<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধারণ দুটি ক্ষেত্রে হার্ট ফেইলিওরের ঘটনা ঘটে। একটি হৃদরোগ আক্রান্ত রোগীর হার্ট ফেইলিওর হতে পারে। আবার কারো ফুসফুসে হঠাৎ করে পানি চলে এলে এটি ঘটে থাকে, যেটাকে বলে অ্যাকিউট হার্ট ফেইলিওর। অ্যাকিউট হার্ট ফেইলিওরের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এটিতে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। এটির ক্ষেত্রে প্রথমেই কারণ জানা দরকার যে ফুসফুসে পানি কেন এসেছে। কয়েকটি রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, হার্ট ফেইলিওরের ফলে যখন রোগীর হৃৎপিণ্ডে রক্ত জমাট বেঁধে কোনো একটি রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়। অথবা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। রক্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই অংশে পচন ধরতে শুরু করে। এর ফলে বুকে ব্যথা শুরু হয়, বুক চেপে আসে। পাশাপাশি শরীর খুব বেশি ঘেমে যায়, অনেক ভয় হয় রোগীর।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ধরনের সমস্য নিয়ে যখন রোগীরা হাসপাতালে আসে আমরা তৎক্ষণাৎ তার রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করি। ইসিজির মাধ্যমে তার হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাব্যতা নির্ণয় করি। যদি সম্ভবনা থাকে তাহলে রোগীর আত্মীয়-স্বজনকে সব বিস্তারিত জানাই এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া রক্তনালী খোলার উদ্যোগ নেই। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুযায়ী দুটি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। একটি হলো ওষুধ এবং অন্যটি রিং পরানো হয়। বিশ্বজুড়ে রিং স্থাপনের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যাওয়া নালি খুলে দেওয়ার চিকিৎসাটি বহুল প্রচলিত। রিং পরালেই যে সব রোগী ভালো হয়ে যাবে এমনটা নয়। ৯৭ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে রক্তনালি খুলে দেওয়া যায়। এটি যত দ্রুত করা যায় রোগীর হার্টের পেশি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ততটা কমে আসে। আগেই বলেছি, রোগীর হার্টের পেশি দুর্বল হয়ে গেলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের আশঙ্কা থাকে। হৃৎস্পন্দন কমে যাওয়ার কারণে ফুসফুসে পানি আসার প্রবণতা বেড়ে যায়। যত দ্রুত রক্তনালি খুলে দেওয়া যাবে রোগীর সেরে ওঠার সম্ভাবনা ততটা বাড়বে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে বিভিন্ন কারণে রক্তনালি খুলে দেওয়াটা সহজ হয় না। এক. রোগী সময়মতো বুঝতে পারে না। দুই. বিভিন্ন কারণে রোগী হাসপাতালে আসতে দেরি করে। তিন. রোগী নিজের অবস্থান বুঝতে না পেরে ভয় পেয়ে দেরি করে। সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো আর্থিক অসচ্ছলতা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যদি রক্তনালি বন্ধ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে খুলে দেওয়া যায় তবে পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এরপর যত দেরি হয় হার্টের পেশি নষ্ট হতে শুরু করে। ১২ ঘণ্টা পর হার্টের বেশির ভাগ পেশি নষ্ট হয়ে যায়। তখন এনজিওগ্রাম করে ও রিং বসিয়ে খুব বেশি উপকার পাওয়া যায় না। কাজেই সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হার্ট অ্যাটাক হলে বুকজুড়ে তীব্র ব্যথা হয় এবং বুক চেপে আসবে। প্রচণ্ড ঘাম হবে, ভয় লাগবে। কখনো কখনো ব্যথা চোয়াল ও হাতেও চলে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। কাছাকাছি যে হাসপাতাল রয়েছে সেখানেই যাওয়া উচিত, যেন প্রাথমিক চিকিৎসাটা যত দ্রুত সম্ভব করা যায়। এ ধরনের রোগী যখন আমাদের হাসপাতালে আসে তখন আমরা রোগীকে জরুরি বিভাগে পাঠাই। রোগীর ভাইটালসগুলো (রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন) দেখি। একটি মেশিনের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে তার হৃৎস্পন্দন পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং দ্রুত ইসিজি করা হয়, যেটিতে হার্ট অ্যাটাকের চিহ্ন পাওয়া যায়। নিশ্চিত হওয়ার জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে পাঠিয়ে দিই। এরপর চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ধারণের উদ্যোগ নিই। