<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে এক দশক ধরে তৈরি করা কাগজপত্র দিয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন দুই ব্যক্তি। এ ঘটনায় ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি আনোয়ার হোসেন ও মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় পাসপোর্ট আইনে মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পুলিশ ওই দুজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। আর ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর তাঁদের দুজনের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জব্দ তালিকার একজন সাধারণ সাক্ষীকে উপস্থাপন করা হয়। তবে কোনো কারণ ছাড়াই এই মামলার এজাহারকারী এবং তদন্ত কর্মকর্তাসহ অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য সাক্ষীদের উপস্থাপন করা হয়নি। কেন করা হয়নি সে বিষয়েও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। পরে মামলাটি পুরনো হওয়ার কারণ দেখিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার দায় থেকে খালাস দেওয়া হয় তাঁদের। একইভাবে গত দুই বছরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের দেওয়া রায়ে ৭৮ শতাংশ আসামি খালাস পেয়েছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাক্ষী হিসেবে তদন্তকারী কর্মকর্তা কেন আদালতে এলেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এটি খতিয়ে দেখতে হবে। এভাবে মামলা নিষ্পত্তি হলে তো বাদী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। এর জন্য পুলিশ ও প্রসিকিউশন বিভাগের গাফিলতির বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা আইনজীবীদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত দুই বছরে ঢাকার সিএমএম আদালতে ২২ হাজার ৪০৫টি মামলা রায়ে নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব মামলায় ২২ হাজার ৬০০ জন আসামি ছিলেন। এর মধ্যে রায়ে ১৭ হাজার ৬২৬ জন আসামি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। এই হিসাবে ৭৮ শতাংশ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে চার হাজার ৯৭৪ জন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও দেওয়া হয়েছে, যা মোট আসামির হিসাবে ২২ শতাংশ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে পাঁচ হাজার ২১৮টি মামলা রায়ে নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব মামলায় মোট পাঁচ হাজার ২৯৪ জন আসামির মধ্যে এক হাজার ৩১৫ জনের সাজা হয়েছে। আর খালাস পেয়েছেন তিন হাজার ৯৭৯ জন আসামি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৪৬৮, ফেব্রুয়ারিতে ৬১৩, মার্চে ৫৬২, এপ্রিলে ৪০২, মে মাসে ৫৯০, জুনে ৪৬৫, জুলাইয়ে ৫০৪ ও আগস্টে ৩৭৫ জন আসামি খালাস পেয়েছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তার আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে পাঁচ হাজার ৭১৭টি মামলা রায়ে নিষ্পত্তি হয়। এতে এক হাজার ৩০ জন আসামির সাজা হয়। আর চার হাজার ৬৯১ জন আসামি খালাস পান। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৩২৮, অক্টোবরে এক হাজার ১৮৩, নভেম্বরে এক হাজার ২৮৪ ও ডিসেম্বরে ৮৯৬ জন আসামি খালাস পেয়েছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ হাজার ৪৭০টি মামলা রায়ে নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৬২৯ জন আসামির সাজা হয়। এসব মামলায় আট হাজার ৯৫৬ জন আসামি বেকসুর খালাস পান। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৮২৩, ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ২৪৫, মার্চে ৭৮০, এপ্রিলে ৪৫৭, মে মাসে ৫১৭, জুনে ৭৩২, জুলাইয়ে ৮১৯, আগস্টে ৯২৪, সেপ্টেম্বরে ৭০০, অক্টোবরে ৭৪৫, নভেম্বরে ৭১৬ ও ডিসেম্বরে ৪৯৮ জন খালাস পেয়েছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইনজ্ঞরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তদন্তে দুর্বলতা রেখে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। মামলার বাদী ও আসামিপক্ষ আপস-মীমাংসা করে। এতে বাদী আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে চান না। অনেক সময় অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েও সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয় না। ঠিকানা বদল করায় পাবলিক সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার সাক্ষ্য দিতে এলেও ঘটনার বিষয়ে কিছু বলতে পারেন না। রাষ্ট্রপক্ষও গাছাড়া ভাব নিয়ে আদালতে কাজ করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেন না। একপর্যায়ে সাক্ষীর অভাবে মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হয় না। পরে আসামিরা অনায়াসে খালাস পেয়ে যান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বা পুলিশ সদস্যরা আদালতে নিজেরা সাক্ষ্য দেন। পাশাপাশি অন্য সাক্ষীদের আদালতে হাজিরে সহযোগিতা করেন। কেউ যদি নির্দেশনা পেয়েও সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত না হন, সে ক্ষেত্রে আদালত ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে আমরা সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে চেষ্টা করি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিগত দিনে রাজনৈতিক মামলা ছাড়া অন্য কোনো মামলার বিচারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যারা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন, তাঁরাও এসব মামলা তদারকি করেননি। রাজনৈতিক মামলায় সাজা দিতেই তাঁরা মনোযোগী ছিলেন। বর্তমানে সব মামলায় সমান গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হবে। সাক্ষী হাজিরে দরকার হলে একটা সেল গঠন করতে হবে। তাহলে বিচার প্রক্রিয়ায় মানুষের আস্থা ফিরবে।</span></span></span></span></p>