<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সোনারগাঁর কাঁচপুরে একটি চায়ের দোকানে সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় বিভিন্ন পেশার ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ বসে চা পান করছিলেন। সেখানে এটা-সেটা আলোচনার পাশাপাশি উঠে আসে নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি। এই একটি চায়ের দোকানই শুধু নয়, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে জেলার সর্বত্র মানুষের মুখে মুখে ওসমান পরিবারের নানা অপকর্মের কাহিনি।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দল হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ওসমান পরিবারের ভূমিকা নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মানুষের মুখে মুখে আবারও উঠে আসে ওসমান পরিবারের অপকর্ম। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাদের ভাষ্য মতে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে খান সাহেব ওসমান আলী, শামছুজ্জোহা, নাসিম ওসমান-সেলিম ওসমান-শামীম ওসমান আওয়ামী ও জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে এই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম রাজনীতিতে আসার পর টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হলেও চতুর্থ প্রজন্মে পরিবারটির রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পরিবারটির চতুর্থ প্রজন্ম নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান এবং শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের চাঁদাবাজি, দখল, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জেলার ব্যবসায়ী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও অতিষ্ঠ। অভিযোগ রয়েছে, অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমানের অপকর্মে সায় ছিল শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের দাম্ভিকতা সব সীমা অতিক্রম করে। প্রভাবশালী এই দুই সংসদ সদস্যকে ঘিরে তাঁদের আত্মীয়-স্বজন ও ক্যাডার বাহিনী চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিভিন্ন সময় শামীম ওসমান নিজেকে সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজি ও জঙ্গিবিরোধী আন্দোলনের শাহানশাহ দাবি করে প্রচারণা চালালেও বাস্তবে নানা অপকর্মে জড়িয়ে সমালোচিত হয়েছেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বর্তমান পরিস্থিতিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রবীণ নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের চাঁদাবাজিতে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমান সোনারগাঁ, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে এসব এলাকার শিল্প-কারখানার নির্মাণকাজ, বালু ভরাট, ঝুট ব্যবসাসহ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। জেলার তিনটি সংসদীয় আসন বন্দর-নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা, সোনারগাঁর কেউ এই দুই সহোদর, তাঁদের সন্তান এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ক্যাডারদের পাশ কাটিয়ে বৈধ-অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা চাঁদাবাজি করতে পারতেন না। সব কিছুতে ভাগ বসাত শামীম ওসমান ও তাঁর ক্যাডার বাহিনী। ওসমান পরিবারের সিদ্ধান্ত ছাড়া এসব এলাকায় কেউ একখণ্ড জমিও কিনতে পারত না। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ওসমান পরিবারকে আগে থেকে ম্যানেজ করে তাদের কাঙ্ক্ষিত চাঁদার অর্থ না দেওয়া পর্যন্ত কেউ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারতেন না। দলের কেউ তাদের চাঁদা না দিলে অন্য দলের নেতাদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে দল সমর্থিত প্রার্থী এবং তাঁদের সমর্থকদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে জয়ী করার অনেক নজির আছে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে। এর একটি উদাহরণ ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জনরোষে পড়ার ভয়ে বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ ওসমান পরিবারের সদস্য ও ক্যাডাররা। নারায়ণগঞ্জ শহরে ওসমান পরিবারের একাধিক টর্চার সেল রয়েছে বলেও জানা গেছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশব্যাপী আলোচিত নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত নতুন করে শুরু করেছে র‌্যাব। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের তিন সহযোগী ও গাড়িচালককে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, গ্রেপ্তারের পর আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাজল হাওলাদার আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে তাঁর টর্চার সেলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলে আদালতে জানান তিনি। পরে র‌্যাব সদস্যরা আজমেরী ওসমানের টর্চার সেল ও হত্যাকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করেছেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বী অভিযোগ করে বলেন, ত্বকী হত্যার সাড়ে ১১ বছর পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ত্বকী হত্যাকাণ্ড বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। ওসমান পরিবার যে খুনি পরিবার, তা আবারও প্রমাণিত হলো। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ ত্বকী নিখোঁজ হয়। ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ত্বকীর বাবার অভিযোগ, ক্ষমতার দাপটে গত সাড়ে ১১ বছর ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ বন্ধ রাখেন সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। জেলাবাসী বর্তমানে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ওসমান পরিবারকে দায়ী করে তাদের শাস্তির দাবি করছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান জানান, ওসমান পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে এত দিন সোনারগাঁয় সব ধরনের চাঁদাবাজি ও অপকর্ম করেছে আওয়ামী ক্যাডাররা।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>