<p>সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানীতে সহিংসতায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার পাঁচজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের স্বজনরা জানিয়েছে, তারা জীবিকার তাগিতে রাজধানীতে ছিল। তবে কেউ শিক্ষার্থী না। নিহতের দেহ গ্রামে এনে দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।</p> <p>তবে এ বিষয়ে কোনো থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন সহকারী পুলিশ সুপার (চরফ্যাশন সার্কেল) মো. মেহেদী হাসান। তিনি জানান, ঢাকায় নিহত পাঁচ পরিবারের কেউই স্ব স্ব থানায় কোনো অভিযোগ করেনি।</p> <p>এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে অন্য কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদের মধ্যে তিনজন কিশোর ও দুজন যুবক।</p> <p>স্বজনরা জানিয়েছে, ১৭ জুলাই যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়ারুল হকের ছেলে কিশোর সিয়াম (১৫), পরদিন মোহাম্মদপুরে উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের জাফরের ছেলে মো. হোসেন (২৫) নিহত হন। ১৯ জুলাই গুলশানের নতুন বাজার এলাকায় রসুলপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জাফর মাঝির ছেলে বাহাদুর হোসেন মনির (১৬), একই দিনে রামপুরা এলাকায় চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের স্বপনের ছেলে কিশোর সোহাগ (১৫) ও মোহাম্মদপুর এলাকায় চরফ্যাশন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আলমগীর মালের ছেলে মো. হাচনাইন (২৬) নিহত হন। নিহত পাঁচজনই শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাদের গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়েছে। নিহদের পরিবারে এখনো চলছে স্বজন হারানো কান্না। স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাশ যেন ভারী হয়ে উঠেছে।</p> <p>নিহত সিয়ামের মা আঞ্জু বেগম জানান, সিয়ামের বাবা জিয়ারুল হক পাটওয়ারী অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছেলে সিয়াম অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সংসারে অভাব-অনটন দেখে সিয়াম রোজার ঈদের পরে কাজের জন্য ঢাকাতে যায়। সিয়াম ঢাকার গুলিস্তানের ফুটপাতে একটি ব্যাটারির দোকানে কাজ করত। সিয়াম ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামে এসে ২৯ জুন আবার ঢাকায় যায়। ১৭ জুলাই বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিয়াম দোকান বন্ধ করার পর তার সঙ্গে সিয়ামের কথা হয়েছিল। </p> <p>তিনি আরো বলেন, যাত্রাবাড়ীর মাতুইয়ালে একটি ভাড়া বাসায় সিয়াম থাকত। বাসায় ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীর হানিফ ফ্লাইওভারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে সিয়াম গুলিবিদ্ধ হয়। ওই সময় সিয়াম গুলিবিদ্ধ হলে সিয়ামের সঙ্গে থাকা সাকিব নামের আরেকজন সিয়ামের খালাতো ভাই রাসেলকে খবর দেয়। রাসেল ঘটনাস্থল থেকে সিয়ামকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের সামনে তার মৃত্যু হয়।</p> <p>নিহত হোসেনের মা রিনা বেগম জানান, নিহত হোসেন পেশায় একজন ট্রাকচালক ছিলেন। দুই কন্যাসন্তান, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদ এলাকার লাউতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে হোসেন মোহাম্মদপুর চাঁদউদ্যান গেটে ট্রাক বন্ধ করে বাসায় যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। পরদিন তাকে গ্রামের বাড়ি নীলকমল ২ নম্বর ওয়ার্ডে এনে দাফন করা হয়। </p> <p>স্বামী হত্যার বিচার দাবি করে হাসনুর বেগম জানান, পরিবারে আয়-রোজগার করার মতো হোসেন ছাড়া আর কেউ নেই। হোসেনের মৃত্যুতে দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। বাবাকে হারিয়ে আকলিমা (৫) ও সিমা (৩) নামের দুই সন্তান এখন বাকরুদ্ধ। </p> <p>নিহত বাহাদুর হোসেন মনিরের বাবা জাফর মাঝি জানান, চার ভাইয়ের মধ্যে মনির সবার ছোট। তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান ছিলেন। ঢাকার নুরসালা এলাকাতে পরিবার নিয়ে বসবাস করতন। তিনি ১৯ জুলাই শুক্রবার আছরের নামাজের পরে গুলশান নতুন বাজার যান। নতুন বাজার এলাকাতে গুলিবিদ্ধ হন মনির। এই খবর পেয়ে তার ফুফাতো ভাই হাসনাইন ঘটনাস্থল গিয়ে দেখে মনিরের মরদেহ পড় আছে। মরদেহ দেখতে পেয়ে হাসনাইন মনিরের বাবাকে খবর দেয়। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে মনিরের মরদেহ উদ্ধার করে গ্রামের বাড়িতে এনে শনিবার দুপুরে দাফন করেন। পরিবারের ছোট ছেলেকে হারিয়ে শোক যেন থামছেই না তার পরিবারের। এ সময় মনিরের বাবা জাফর মাঝি সরকারের কাছে এ রকম নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানান।</p> <p>নিহত সোহাগের বাবা কৃষক স্বপন জানান, সোহাগ ঢাকার রামপুরা বাঁশতলা এলাকায় বসবাস করত। সে রামপুরা এলাকাতে ফুটপাতে জামাকাপড়ের ব্যবসা করত। ১৯ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় তার দোকানটি দেখার জন্য সে রাস্তায় বের হয়েছিল। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এ সময় স্থানীয় এক যুবক সোহাগের মামা আবুল কাশেমকে খবর দিলে তিনি ঘটনাস্থলে এসে সোহাগের মরদেহ উদ্ধার করে গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করেন। </p> <p>নিহত মো. হাচনাইনের স্ত্রী রুমা বেগম জানান, তার স্বামী হাচনাইন পেশায় একজন আকাশ ডিশলাইন ব্যবসায়ী ছিলেন। হাচনাইন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার স্বামী ১৯ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্যবসায়িক কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ সময় স্থানীয়রা হাসনাইনের ছোট ভাই হোসেনকে খবর দিলে হোসেন হাসনাইনের মরদেহ উদ্ধার করে তার পরদিন শনিবার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। পারিবারিক কবরস্থানে হাসনাইনকে দাফন করা হয়। হাসনাইনের পরিবারের শোক যেন থামছেই না। এই হত্যার বিচার দাবি করেছেন তিনি।</p>