<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জগেজাড়া শাসনপদ্ধতির পরিবর্তন-পরিমার্জন ইত্যাদি নিয়ে তোড়জোড় কম হয় না। বাইরের দৃষ্টিতে এটা শুভলক্ষণ। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রার্থী উভয় দলই প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। এর শুভান্তিক কল্যাণ কোথায় তা নিয়ে কেউ সিদ্ধান্তে আসতে পারে না। এর কারণ যেভাবেই চিহ্নিত করা হোক না কেন, ব্যক্তির কামনা-বাসনা কখনো সমষ্টির হয়। আবার হারিয়ে যায়। মানব শাসনের এই পরিণতি মানুষকে বহুধাবিভক্ত করে। এখান থেকে মুক্ত হতে না পারাটাই হলো মানবভাগ্যের ট্র্যাজেডি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা একটা উদ্দেশ্য সামনে রেখে সংগ্রামে রত হই, এতে জনকল্যাণের মানসিকতা বাইরে যতটুকু প্রদর্শিত হয়, ভেতরে ব্যক্তির উন্নতি, খ্যাতি, যশের লিপ্সা বেশি থাকে বলে তা স্থায়ী হয় না। আমাদের আচরণ নম্র থাকে বাইরে; কিন্তু ভেতরে থাকে কঠিন। এই কঠিনকে সবার গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সাধনা চলে নিরন্তর। সাধনায় সিদ্ধিলাভ হলে স্বরূপে ফিরে আসে। এ জন্য স্থায়ী শান্তির দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেকে ধর্ম এবং কেউ কেউ মতবাদ দিয়ে স্থায়ী শান্তির পথ খোঁজেন। মনে রাখা ভালো, মতবাদে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় যেসব নীতি নির্ধারিত ছিল, এখনো আছে, তার কোনটি অভ্রান্ত তা আমরা পরখ করিনি। শুধু ক্ষমতা ব্যক্তিস্বার্থ মনে রেখে দ্বিচারণ করে এসেছি। ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মূল কারণ নেতা যা করবেন, বলবেন তা অভ্রান্ত! এমনটি হলে সাধারণ মানুষ তা মেনে নেবে কত দিন! কিছুদিন শক্ত শাসনে মুখ বন্ধ রাখবে। তারপর ভুক্তভোগীরা জেগে উঠবে। আমরা এ বিষয়টি যদি জাগ্রতভাবে ভাবতাম, তবে কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে ছিদ্রান্বেষণ হতো না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটা বিষয় লক্ষণীয়, কোনো ব্যক্তির উচ্চাভিলাষ তাকে নানা কিসিমের অভিনয়ে দক্ষ করে তোলে অথবা বংশানুক্রমিক সুবিধাভোগের অভিপ্রায় তাকে অভিনয় শেখায়। অভিনয় ও স্বতঃস্ফূর্ততার মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা সবার কাছে ধরা পড়ে না। ধরা পড়লে আর নিস্তার থাকে না। ধরা পড়া-না পড়ার কৌশল যার কাছে যত বেশি জ্ঞাত, তারাই দীর্ঘস্থায়ী থাকতে পারে। আমরা ওসবের খোঁজ নিতে যাব না। ছা-পোষা মানুষ লবণ-পান্তার জোগাড়কেই বড় করে দেখি। মাঝেমধ্যে পলান্নের লোভে আমরা দলিত হই। ভুল হয় তখনই। তবে কোথায় হবে আমার স্থান! এ নিয়ে ভেবে দেখার অবধি নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সততার বিষয়টি অনেকটা আপেক্ষিক। এই আপেক্ষিকতা কাটিয়ে উঠলে কী হতো বলা যায় না। তবে সততার একটা নিজস্ব মূল্য আছে। শুধু ব্যক্তির নয়, গোটা জাতির সে ইতিহাস খোঁজার ফল কোথায়? আমরা ব্যক্তিগতভাবে সৎ থাকতে চাই; কিন্তু সন্ততি আর চেলাদের প্রশ্রয় দিতে গিয়ে সাগরচুরিকে হিসাববহির্ভূত রাখি। এরা এবং এদের উত্তরপুরুষদের অযোগ্যতার শিরোমণিকে সমাজের উচ্চশিরে বসাই, তখনই শুরু হয় বিপর্যয়। এ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সহজ হয় না। শাসন-শোষণ-তোষণ চলে নিজের গতিতে, তবে তা স্বাভাবিক নয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ অস্বাভাবিকতা আমরা ইতিহাসের পাতা খুঁজলেই পাব। অথচ এখান থেকে আমরা কোনো শিক্ষা নিই না। নিলে আমাদের খোলস ছিঁড়ে যাবে। তাই শাসন-শোষণ-তোষণের সূত্রগুলো এমনিভাবেই চলে আসছে। আমরা তেমন ভাবিত হই না। আর ভাবলেও অতিকল্পনার জগতে বিরাজ করি। নিজে পালন না করে অপরকে পালনের নির্দেশ ঠুকি। বিপর্যয় আর বিড়ম্বনা এখানেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বংশানুক্রমিক ক্ষমতা আর প্রকাশ্যে নেই। এসেছে নির্বাচন নামের নতুন প্রক্রিয়া। এই নির্বাচন এলে আমরা পরিবর্তন হতে থাকি। আচার-আচরণ, বিশেষ করে লোকধর্মে বেশি করে মনোনিবেশ করি। দুধ দিয়ে গোসল করে পবিত্র সেজে নতুন একটা দলে নিবিষ্ট হই। মানবধর্ম দূর থেকে হাসে। অথচ শাসনের শিরোমণি মানবধর্ম। মানবধর্ম এগিয়ে চললে কৃত্রিম বিপর্যয় এগিয়ে আসবে। মানবধর্মের ওপর আস্থা রাখতে না পারলে যাবতীয় আড়ম্বর ধূলিসাৎ হতে বাধ্য। সুতরাং শাসনে-শোষণে লোক-দেখানো ধর্ম কাজের চেয়ে মানবধর্মে আত্মনিয়োগ ব্যক্তি অথবা সমাজের জন্য কল্যাণের। এ সত্য মানতেই হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা কবে মানব হব! এ যে একটা সভ্য জাতির তুল্যমূল্য। একে অস্বীকার করার অর্থ নিজের অস্তিত্বের অবলুপ্তি ঘটানো। এই অবলুপ্তির পথে কেউ কেউ ঘুরে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়ার জন্য নতুন করে গণতন্ত্রের ফেরি নিয়ে ঘুরছে আর সংঘাতের পথে উসকানি দিচ্ছে। এদের স্বরূপ চিনিয়ে দিতে পারলেই আমরা মানব হয়ে ওঠার পথ পরিষ্কার দেখতে পাব।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সাবেক শিক্ষক, রাজশাহী কলেজ</span></span></span></span></p> <p> </p>