<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাঙালি বীরের জাতি। ইতিহাসের পাতায় লেখা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে আজকের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সবখানেই বাঙালি অকুতোভয় জাতির পরিচয় দিয়েছে। এই প্রজন্ম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়নি, কিন্তু দেশের ক্রান্তিলগ্নে ২০২৪ সালে অপশাসন আর দুর্নীতির হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করে দ্বিতীয় এক স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে। এখন সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্লেটো বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষ যেমন হবে, রাষ্ট্রও তেমনই হবে, মানুষের চরিত্র দ্বারাই রাষ্ট্র গড়ে ওঠে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> একটি দেশের শক্তপোক্ত ভিত গড়তে রাজস্বের বিকল্প নেই। রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের যে চিত্র প্রকাশ করা হয়, তা-ই বাজেট। বাজেট বাস্তবায়ন কেবল সরকারের একার দায়িত্ব নয়। বাজেটের রূপরেখার সাফল্য অর্জনে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য রয়েছে। রাজস্বের জোগানে ব্যবসায়ী এবং ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের কর প্রদানের ক্ষেত্রে আরো আন্তরিক হতে হবে। সম্প্রতি রাজস্ব বিভাগ এক বিশেষ আদেশ জারি করেছে, তাতে বলা হয়েছে সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে প্রদান করতে হবে এবং দেশের সব মোবাইল অপারেটর কম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কয়েকটি বহুজাতিক কম্পানির  কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের আয়করের রিটার্ন অনলাইনে প্রদান করতে বাধ্য থাকবেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/18-11-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="253" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/18-11-2024/2/kalerkantho-ed-2a.jpg" style="float:left" width="350" />তার পরও ইনকাম ট্যাক্সের কথা এলেই আমরা কেমন যেন ভয় পাই, ভেঙে পড়ি। ভাবনাটা এমন যে কষ্টে আয় করা টাকা সব বুঝি ট্যাক্স বিভাগ নিয়ে নিল। আসলে কি তাই? একটু চিন্তা করে দেখুন আয়কর কথাটির মধ্যেই এর অন্তর্নিহিত অর্থ লুকিয়ে আছে। কথাটির মধ্যে দুটি ভাগ আছে। প্রথম ভাগ আয় এবং দ্বিতীয় ভাগ কর। অর্থাৎ আয় হলেই কর আর আয় নেই তো কর নেই। আরো মজার ব্যাপার হলো, আয় হলেই যে ট্যাক্স দিতে হবে এমনটা নয়। রাজস্ব বোর্ড নির্ধারণ করে দিয়েছে ২০২৪-২৫ করবর্ষে একজন পুরুষের তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। মহিলা হলে সেই পরিমাণ আরো ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে করমুক্ত সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ টাকা। এখানেই শেষ নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাঁদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা করা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা আর কোনো ব্যক্তির বয়স যদি ৬৫ বছর বা ততোর্ধ্ব হয়, তবে তাঁর আয়ের করমুক্ত সীমা চার লাখ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">করমুক্ত সীমা অতিক্রম করে করযোগ্য আয় হয়ে থাকলেও করদাতার ভাবনার কিছু নেই। কেননা আধুনিক কর ব্যবস্থায় এমন কিছু নিয়ম করদাতার জন্য উন্মুক্ত রেখেছে, যাতে ওই বাড়তি করের বোঝা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে না হয়। এটিকে বলে করের ওপর রিবেট ব্যবস্থা। অর্থাৎ আপনার উপার্জিত অর্থ থেকে আপনি বিনিয়োগ করবেন এবং তা থেকে লভ্যাংশ আপনিই পাবেন শুধু নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগের কারণে। সংশ্লিষ্ট করবর্ষে বিনিয়োগকৃত টাকার অঙ্কের ওপর রিবেট হিসাব করে করের বোঝা কমিয়ে ফেলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনি বিনিয়োগ করতে পারেন সঞ্চয়পত্র কিনে বা ব্যাংকে ডিপিএস খুলে, জীবন বীমা পলিসি নিয়ে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। যদি আপনি চাকরিজীবী হন, তাহলে বেতন থেকে কেটে নেওয়া প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আপনার জন্য বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হবে। করদাতা যদি সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবী হন, তাহলে নিয়োগকর্তা বেতন থেকে কর হিসেবে যে অর্থ কর্তন করে রাখছেন, তা রিটার্ন দাখিলের সময় হিসাবের সঙ্গে উৎস কর্তিত কর সমন্বয় করে নিতে পারবেন। আয়করের হিসাব দাখিল করতে হয় প্রতি অর্থবছর শেষে ট্যাক্স ডের মধ্যে অর্থাৎ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। কিন্তু কর দায় হ্রাসের চিন্তা বা পরিকল্পনা করতে হয় অর্থবছরের শুরুতেই। তবেই এর সুফল মিলবে করবর্ষে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কর