<p>স্ক্রিনিং বলতে বোঝানো হয় একটি পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে কিছু যাচাই বা পর্যালোচনা করা হয়। ইসলামী অর্থনীতিতে স্ক্রিনিং মূলত এমন প্রক্রিয়া, যা ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসা, কম্পানি বা বিনিয়োগকে শরিয়াসম্মত কি না তা নির্ধারণ করা হয়। </p> <p><strong>শরিয়া স্ক্রিনিং কিভাবে কাজ করে?</strong></p> <p>ইসলামী স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে একটি কম্পানির কার্যক্রম ও আর্থিক অবস্থার বিশ্লেষণ করা হয় এবং তা ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী অনুমোদিত কি না তা নিশ্চিত করা হয়। এটি মূলত দুই বা তিন ধাপে বিভক্ত : </p> <p>১. ব্যবসার কার্যক্রম স্ক্রিনিং (Business Activity Screening) : এই ধাপে একটি কম্পানির মূল কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা হয়, যাতে এটি কোনো নিষিদ্ধ (হারাম) কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত না থাকে। যাচাইকৃত বিষয়গুলো :</p> <p>১. হারাম কার্যক্রম থেকে আয় : কম্পানিটি এমন কোনো ব্যবসায় জড়িত কি না, যা শরিয়া অনুযায়ী নিষিদ্ধ, যেমন— </p> <p>ক. মদ বা অ্যালকোহল তৈরি ও বিক্রি। </p> <p>খ. জুয়া বা গ্যাম্বলিং। </p> <p>গ. সুদভিত্তিক ব্যাংকিং বা ফিন্যান্স। </p> <p>ঘ. পর্নোগ্রাফি বা অনৈতিক মিডিয়া।</p> <p>ঙ. শূকরজাত পণ্য উৎপাদন বা বিপণন  ইত্যাদি।</p> <p>২. বিনিয়োগের প্রকৃতি : কম্পানিটি সরাসরি সুদভিত্তিক কোনো বিনিয়োগ করছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়। </p> <p>২. আর্থিক অনুপাত স্ক্রিনিং (Financial Ratio Screening): কম্পানির আর্থিক কার্যক্রম শরিয়া অনুসারে বৈধ কি না তা পর্যালোচনা করা হয়। এটি শরিয়া স্ক্রিনিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।</p> <p><strong>প্রধান পরীক্ষা :</strong></p> <p>১. ঋণ-সম্পদের অনুপাত (Debt-to-Asset Ratio):</p> <p>ক. কম্পানির মোট ঋণের একটি নির্দিষ্ট অংশ যদি সুদভিত্তিক হয়, তবে সেটি শরিয়াবিরোধী হিসেবে বিবেচিত হবে। </p> <p>খ. সাধারণত প্রয়োজন ও বাধ্যবাধকতার সময় মোট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ (৩০-৩৩.৩৩%) পর্যন্ত সুদভিত্তিক ঋণ অনুমোদনযোগ্য। </p> <p>২. হালকা তরল সম্পদ অনুপাত (Liquidity Ratio): </p> <p>কম্পানির মোট সম্পদের মধ্যে তরল সম্পদ (যেমন—নগদ অর্থ, ব্যাংক ডিপোজিট) কী পরিমাণ আছে তা যাচাই করা হয় এবং সেগুলো সুদভিত্তিক সম্পদ কি না তা যাচাই করা হয়।</p> <p>৩. হারাম আয়ের সীমা :</p> <p>বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও ব্যাংকিং বিধি-নিষেধের ফলে বর্তমানেও শতভাগ ইসলামিক ব্যাংকিং পরিচালনা সম্ভব হয় না। তাই প্রয়োজন ও বাধ্যবাধকতার সময় অবৈধ হলেও কিছু লেনদেনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে তারও সীমারেখা রয়েছে।  বেশির ভাগ স্ট্যান্ডার্ডে হারাম আয়ের সীমা সর্বোচ্চ ৫% পর্যন্ত এবং সুদভিত্তিক ঋণসীমা মোট সম্পদের ৩০% পর্যন্ত সুযোগ দিয়েছে ।</p> <p>৩. শেয়ারহোল্ডারদের কার্যক্রম স্ক্রিনিং (Shareholder’s Activity Screening) :</p> <p>কম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের কার্যক্রম এবং পরিচালনার পদ্ধতি শরিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা যাচাই করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়—</p> <p>ক. শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে কোনো হারাম কার্যক্রমের সমর্থন বা অংশগ্রহণ। </p> <p>খ. পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণে শরিয়া নীতির প্রতি সম্মান।</p> <p><strong>স্ক্রিনিং কেন গুরুত্বপূর্ণ?</strong></p> <p>১. শরিয়া অনুসারে বিনিয়োগ : ইসলামের নীতিমালা অনুসারে ব্যবসা পরিচালনা ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে স্ক্রিনিং অপরিহার্য। </p> <p>২. নৈতিক বিনিয়োগ : স্ক্রিনিং নিশ্চিত করে যে বিনিয়োগকারী নৈতিক ও সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ কম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন। </p> <p>৩. বিনিয়োগ ঝুঁকি হ্রাস : শরিয়া স্ক্রিনিং কম্পানির আর্থিক অবস্থার গভীর বিশ্লেষণ করে ঝুঁকি কমিয়ে আনে। </p> <p><strong>স্ক্রিনিংয়ের জন্য ব্যবহৃত স্ট্যান্ডার্ড ১</strong></p> <p>বিশ্বজুড়ে শরিয়া স্ক্রিনিংয়ের জন্য বেশ কয়েকটি মান নির্ধারিত হয়েছে। এগুলো শরিয়ার সাধারণ নীতিগুলোকে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রয়োগ করে। যেমন—  </p> <p>১. AAOIFI (Accounting and Auditing Organization for Islamic Financial Institutions): AAOIFI হলো ১৯৯১ সালে বাহরাইনে প্রতিষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা ইসলামী অর্থনীতির জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড প্রণয়ন করে। এটি শরিয়া স্ক্রিনিংয়ের জন্য নির্ধারিত আন্তর্জাতিক মান। </p> <p>২. MSCI Islamic Index: বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ স্ক্রিনিংয়ের জন্য ব্যবহৃত। </p> <p>৩. FTSE Shariah Index: FTSE-এর মাধ্যমে শরিয়া স্ক্রিনিং। </p> <p>৪. S&P Shariah Indices: মার্কিন কম্পানিগুলোর জন্য শরিয়া স্ক্রিনিং। </p> <p>৫. SAC of Securities Commission Malaysia: মালয়েশিয়ার স্থানীয় কম্পানিগুলোর জন্য বিশেষ স্ক্রিনিং। তবে সবগুলো স্ট্যান্ডার্ডের মান এক নয়। প্রতিটি স্ট্যান্ডার্ড নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও গাইডলাইন নিয়ে কাজ করে। বর্তমানে AAOIFI আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ইসলামী অর্থনীতির জন্য সর্বজনগ্রাহ্য। স্ক্রিনিং হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা বিনিয়োগকারীকে শরিয়াসম্মত এবং নৈতিক বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এটি ইসলামী অর্থনীতির একটি মূল উপাদান, যা সমাজে নৈতিকতার প্রচার ও বৈধ আয়ের সুযোগ করে দেয়।</p>