<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমেরিকার তো বটেই, সারা বিশ্বেরও সেরা গল্পবলিয়েদের একজন রেমন্ড কারভার। জাপানের কথাসাহিত্যিক হারুকি মুরাকামির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিলেন কারভার। কারভারের সঙ্গে মুরাকামির দেখা হয়েছিল আমেরিকায়, কারভারের বাড়িতে। ১৯৮৪ সালের কথা। তখন মুরাকামির বয়স ছিল ৩৫ বছর। ১৯৮২ সালে তাঁর উপন্যাস </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আ ওয়াইল্ড শিপ চেইজ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রকাশ করেন। তবে তখনো তাঁর কোনো লেখা ইংরেজিতে অনূদিত হয়নি। কারভারের কাছে মুরাকামির তখনকার পরিচয় হলো, তিনি শখের বশে কারভারের গল্প জাপানি ভাষায় অনুবাদ করছেন। কারভার সাধারণত লোকজনের সামনে কথা বলার পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতেন। খুব সোজা মনের মানুষ কারভার তাঁর লেখার রুটিনে খানিকটা ব্যতিক্রম ঘটিয়ে মুরাকামির জন্য সময় দিলেন। তিনি ভাবলেন, সুদূর জাপান থেকে একজন মানুষ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পোর্ট এঞ্জেলেসে চলে এসেছেন। তাহলে তাঁকে তো একটু সময় দিতেই হয়। তাঁদের সাক্ষাৎ সম্পর্কে কারভারের স্ত্রী টেস গ্যালাগার উল্লেখ করেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিশুসুলভ মনে রে খুব খুশি হয়ে কৌতূহলী হয়েছিল যে তাঁর লেখা এত দূরের একজন মানুষকে কাছে নিয়ে এসেছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অবশ্য কারভার জানতেন না, মুরাকামি আসলে বেড়াতে এসেছেন। তাঁর প্রিয় লেখকের দেশে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা না করে যাবেন কী করে। যা হোক, ১৯৮২ সালে কারভারের গল্প </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সো মাচ ওয়াটার সো ক্লোজ টু হোম</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রথম মুরাকামির দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি একদম মুগ্ধ হয়ে বুঝতে পারেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ তো একেবারেই নতুন ধরনের কথাসাহিত্য।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বাস্তববাদী হলেও একদম গভীরে প্রবেশ করার ক্ষমতা আছে কারভারের লেখার। সাধারণ বাস্তবতার চেয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত এ লেখার পরিধি। এরপর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্য নিউ ইয়র্কার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পত্রিকায় পড়লেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হয়ার আই</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ম কলিং ফ্রম</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। তখন থেকে শুরু করলেন কারভারের লেখা সংগ্রহ করা, পড়া এবং অনুবাদ করা। মুরাকামি রেমন্ড কারভারের লেখার মধ্যে তাঁকে পথ দেখানোর মতো একটা মানচিত্র দেখতে পান। কারভারের মৃত্যুর পর তাঁর লেখা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আ লিটারারি কমরেড</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রবন্ধে মুরাকামি লেখেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার জীবনে পাওয়া সবচেয়ে মূল্যবান শিক্ষক এবং সবচেয়ে বড় সাহিত্যিক কমরেড ছিলেন রেমন্ড কারভার, তাতে কোনো সন্দেহ কিংবা প্রশ্ন নেই। আমার বিশ্বাস, আমার লেখা হয়তো কারভারের লেখার চেয়ে ভিন্ন দিকে ধাবিত হয়; কিন্তু তাঁর অস্তিত্ব না থাকলে কিংবা তাঁর লেখা আমার নজরে না এলে আমার লেখা বইগুলোর, বিশেষ করে আমার গল্পের বইগুলোর চেহারা অন্য রকম হয়ে থাকত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমেরিকার নর্থওয়েস্টের বিভিন্ন জায়গায় কারভারের সাহিত্যিক পথ এঁকেবেঁকে বিচরণ করেছে। জন্ম ওরেগনে। বাবা করাতকলের কর্মী ছিলেন; মা ছিলেন পরিচারিকা। তিনি বড় হয়েছেন ইয়াকিমিতে। ১৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন এবং বাবার সঙ্গে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী ২০ বছর এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ান। দেদার