পরিকল্পনা বা ট্যাক্স প্ল্যানের বিষয়ে আপনি যে দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারেন তার কিছু আপনার সামনে উপস্থাপন করছি। যেমন ধরুন, আপনি যদি আপনার ব্যাংক হিসাবে নিয়মবহির্ভূত লেনদেন করেন, তাহলে ট্যাক্স জটিলতায় পড়তে পারেন। তাই ব্যাংক হিসাব পরিচালনায় পরিকল্পনা নিন। আপনি যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে চান, তা সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের ৩০ জুনের মধ্যেই সম্পন্ন করুন নতুবা সুবিধা পাবেন না। সম্পদ ক্রয় বা বিক্রয় করার ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম পরিপালনপূর্বক যথাসম্ভব ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের পরিকল্পনা করুন এবং প্রয়োজনীয় দলিলের কপি সংরক্ষণ করুন। ব্যক্তিগত কোনো ঋণ থাকলে তা তিন বছরের মধ্যে পরিশোধের পরিকল্পনা করুন, তা না হলে পরবর্তী বছরে অবশিষ্ট যা ঋণ হিসেবে থাকবে, তা আপনার আয়ের সঙ্গে যোগ হয়ে করের বোঝা বৃদ্ধি করবে, যা আপনার জন্য মোটেই সুখকর হবে না। ব্যক্তিগত কোনো গাড়ি থাকলে তার অগ্রিম করের ডকুমেন্ট সময়ের মধ্যেই সংগ্রহ করুন, যা আপনার আয়করের হিসাবে কাজে দেবে। কারণ এটি অগ্রিম কর প্রদানের দলিল। আপনার স্ত্রী বা সন্তানের যদি আয়কর ফাইল না থাকে, তাহলে তাদের নামে কোনো সম্পত্তি থাকলে, তা আপনার আয়কর নথিতে কিভাবে প্রদর্শন করবেন এবং কী কী দলিল সংরক্ষণ করবেন তার ব্যবস্থা নিন। বিদেশ থেকে মা-বাবা, ভাই-বোন বা অন্য কোনো আত্মীয় টাকা পাঠালে তার ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করুন। প্রয়োজনীয় দলিলের অভাবে করমুক্ত এই অর্থ নাকচ হয়ে করযুক্ত হয়ে যেতে পারে। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো টাকা বৈধ বলে বিবেচিত হবে না, যাকে প্রচলিত ভাষায় বলা যায় ব্ল্যাক মানি অর্থাৎ কালো টাকা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্রয়, উপহার বা উত্তরাধিকার বা অন্য যেকোনো সূত্রে যদি সম্পদপ্রাপ্ত হন, তাহলে সংশ্লিষ্ট বছরেরই তা আয়কর নথিতে প্রদর্শন করুন এবং দলিল সংরক্ষণ করুন নতুবা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। গয়না বিক্রির প্রয়োজন হলে তা সঠিক নিয়ম পরিপালন করে প্রয়োজনীয় ভাউচার সংরক্ষণে রাখুন। বিক্রয়ের নিয়মে ব্যত্যয় ঘটলে গয়না বিক্রয় বিবেচনায় বাদ পড়ে যেতে পারে আর আপনি পড়তে পারেন অহেতুক বিড়ম্বনায়। তাই গয়না বিক্রিতে সতর্ক হোন। আয়কর রিটার্ন আপনার বার্ষিক আয়-ব্যয় এবং সম্পদের একটি প্রদর্শনী দলিল। আপনার সম্পদের যথাযথ পরিচর্যা আপনাকেই করতে হবে। তাই এই দলিল (রিটার্ন) প্রস্তুতে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করুন। কেননা আয়কর রিটার্নে ভুলভাবে বা চতুরতার আশ্রয় নিয়ে সঠিক নয় এমন কোনো তথ্য উপস্থাপনের খেসারত আপনাকেই দিতে হবে। রাজস্ব বিভাগ সময়ে সময়ে এসআরও জারি করে রাজস্ব আইনে যেসব পরিবর্তন করে সে সম্পর্কে একজন ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা ওয়াকিফহাল না-ও থাকতে পারেন। তাই প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কর আইনজীবীর সহায়তা নিয়ে রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">করোনা মহামারি বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামোকে বিপর্যস্ত করেছে। কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগকে সংকুচিত করে ফেলেছে। লকডাউন, শাটডাউন, কোয়ারেন্টিন, সামাজিক দূরত্ব</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই শব্দগুলো আগে কখনো শুনিনি, যা আমাদের জীবনের গতি শ্লথ করে দিয়েছে। মানুষকে ভালোবাসার মধ্যে আনন্দ আছে। নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ পায়। আমরা নিজের সম্মান বৃদ্ধির জন্যও অনেক সময় অর্থের অপব্যয় ঘটিয়ে থাকি। কিন্তু যদি প্রতিবেশী ভালো না থাকে, তাহলে একবার ভাবুন তো আপনার অর্থবিত্ত কি কলঙ্কিত হবে না? সম্মানিত করদাতাদের প্রতি তাই অনুরোধ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরকারের রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা দিয়ে দিন। কারণ এটি আপনার একটি দায়। সময়মতো কর পরিশোধ করে আপনি দায়মুক্ত হোন এবং সরকারের হাতকে শক্তিশালী করুন; তবেই তো মানবতার জন্য ব্যয় করার পথ সুদৃঢ় হবে। রাষ্ট্র সংস্কারে আপনার প্রদেয় রাজস্ব রাষ্ট্রের কোষাগারে প্রদান করে আপনিও হতে পারেন এ সময়ের শুদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের যোদ্ধা। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আপনার নামটি উচ্চারিত হবে সম্মানের সঙ্গে। ইতিহাস আপনার হয়ে সাক্ষ্য দেবে আপনি একজন বৈষম্যহীন সুন্দর সমৃদ্ধ দেশ গড়ার সৈনিক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : কর আইনজীবী</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">leon75bd@gmail.com</span></span></span></span></p> <p> </p>