<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার টাকা, পেশি আর প্রভাবে নওগাঁর নিজ নির্বাচিনী এলাকায় রাতারাতি অলিখিত সম্রাটে পরিণত হয়েছিলেন। চালের ব্যবসার আড়ালে রাজনীতিকেই টাকা কামানোর প্রধান হাতিয়ার বানিয়ে গড়ে তোলেন সাম্রাজ্য। ভাইলীগ ও সিন্ডিকেটলীগই লাঠিয়াল হিসেবে তাঁর ক্ষমতার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। তাঁর তৈরি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেই প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে সরকারি সব দপ্তরের নির্মাণকাজের ২০ শতাংশ কমিশনও চালু ছিল। বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা যায়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><img alt="সামান্য চাল ব্যবসায়ী থেকে অঢেল সম্পদের মালিক" height="237" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/26-09-2024/5555.jpg" style="float:left" width="316" />কয়েক দিন সাধন চন্দ্র মজুমদারের নির্বাচনী এলাকা ঘুরে অনেকের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, এই জেলায় সড়ক, এলজিইডি, কৃষি, খাসপুকুর, সরকারি জমি ও বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্য ছিল তাঁর দখলে। পরিবারের সদস্যরা তাঁর ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে নওগাঁ জেলায় গড়ে তোলেন মজুমদার সাম্রাজ্য, যার ধাপে ধাপে ছিল অনিয়ম, দুর্নীতি ও দখল বাণিজ্য। ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই প্রভাবশালী খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এখন ফেরার। তাঁকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জানা যায়, ১৯৫০ সালে নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার শিবপুর বলদাহঘাট গ্রামে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় সাধন চন্দ্র মজুমদারের। বাবা মৃত কামিনী কুমার মজমুদার ছিলেন শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সে সময় যোগাযোগব্যবস্থা ভালো ছিল না। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে নওগাঁর নিয়ামতপুরে যেতে হতো সাধারণ মানুষকে। তখন কোনো যানবাহন ছিল না। নৌকায়, হেঁটে, সাইকেলে, ঘোড়ার গাড়ি বা গরুর গাড়িই ছিল চলাচলের মাধ্যম। একেবারে প্রত্যন্ত গ্রাম বলতে যা বোঝায়, তা-ই ছিল নিয়ামতপুর উপজেলাটি। সেই উপজেলার বেশির ভাগ মানুষের কর্ম ছিল কৃষিকাজ। কৃষির সঙ্গেই জড়িত ছিলেন সাধন চন্দ্রের বাবা। তিনি ধান-চালের ব্যবসা করতেন। উপজেলা পর্যায়েও খুব বড় ব্যবসা ছিল না তাঁর। সেই পরিবার থেকে উঠে আসা সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ক্ষমতার স্পর্শ পেয়ে, শুধু রাজনীতি করার কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে বনে যান টাকার কুমির। রাজনীতির আগে গাড়ি না থাকলেও সর্বশেষ তিনি ব্যবহার করেছেন বিলাসবহুল দামি গাড়ি। আগে পাইক-পেয়াদা না থাকলেও ক্ষমতা পাওয়ার পর তাঁর চারপাশে ছিল ডজনখানেক ব্যক্তিগত কর্মচারী। বিভিন্ন সূত্র বলছে, ব্যাংকে তাঁর অঢেল টাকা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নওগাঁ জেলার বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে ও পারিবারিকভাবে জানা যায়, ১/১১ এর পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে ২০০৮ সালে পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাধন। কিন্তু এর আগে এই আসন থেকে আরো দুইবার নির্বাচন করলেও বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে যান। মূলত ১/১১ এর পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনই তাঁর জীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তাঁর নির্বাচনী এলাকায় মানুষের মুখে মুখে ধান ব্যবসায়ী হয়েও তাঁর অঢেল সম্পদ আর টাকার গল্প। মানুষ প্রশ্ন করে, কিভাবে রাতারাতি সে এত টাকার মালিক। এলাকায় অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি নিয়োগ বাণিজ্য, স্কুলে নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি, খাসজমি দখল, খাসপুকুর দখল. নিয়োগ বাণিজ্য, জায়গাজমির কেনাবেচা, সরকারি কাজের ঠিকাদারি কমিশন বাণিজ্য তাঁকে এমন সম্পদ গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। নামে-বেনামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদও গড়েছেন। আছে কালো টাকাও।