ক্ষতি পোষাতে অনেক সময় লাগবে।  ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা সরেজমিন দুর্গত এলাকায় গিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে।<br />  <br /> উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শিমুল আলী বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ৩৫০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আরো কয়েক শতাধিক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা করা হচ্ছে।<br />  <br /> উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার চিত্র সরজমিনে দেখেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। পরবর্তী সময়ে প্রস্তুতকৃত তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। পরে তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, চলমান বন্যায় সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ দুর্গত মানুষদের দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম চলমান আছে।</p>