<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব সংসারেই প্রতিদিন চিনির প্রয়োজন হয়, প্রয়োজন নানা মিষ্টান্ন তৈরিতেও। সেই মিষ্টি চিনি কারো কারো কাছে তেতো মনে হয়। বাজারে গিয়ে সাধারণ ক্রেতারা চাহিদামতো চিনি কিনতে পারছে না। খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে চিনির দাম ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা ছিল। সরকার প্রতি কেজিতে কমবেশি ১১ টাকা শুল্ক-কর কমিয়েছে। এতে এখন চিনির দাম কমে প্রতি কেজি ১১৫ তেকে ১২০ টাকা বা তারও কম হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর চিনির দাম ১০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ১২৫ টাকায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্রমাগত লোকসান দিয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের চিনিকলগুলো। দেশে চিনির উৎপাদন অতি সামান্য। বাজার চলছে আমদানি করা চিনি দিয়ে। এ বিষয়ে চিনিশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা নানা কথা বলেছেন। প্রস্তাবও আছে অনেকের। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের অবহেলায় চিনিশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মিলগুলোতে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ। অতীতে প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম পরিমাণ চিনি উৎপাদিত হয়েছে দেশের ১৫টি সরকারি চিনিকলে। লোকসানের কারণ হিসেবে বলা হয়, অনিয়ম, দুর্নীতি, দক্ষ শ্রমিকের অভাব, অপ্রয়োজনীয় লোকবল, ভালো জাতের আখের অভাব, বিকল্প ব্যবস্থায় মিলগুলো সারা বছর চালু না রাখতে পারা, পুরনো যন্ত্রাংশ, কারখানার আধুনিকায়ন না করা, বেসরকারি চিনিকলগুলোর সরকারি বিধি না মানা ও অবাধে তরল অপরিশোধিত চিনি আমদানির সুযোগ দেওয়া প্রভৃতি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিনি তৈরির প্রধান উপকরণ আখ। আমাদের দেশে ছোট-বড় প্রায় সবাই আখের রসের স্বাদ গ্রহণ করেছে। ছোবড়াযুক্ত আখের ভেতর সুমিষ্ট রস গ্রীষ্মকালে অতিশয় তৃপ্তিদায়ক। আখ অর্থকরী ফসল হলেও বাংলাদেশে বেশি জমিতে আখের চাষ হয় না। আখ দিয়ে প্রধানত চিনি তৈরি হয়। কিছু আখ যায় গুড় তৈরির কলে। আর সামান্য কিছু বাজারে নেওয়া হয় খাওয়ার জন্য। পৃথিবীর প্রায় ১০০ দেশে আখের চাষ হয়। তবে প্রধান আখ উৎপন্নকারী দেশগুলো হচ্ছে ভারত, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, বার্বাডোজ, চীন, কিউবা, মেক্সিকো, মিসর, জ্যামাইকা, পেরু, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই, ফ্লোরিডা ও লুসিয়ানা। বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ ৭৭ হাজার একর জমিতে আখের চাষ হয় এবং বার্ষিক উৎপাদিত হয় প্রায় ৫৫ লাখ ১১ হাজার টন। এই উৎপাদন দেশের চাহিদার তুলনায় বেশ কম। কিন্তু বর্তমানে আখের চাষ অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে চিনির চাহিদা বছরে প্রায় ২২ লাখ টন। সরকারি মিলে উৎপাদিত হয় এক লাখ টনেরও কম চিনি। অবশিষ্ট ২১ লাখ টন চিনি আমদানি করা হয়। ১৫টি চিনিকলের সব কটিই পুরনো। এর মধ্যে তিনটি নির্মিত ব্রিটিশ আমলে, ৯টি পাকিস্তান আমলে এবং তিনটি স্বাধীনতার পর। এগুলোর মোট উৎপাদনক্ষমতা দুই লাখ ১০ হাজার টন। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে সরকারি মোট ১৫টি চিনিকল রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টির কার্যক্রম বন্ধ। এগুলো হচ্ছে কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, শ্যামপুর (রংপুর), রংপুর ও সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) চিনিকল। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বন্ধ থাকা চিনিকলগুলোর বেশির ভাগই বর্তমানে উৎপাদনের উপযোগী অবস্থায় নেই। আর দীর্ঘ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকায় চিনিকলসংশ্লিষ্ট এলাকায় আখের উৎপাদনও কমেছে। চিনি গবেষক মোশাহিদা সুলতানা বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দিতেই চিনিকলগুলোকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। সাধারণ জনগণের কথা সরকারের ভাবনায় ছিল না। ওই সরকার ছিল ব্যবসায়ীবান্ধব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেশির ভাগ মিলের যন্ত্রাংশ পুরনো, জরাজীর্ণ। দক্ষ জনবল নেই বললেই চলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি চলে অবাধেই। মিলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, লোকসানের প্রধান কারণ চিনির উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হওয়া। এভাবে চলতে থাকলে অন্য মিলগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংগত কারণেই এখন এর বিকল্প ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অনেক আগে থেকেই সংবাদমাধ্যমে লেখা হচ্ছে। শ্রমিক ও আখ চাষি সংগঠনগুলো নানা প্রস্তাব দিয়েছে এবং দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিনি উৎপাদন কম হওয়ার আরেকটি কারণ উন্নত জাতের আখের অভাব। আখ একটি লাভজনক ফসল হলেও দীর্ঘ মেয়াদের কারণে চাষিদের কাছে তেমন গুরুত্ব পায় না। বাংলাদেশে আখের ফলনও কম। চিনিকল এলাকায় ফলন প্রতি হেক্টরে মাত্র ৫০ টন, যদিও ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত সর্বশেষ জাতের আখের হেক্টরপ্রতি ফলন ১৫০ টন। কিন্তু ওই জাতের আখের বীজ এখনো চাষিদের নাগালের বাইরে। চাষিরা নিজেদের জমিতে উৎপাদিত পুরনো জাতের আখের বীজই ব্যবহার করছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সাংবাদিক </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><a href="mailto:rezaul.bd1956@gmail.com" style="color:blue; text-decoration:underline">rezaul.bd1956@gmail.com</a></span></span></span></span></p> <p> </p>