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পোরশা ঘাটনগর বাজারের মিজানুর রহমান বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নোসনাহারপুকুর, ছয়ঘাটিপুকুরসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি পুকুর মন্ত্রীর ভাই মনা মজুমদার জোরপূর্বক দখল করে, সরকারকে রাজস্ব না দিয়ে নিজেই মালিক সেজে আবার তা লিজ দিয়ে টাকা নিজের পকেটে পুরতেন। এখন ওই সব পুকুরে মনা মজুমদারের লোকই লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের গত দুই সংসদ নির্বাচনে প্রদানকৃত হলফনামা থেকে জানা যায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি হলফনামায় কৃষি খাত থেকে বাৎসরিক আয় দেখান ৩০ হাজার টাকা। কৃষিজমির পরিমাণ দেখান লিজসহ ২৩ বিঘা। ব্যবসা থেকে আড়াই লাখ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত (এফডিআর) দেখান ৪৯ লাখ টাকা। নিজ নামে ব্যাংকে নগদ টাকা দেখান ২১ লাখ ৪১ হাজার ৮০৫ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ছিল ১০ লাখ ৫০০ টাকা। পোস্টাল, সেভিং, সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৩৯ লাখ টাকা। গাড়ি ছিল দুটি। একটির দাম ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা, অন্যটি (এমপি হিসেবে করমুক্ত সুযোগের) ৪১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। বিয়ে সূত্রে পেয়েছেন ১২ ভরি সোনা। এই হলফনাফায় তিনি সই করেন ২ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি হলফনামায় কৃষি খাত থেকে বাৎসরিক আয় দেখান ৩৫ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে দুই লাখ ৯৫ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত (এফডিআর) দেখান এক কোটি ৮৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। নিজ নামে ব্যাংকে নগদ টাকা দেখান এক কোটি ৭৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ছিল ২৪ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা। পোস্টাল, সেভিং, সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৭৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮৩ টাকা। ওই নির্বাচনের সময় মাত্র একটি গাড়ির তথ্য হলফনামায় তুলে ধরেন। হলফনামা মতে, গাড়িটির মূল্য ধরা হয়েছে ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪২ টাকা। গত দুই সংসদ নির্বাচনেও ১২ ভরি সোনাই দেখিয়েছেন। জমিও লিজসহ ২৩ বিঘাই দেখিয়েছেন। এ ছাড়া ১১ কাঠার একটি অকৃষি জমির কথা বলা হয়েছে, যার মূল্য ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩২ টাকা। তবে ২০১৩ সালের হলফনামায় মার্কেন্টাইল ব্যাংক নওগাঁ শাখা থেকে সিসি ঋণ দেখান ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৩৪৮ টাকা। পরের নির্বাচনে তিনি এই ঋণটি সমন্বয় দেখান। ২০১৮ সালের হলফনামায় তিনি ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানি ভাতা পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। আয়ের উৎস অন্যান্য/এফডিআর থেকে প্রাপ্ত সুদ হিসেবে দেখান চার লাখ ১০ হাজার ৫০৯ টাকা। এর আগের নির্বাচনের হলফনামায় সেটা দেখানো হয়নি। ফ্রিজ একটি, ফ্যান তিনটি, খাট দুটি, ড্রেসিং টেবিল একটি, ডাইনিং টেবিল একটি দেখানো হলেও এসির হিসাব দেননি। স্থানীয়রা জানান, এসব তো কাগজে-কলমের হিসাব। তবে তাঁর জীবনযাত্রা ছিল তার চেয়ে কয়েক গুণ ব্যয়বহুল।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের হলফনামার হিসাব ধরলেও তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। এক সংসদ নির্বাচন থেকে অন্য সংসদ নির্বাচনের মধ্যকার সময়ের মধ্যেও তাঁর কোটি কোটি টাকার সম্পদের দেখা মেলে। দুই নির্বাচনের হলফনামায় এসব সম্পদ দৃশ্যত হলেও অদৃশ্য সম্পদ কত আছে সেই প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নিয়ামতপুরের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর ভাই আছেন মনোরঞ্জন মজুমদার মনা। তিনি এগুলো দেখাশোনা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে নির্যাতন করা হবে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এমন ভয় দেখাতেন মনা মজুমদার। এই নির্যাতনের ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। তাঁরা জানান, দখল, টেন্ডার ম্যানেজ, জমি বেচাকেনা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর ভাই মনা মজুমদারের বিরুদ্ধে। তিনি এলাকার সব পুকুর দখল করে মাছ চাষ করতেন। সরকারি জমি দখল নিয়ে নিজেদের জন্য ব্যবহার করতেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, তাঁদের মূল্যায়ন না করে মন্ত্রী সাধন চন্দ্র ভাইলীগ ও সিন্ডিকেটলীগ তৈরি করেছিলেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেই প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন। যেকোনো কাজ শুরু হলেই সাবেক মন্ত্রী সাধন চন্দ্রকে ২০ শতাংশ কমিশন দিতে হতো। খাদ্যমন্ত্রী হলেও নওগাঁ জেলায় তিনি নাক গলাতেন সড়ক, এলজিইডি, কৃষি, খাসপুকুর, সরকারি জমি ও বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে।</span></span></span></p>