<p><strong>[অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে জোঁকের উল্লেখ আছে] </strong></p> <p>জোঁক এনিলিডা প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণী। এর শরীর ঠাণ্ডা ও তুলতুলে। সারা বিশ্বে প্রায় ৬৮০ প্রজাতির জোঁকের বর্ণনা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রায় ১০০টি সামুদ্রিক, ৪৮০টি স্বাদুপানির এবং অবশিষ্ট স্থলজ। সাহারা অঞ্চলে উটের নাসারন্ধ্র, আফ্রিকান জলহস্তীর মলদ্বার, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং গুহা বাদুড়ের শরীর আশ্রয় করে বেঁচে থাকে অনেক জোঁক। অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত জোঁক সারা বিশ্বে পাওয়া যায়। তবে উত্তর গোলার্ধের নাতিশীতোষ্ণ হ্রদ ও পুকুরে এদের সর্বাধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। মিঠা পানির জোঁকের বেশির ভাগই পুকুর, হ্রদ ও ধীরগতির স্রোতের কিনারায় অগভীর, গাছপালাযুক্ত এলাকায় পাওয়া যায়। খুব কম প্রজাতি দ্রুত প্রবাহিত পানি সহ্য করে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় জোঁকের প্রজাতি হলো ‘দৈত্যাকার অ্যামাজনিয়ান জোঁক’। এটি লম্বায় ৪৫০ মিমি (১৭.৭ ইঞ্চি) এবং প্রস্থে ১০০ মিমি (৩.৯) বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশের পাহাড়ি জংলা জলভূমি থেকে শুরু করে হাওর-বিল সব জায়গায় জোঁক দেখা যায়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পেছনের ফটিকছড়ির পাহাড়ি এলাকায় বড় বড় পাইন্যা জোঁক দেখা যায়। এ ছাড়া রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলের জোঁক বিখ্যাত।</p> <p>বর্ষাকালে এসব জোঁক গরু, মহিষের নাকে-মুখে ঢুকে তাদের অনেক বিড়ম্বনা ঘটায়। আমাদের দেশে আঞ্চলিক ভাষায় এগুলোকে ‘খেউরা জোঁক’ বা ‘চীনা জোঁক’ বলে। স্যাঁতসেঁতে ভিজা মাটি এদের পছন্দনীয় আবাস্থল। মাঝারি ও ছোট আকারের গবাদি পশুর রক্তশূন্যতার কারণ এই জোঁক। একটি ছোট বাচ্চাকে যদি তিন-চারটি জোঁক একত্রে ধরে, তবে সেই বাচ্চাটি রক্তশূন্যতার জন্য মারাও যেতে পারে।</p> <p>দেহ থেকে জোঁক অপসারণের জন্য সাধারণত এর গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা, খাবার লবণ, ভিনেগার, সাবান, ক্ষারীয় রাসায়নিক পদার্থ, লেবুর রস বা কিছু কার্বনেট পানীয় ব্যবহৃত হয়। তবে এসব পদ্ধতি চিকিৎসকরা ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। কারণ এসব ব্যবহার করলে জোঁক তার পাকস্থলীর সব কিছু বমি করে দেয়, যা কি না মানবদেহের ক্ষতস্থানে রোগের সংক্রমণ করতে পারে। আবার হাত দিয়ে টেনে জোঁক অপসারণ করাও ঠিক নয়।</p> <p>জোঁকের মধ্যে একটিমাত্র প্রজাতি মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এই জোঁক হিরুডো মেডিসিনালিস বা ঔষধি জোঁক নামে পরিচিত। এই জোঁকের কামড় হলো প্রোটিন এবং এনজাইমসমৃদ্ধ ওষুধের ভাণ্ডার। এই উপাদানগুলো রক্ত সঞ্চালনকে উদ্দীপিত করতে পারে। এ ছাড়া বিপাক ক্রিয়া ও রক্তকোষ তৈরিতে ত্বরান্বিত করে, কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগ, গ্লকোমা, ডায়াবেটিস ও বন্ধ্যাত্বে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপকারে আসে।</p> <p> </p> <p> </p>