<p>৪০ দিন শূন্য থাকার পর অবশেষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ৬ষ্ঠ  উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী। উপাচার্যের পদ বাদেও আরো প্রায় ৪৬টি প্রশাসনিক পদ ফাঁকা রয়েছে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পরপরই এ সকল প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। যারা বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।</p> <p>শিক্ষকদের এই অংশ পদত্যাগ করলেও আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের আরেকটি অংশ প্রশাসনের পদে আসতে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের আমলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়  বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে এখানে বিএনপি বা সাদা দলপন্থী তেমন শিক্ষক কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নেই বললেই চলে।</p> <p>তাই এই সুযোগে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ তাদের আগের রূপ পরিবর্তন করে সাদা দল গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দুজন শিক্ষকের নেতৃত্বে লোক প্রশাসন বিভাগের একজন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুজন, পরিসংখ্যান বিভাগের একজন, রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের একজন ও মার্কেটিং বিভাগের একজন শিক্ষককে নিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটির গঠনের চেষ্টা চালানো হয়। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় এখনই কমিটি গঠন করছেন না তারা।</p> <p>বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে জানা যায়, নতুন প্রশাসন আসলে শিক্ষকদের মধ্য থেকে যারা দায়িত্ব পাবেন, তাদের বেশিরভাগ শিক্ষকই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এদের মধ্যে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসতে পারেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও আওয়ামীপন্থী নীল দলের সদস্য তুহিন ওয়াদুদ, তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদে ছিলেন। নীল দলের সহসভাপতি ও একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষক উমর ফারুক ও একই বিভাগের শিক্ষক ও নীল দলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আশানুজ্জামান। নীল দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের হারুন-আল-রশিদ, বর্তমানে এ শিক্ষক অর্থ কমিটিরও সদস্য।</p> <p>অন্যদিকে কলা অনুষদের ডীনের দায়িত্ব পালন করছেন নীল দলের সদস্য ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমান। বাংলা বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. সাইদুল হক ও গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও নীল দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন নীল দলের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু ক্লাব বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম।</p> <p>প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন নীল দলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ একই বিভাগের নীল দলের কার্যকরী কমিটির সদস্য গোলাম রব্বানী। এ তালিকা রয়েছেন নীল দলের সদস্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তানজিউল ইসলাম, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের জেসমিন নাহার ঝুমুর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মো. সরোয়ার আহমাদ ও মো. রহমতউল্লাহ এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ফারজানা জান্নাত তসি। </p> <p>এ ছাড়াও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের আরেকটি অংশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের বেশ কয়েকজন শিক্ষকও আসতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক উপ-উপাচার্য সরিফা সালোয়া ডিনা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তাবিউর রহমান প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের আবু রেজা মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ড. নুর আলম সিদ্দিকী, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মো. রফিউল আজম খান ও ড. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, মার্কেটিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মাসুদ-উল- হাসান এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পরিমল চন্দ্র ও প্রভাষক সিরাজাম মুনিরা।</p> <p>এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক কমলেশ চন্দ্র রায়। বর্তমানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীনের দায়িত্ব পালন করছেন এ গ্রুপেরই শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন।</p> <p>তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মাহমুদ কাইসার রাকা বলছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক শুধু তেল দিয়ে চলে ক্ষমতার লোভে, নতুন ভিসি আসলে পল্টি মেরে নতুন রূপ ধারণ করে, সেইসব শিক্ষক যাতে কোনোভাবে প্রশাসনের দায়িত্বে না আসে। চরম আওয়ামী লীগপন্থী কোনো শিক্ষককে প্রশাসনিক দায়িত্বে আমরা শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই চাই না।’</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ইয়ামিন বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত প্রশাসন গঠনের জন্য নতুন ভিসির কাছে তারা দাবি জানাবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে এবং আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ও সক্রিয় দুর্নীতি অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা করে এমন কোনো শিক্ষককেই তারা প্রশাসনে দেখতে চায় না। আওয়ামী লীগ দোসররা এখনো বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে, নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য।</p> <p>ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, যেহেতু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকবৃন্দই আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিয়োগপ্রাপ্ত সেহেতু এসব শিক্ষকবৃন্দের মধ্য থেকেই নতুন উপাচার্য যিনি আসবেন তাদেরকে নিয়েই কাজ করতে হবে। অনেকই দলনিরপেক্ষ এবং মেধাবী শিক্ষক রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের সংস্কৃতি চালু আছে তা হলো যে সরকারের আমলে যিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হন তাকে অনেকটা বাধ্য হয়ে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো দলের ফরম পূরণ করতে হয়। তিনি আরো বলেন, নতুন উপাচার্য আসলে তার উচিত পূর্ববর্তী উপাচার্যদের আমলে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন না তাদের প্রাধান্য দেওয়া, সেই সঙ্গে পূর্বে যারা দায়িত্ব পালনকালে কোনো প্রকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না তাদেরকে সুযোগ দেওয়া উচিত।</p> <p>ইইই বিভাগের সাদা দলের সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক ড. মো ফেরদৌস বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো আওয়ামীপন্থী অনেক শিক্ষক প্রশাসনে আসতে অনেক তোড়জোড় করতেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল কাজ নিজে গবেষণা করা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা। যারা এগুলো করতেছে এদের বিগত কর্মকাণ্ড দেখলেই বুঝা যাবে এরা আসলে কি চাচ্ছেন। আমরা সবাই নতুন একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেছি আমাদের নতুন উপাচার্য মহোদয় এসেছেন। উনি একজন ভালো মানুষ আশা করি ভালো কিছু হবে।</p>