<p>জন বি গুডএনাফ হলেন একজন জার্মান-মার্কিন পদার্থবিদ। বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক নোবেলজয়ী হিসেবে পরিচিত তিনি। ২০১৯ সালে ৯৭ বছর বয়সে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়ে তিনি ইতিহাস গড়েন। নোবেল পুরস্কার রসায়নে পেলেও আদতে তিনি একজন পদার্থবিদ। তার আবিষ্কার, বিশেষ করে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি নিয়ে করা গবেষণা, আধুনিক প্রযুক্তির জগতে এক বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। <br /> ১৯২২ সালে জার্মানির জেনেভা শহরে জন্মগ্রহণ করেন জন বি গুডএনাফ। তিনি ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় গভীর আগ্রহী ছিলেন। গুডএনাফ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে পদার্থবিদ্যায় গবেষণায় মনোযোগ দেন। তার শৈশব এবং শিক্ষাজীবন তাকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য প্রস্তুত করে তোলে।</p> <p>গুডএনাফের জীবনের সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উদ্ভাবন। ১৯৮০-এর দশকে তিনি এবং তার দল এই ব্যাটারির উন্নয়নে কাজ করেন। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি হলো এমন এক ধরনের শক্তি সঞ্চয়কারী ডিভাইস, যা আজকের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো প্রযুক্তির ভিত্তি।</p> <p>তার গবেষণা আধুনিক ইলেকট্রনিকস এবং যোগাযোগের জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই ব্যাটারি সাধারণ ব্যাটারির তুলনায় হালকা, দীর্ঘস্থায়ী এবং ফের চার্জ করা যায়। আজকের সময়ে আমরা যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করি, তার অনেকাংশই গুডএনাফের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির আবিষ্কারের ওপর নির্ভরশীল।</p> <p>২০১৯ সালে জন বি গুডএনাফ, ম স্ট্যানলি হুইটিংহাম এবং আকিরা ইয়োশিনোকে যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি তৈরি এবং উন্নত করার ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তারা এই সম্মাননা পান। গুডএনাফ ৯৭ বছর বয়সে নোবেল পুরস্কার পেয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক নোবেলজয়ী হয়ে ওঠেন। তার কাজ আধুনিক সমাজে পরিবেশবান্ধব শক্তি এবং টেকসই প্রযুক্তির ভবিষ্যতের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p>গুডএনাফ সব সময়ই নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন বয়সের ওপর নির্ভর করে না। জীবনের শেষ প্রান্তেও তিনি গবেষণা এবং বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ চালিয়ে গেছেন। গুডএনাফের কাজ এবং অধ্যবসায় নতুন প্রজন্মের বিজ্ঞানী এবং উদ্ভাবকদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা।</p> <p>গুডএনাফের কাজ শুধু প্রযুক্তির উন্নয়নই নয়, পরিবেশ রক্ষায়ও বড় ভূমিকা রেখেছে। তার তৈরি করা লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎসের ব্যবহার বাড়াতে সাহায্য করেছে। তার গবেষণার ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রসার এবং ক্লিন এনার্জির প্রয়োগ আরো সহজ হয়ে উঠেছে।</p> <p>গুডএনাফ এমন একজন বিজ্ঞানী, যিনি তার কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে বিশ্বকে বদলে দিয়েছেন। তার লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ৯৭ বছর বয়সে নোবেল পুরস্কার অর্জন করা তার জন্য যেমন গর্বের, তেমনি বিশ্ববাসীর জন্যও তা একটি বড় সম্মান। বয়স শুধু একটি সংখ্যা মাত্র, যদি আপনার লক্ষ্য স্থির থাকে এবং আপনি নতুন কিছু করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন—তার জীবন থেকে এ শিক্ষা নেওয়াই যায়। জন গুডএনাফের মতো বিজ্ঞানীরা আমাদের পৃথিবীকে আরো সুন্দর ও টেকসই করে তুলতে অনুপ্রাণিত করেন।</p> <p>সূত্র : ব্রিটানিকা</p>