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধারণত হার্টে যখন রক্ত সঞ্চালনকারী কোনো নালি প্রায় ১০০ শতাংশ বন্ধ হয় তখন আমরা সেটাকে হার্ট অ্যাটাক বলি। হার্টের যে এলাকার নালি বন্ধ হয় সে এলাকার পেশিতে পচন ধরতে শুরু করে। কারণ রক্তের মাধ্যমে টিস্যুগুলো প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পেয়ে থাকে। পচন ধরলে তখন ব্যথা শুরু হবে। পচন ঠেকানোর জন্য রক্তনালিগুলো দ্রুত খুলে দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে আমরা রক্তনালির ব্লক খুলতে ওষুধ প্রয়োগ করতাম। তবে সেটি সব ধরনের রোগীর জন্য কাজ করত না। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এটি কাজ করে। বাকি ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগীর জন্য এটি কাজ করে না। ফলে তাদের পূর্ণাঙ্গভাবে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থেকে যায়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেশ কয়েক বছর হয়েছে চিকিৎসাপদ্ধতি উন্নত হয়েছে। এখন আমরা এনজিওগ্রাম করে রক্তনালি আটকে যাওয়ার জায়গাটি চিহ্নিত করি। এরপর রক্তজমাট সাকশন ক্যাথেটার দিয়ে পরিষ্কার করে সেখানে রিং স্থাপন করি। প্রায় ৯৭ শতাংশ রোগীই এ চিকিৎসায় উপকৃত হয় এবং এটা যত তাড়াতাড়ি করব সেটা রোগীর জন্য ততই ভালো। আমারা আমাদের ভাষায় বলি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টাইম ইজ মাসল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। অর্থাৎ সময় যত বেশি যাবে ততই ক্ষতি বাড়ব।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এতে হার্টের পেশি ঠিক হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রোগীর এসংক্রান্ত মৃত্যুঝুঁকি কমে যায়। হার্টের মাসল নষ্ট হয়ে গেলে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যাবে। রোগীর ফুসফুসে পানি এসে যাবে এবং এতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাবে। আরো কিছু সমস্যা হতে পারে, যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হার্টের ভালভ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আরেকটা বড় সমস্যা হলো হার্ট যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ জন্য সারা বিশ্বেই চিকিৎসকরা রক্তনালি দ্রুত খুলে দেওয়ার ওপর জোর দেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রান্তিক অঞ্চলে রিং বসানোর সুবিধা নেই। সে ক্ষেত্রে ওই এলাকার রোগীদের স্টেটোকাইনিস বা রক্তনালির জমাটকে গলিয়ে দেওয়ার ওষুধ দিতে হবে। এরপর ওই রোগীকে অতিদ্রুত রিং স্থাপন করা যায় এমন হাসপাতালে নিতে হবে । তবে অবশ্যই ওষুধ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিং বসাতে হবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ চিকিৎসার প্রসেসে কোনো ঝুঁকি নেই। তবে চিকিৎসা নিতে গেলে হার্ট অ্যাটাক একটি বড় ঝুঁকি। অনেক সময় রোগীর কার্ডিয়াক মাসল দ্রুত নষ্ট হয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়। এতে রোগীর মৃত্যু ঘটে। সে ক্ষেত্রেও সময় গুরুত্বপূর্ণ। যত দ্রুত রক্তনালি খুলে দেওয়া যায়, ঝুঁকির আশঙ্কাও তত কম থাকে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : </span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিনিয়র</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কনসালট্যান্ট, কার্ডিওলজি<br /> ইউনাইটেড হাসপাতাল </span></span></span></span></span></p>