<p style="text-align:justify"><strong>গ্রামে প্রচলিত নাম দেখা কন্ন্যাল বা পুন্ন্যাগগাছই সুলতানচাঁপা গাছ। সুন্দর পাতার বিরল ধরনের গাছটির ফুলও নয়নমনোহর। এটি ছায়াবৃক্ষ হিসেবেও অনন্য</strong></p> <p style="text-align:justify">ছেলেবেলায় পুকুরপারে অনেক গাছের ভিড়ে একটি গাছ আলাদা করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ছোট গাছ, আলাদা করে চোখে পড়ার মতো ছিল তার পাতার সৌন্দর্য।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৩ দিনে গ্রেপ্তার ১০ হাজারের বেশি" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/02/1722569151-8957cc23ce54d0327ea942f5578623bb.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৩ দিনে গ্রেপ্তার ১০ হাজারের বেশি</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/08/02/1411010" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">তখনো ফুল ফোটার বয়স হয়নি। বড়দের মধ্যে কেউ বললেন, গাছটির নাম কন্ন্যালগাছ। সাপ্তাহিক হাটবারে বাজারে একজন বয়স্ক মানুষকে বড় টুকরিতে তেল-চকচকে রঙের গোলাকৃতির কিছু একটা বিক্রি করতে দেখে নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, কন্ন্যাল। মাথায় কিছুই ঢুকল না।</p> <p style="text-align:justify">এই গাছ আর ফলের কথা ভুলেই গেছি। অনেক দিন পর সেই রহস্যের জট খুলল। প্রায় ১৮ বছর আগে মিরপুরে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি ফুলের ছবি তুলতে গিয়ে মনে হলো, গাছটি খুবই চেনা। মনে পড়ল পুকুরপারে দেখা সেই সুদর্শন পাতার গাছটি।</p> <p style="text-align:justify">এই গাছের এমন মনোমুগ্ধকর ফুল! চোখ-জুড়ানো, মন-ভরানো! ছবি তুলে প্রিন্ট করে দেখাই অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মাকে। তাঁর মুখেই প্রথম সুলতানচাঁপার নাম শুনি। গ্রামে দেখা কন্ন্যাল বা পুন্ন্যাগগাছই যে সুলতানচাঁপা, সে রহস্যটাও তিনিই উন্মোচন করেন। ছেলেবেলায় ফুলের সৌন্দর্য খুব একটা চোখে না পড়লেও পরিপক্ব ফল দেখেছি। ঢাকায় গাছটি বেশ দুর্লভ।</p> <p style="text-align:justify">অনেক কষ্টে সংগ্রহ করা দুটি চারা রমনা পার্কে লাগাই ২০১২ সালের দিকে। কয়েক মাসের মধ্যেই গাছ দুটি লাপাত্তা। পরের বছর আবার লাগানো হলো রমনা নার্সারির ভেতর। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে কোনোমতে প্রাণে বেঁচে আছে গাছ দুটি। ইদানীং উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও সংখ্যায় কমেছে।</p> <p style="text-align:justify">২০১৪ সালের জুলাই মাসের বর্ষণমুখর কোনো এক দিন লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে সোনাপুর যাওয়ার পথে সুলতানচাঁপার যে প্রস্ফুটন প্রাচুর্য দেখেছি তা কোনো দিনই ভুলব না। একসঙ্গে পাঁচটি গাছে ফুল ফুটেছে। গুচ্ছবদ্ধ অসংখ্য ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। কিন্তু সেদিন হাতের কাছে পেয়েও ফুলটি অধরাই থেকে গেল! সঙ্গে ক্যামেরা ছিল না।</p> <p style="text-align:justify">অগত্যা মনের জমিনেই তার ছবি এঁকে রাখি। ফিরে এলাম দুঃখবোধ নিয়ে। এই অপ্রাপ্তি অনেক দিন তাড়া করে ফিরেছে। ২০১৫ সালে একেবারে পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে গেলাম সেখানে। না, এবারও নাগাল পেলাম না সুলতানচাঁপার। ফুল ফোটেনি যথাসময়ে। স্থানীয়রা বলল, সম্ভবত আর কয়েকটা দিন পরই ফুটবে। মনে হলো সময়ের গরমিল! অগত্যা ফিরে এলাম।</p> <p style="text-align:justify">অগত্যা মিরপুরে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেনই ভরসা। বর্ষায় কয়েকবার গিয়ে ফুলটির দেখা মিলল।  সেখানে অর্কিডঘরের পেছনের গাছগুলোতে প্রায় প্রতি বর্ষায় অল্প কিছু ফুল ফোটে। সুলতানচাঁপা (Calophyllum inophyllum) চিরসবুজ লম্বাটে গড়নের গাছ। সাধারণত ১২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা ঝলমলে সবুজ, আগা গোল। স্থানানুসারে গ্রীষ্মের শেষ থেকে শীত অবধি সুগন্ধি ফুল ফোটে। তবে প্রধান মৌসুম বর্ষাকাল। শাখায়িত মঞ্জরিতে ছোট ছোট সুগন্ধি সাদা ফুল দুই ধরনের। চার গুচ্ছের পুংকেশর হলুদ রঙের।</p> <p style="text-align:justify">সুলতানচাঁপার কাঠ নানা কাজে লাগে। গাছের বিভিন্ন অংশ ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার্য। বীজ থেকে তৈরি হয় সবুজ রঙের সুগন্ধি তেল। বাজারে এই তেলের নাম ডিমো বা পিনেই অয়েল। তেল বিভিন্ন ধরনের ক্ষত চিকিৎসায় কাজে লাগে। এটি ছায়াবৃক্ষ হিসেবেও অনন্য। এই গাছ থেকে এক ধরনের ধুনা গদ তৈরি হয়, যা বাণিজ্যিকভাবে টাকামাকা ‘গাম’ নামে পরিচিত। বাকলের রস শক্তিশালী রেচক এবং পাতার নির্যাস চোখের ক্ষত নিরাময়ে উপকারী। ফুল চর্মরোগে কার্যকর।</p>