মদপান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। সপ্তাহান্তে লেখার জন্য সময় রেখে বাকি দিনগুলো বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। শ্রমজীবী মানুষদের সংগ্রাম, পরাজয়, পতন এবং উঠে দাঁড়ানোর কথা বলেন তাঁর গল্পে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুরাকামি এবং তাঁর স্ত্রী ইয়োকো দেখা করেন কারভার এবং তাঁর স্ত্রী টেস গ্যালাগারের সঙ্গে। স্ট্রেইট অব হুয়ান ডি ফুকাতে অবস্থিত কারভারের বাড়ির নাম ছিল স্কাই হাউস। জানালাগুলো বিশাল প্রশস্ত। কারভারের বিশাল অবয়ব দেখে বিস্মিত হয়ে যান মুরাকামি। কারভারের বিশাল বপু এবং বসার ভঙ্গি দেখে মুরাকামির মনে হলো, তিনি জবুথবু হয়ে বসে বোঝাতে চাচ্ছেন, এত বড় শরীর তিনি ইচ্ছে করে চাননি। মুখের ওপর বিব্রতকর একটা চাহনি দেখে মুরাকামির সেটাই মনে হয়েছিল। মুরাকামি নিজেও কারভারের মতোই চুপচাপ এবং লাজুক স্বভাবের। তবু কথাবার্তা বলার সময় কারভার তাঁর মেহমানের দিকে যথেষ্ট মনোযোগ দিলেন। তত দিনে কারভারের ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা ও নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাণভরে মদ পান করার পর হৃদরোগের ঝুঁকিতে ছিলেন কিছুদিন। সে অধ্যায়টা প্রায় কেটে গেছে। ১৯৮১ সালে তাঁর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হোয়াট উই টক অ্যাবাউট হোয়েন উই টক অ্যাবাউট লাভ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এবং তাঁর মাস্টারপিস </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্যাথিড্রাল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রকাশ করে ফেলেছেন। কারভার দম্পতি মুরাকামিদের স্মোক্ড স্যামন এবং ব্ল্যাক টি দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। সেদিনের স্মৃতি নিয়ে তাঁর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্য প্রোজেক্টাইল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কবিতাটা মুরাকামিকে উৎসর্গ করেন কারভার: </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চায়ে চুমুক দিয়ে/নিবিড় ভাবনায় ডুবে হাতড়ে গেলাম/তোমার দেশে আমার বইয়ের পাঠকপ্রিয়তার সম্ভাব্য কারণ।/ বেদনা আর অবমাননার ভেতর/পিছলে পড়ে গিয়ে আমার গল্পে/তুমি ঘটনার সংঘটন আর পৌনঃপুনিকতা খুঁজে পাও।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুরাকামিরা দুই ঘণ্টা ছিলেন কারভারদের বাড়িতে। বিদায়ের সময় রেমন্ড কারভার কথা দিলেন, জাপানে গিয়ে মুরাকামির সঙ্গে দেখা করে তাদের আগমনের বিনিময় করবেন। মুরাকামি বেজায় খুশি হলেন। বাড়ি ফিরে মুরাকামি বড় খাটের অর্ডার দিলেন, যাতে তাঁর আমেরিকার বন্ধু এসে আরামে ঘুমাতে পারেন। কথা রাখতে পারেননি কারভার। তিনি অবশ্য বুঝতে পেরেছিলেন, অতিমাত্রায় মদ পানের কারণে তাঁর বিপদ আসতে পারে। অবশ্য মদের আগে সিগারেট তাঁর শরীরের দখল নিয়ে নেয়। ফুসফুসের ক্যান্সার তাঁকে ধরাশায়ী করে ফেলে। ক্যান্সার মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। ১৯৮৮ সালে তিনি সব ছেড়ে চলে যান। এক লেখকের জন্য আরেক লেখকের রেখে যাওয়া উপহার হিসেবে মুরাকামিকে গ্যালাগার কারভারের এক জোড়া জুতো পাঠান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গুরুর মতো মুরাকামি নিজেও প্রচুর সিগারেট খেতেন এক সময়, দিনে কমপক্ষে তিন প্যাকেট। অবশ্য পরে ছেড়ে দিয়েছেন। শরীরচর্চায়ও মন দিয়েছেন। ম্যারাথন দৌড়েও অংশ নিয়েছেন তিনি। গুরুর বইয়ের নামের সুর বজায় রেখেছেন নিজের বইয়ে : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হোয়াট উই টক অ্যাবাউট হোয়েন উই টক অ্যাবাউট রানিং</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। মুরাকামির মনের ভেতর এখনো রয়ে গেছে বিশাল এক অপ্রাপ্তির পাথর : জীবনে প্রিয় লেখকের সঙ্গে এক দিনই দেখা হয়েছিল। তিনি কল্পনাও করতে পারেননি, কারভার মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে মারা যাবেন। তাঁর সঙ্গে আর দেখা হবে না। সেদিন সাক্ষাতে কারভারকে মুরাকামি বলতেই পারেননি, তিনিও একজন লেখক, রেমন্ড কারভারের ভক্ত লেখক, শিষ্য লেখক।</span></span></span></span></p>