<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/04-10-2024/2/kalerkantho-sl-2a.jpg" height="292" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/04-10-2024/2/kalerkantho-sl-3a.jpg" style="float:left" width="213" />যূথবদ্ধ আদিমানব শুরু করে একবিংশ শতাব্দীর যান্ত্রিক কোলাহলে বিধ্বস্তজনের প্রশান্তির স্থল অরণ্য-প্রকৃতি। গহিন অরণ্যে বিচরণ ও শিকারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে সেই অরণ্যক্রোড়েই আবাস বেঁধেছিল মানুষ। সভ্যতা এবং সমাজের সৃষ্টি ও বিবর্তনে এই মানবেরই বৃহৎ অংশ আজ অরণ্যচ্যুত জনপদের অধিবাসী। আবার ক্রমশ প্রকৃতিমাতার রহস্যেঘেরা গভীর বনাঞ্চলে লোভাতুর দৃষ্টি দিয়েছে তথাকথিত সভ্য সমাজেরই কিছু মানুষ। যাদের শ্যেনদৃষ্টিতে বিনষ্ট হচ্ছে আরণ্যক পরিবেশ-প্রতিবেশ। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধিত্বশীল উপন্যাস আরণ্যক (১৯৩৯)। বিহারের ভাগলপুর পাথুরিয়াঘাটা এস্টেটে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে ইসমাইলপুর এবং আজমাবাদের অরণ্যবেষ্টিত পরিবেশে দিনযাপনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সৃষ্টচরিত্র সত্যচরণের বর্ণনায় উপন্যাসে উত্তম পুরুষের দৃষ্টিকোণে অভিব্যক্ত করেছেন ঔপন্যাসিক। বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় কুশী নদীর অপর প্রান্তের আজমাবাদ, লবটুলিয়া, ইসমাইলপুরসংলগ্ন সুবিস্তৃত অরণ্যময় অঞ্চল এ উপন্যাসের স্থানিক পটভূমি। প্রস্তাবনাসহ ১৭টি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত এ উপন্যাস।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেকার সত্যচরণ আকস্মিকভাবেই বন্ধু জমিদারপুত্র অবিনাশদের পূর্ণিয়া জেলায় অবস্থিত জঙ্গলমহাল দেখাশোনার </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপযুক্ত লোক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হিসেবে মনোনীত হয়। বস্তুত এখানে তার প্রধান কাজ হলো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বনাঞ্চল উজাড় ও বসবাসের উপযোগী করে প্রজাবিলি করা এবং খাজনা আদায়। প্রথম দিকে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হয় তাকে। এখানকার বাসিন্দাদের জীবনধারা, ভাষা প্রভৃতি পর্যবেক্ষণ করে তাদের মূর্খ, বর্বর মনে হয়। কিন্তু ক্রমশ বনজঙ্গলের মায়াময় রহস্যঘেরা পরিবেশ, প্রকৃতির বিশালতা, বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য, আর আজন্ম প্রকৃতিমাতার কোলে লালিত মানুষের সারল্য, স্বাতন্ত্র্য প্রভৃতি বিমুগ্ধচিত্তে অবলোকন করে সত্যচরণ। তার দৃষ্টিকোণ থেকে ক্রমশ উন্মোচিত হতে থাকে গভীর অরণ্যে প্রকৃতির রহস্যমণ্ডিত অপার সৌন্দর্যের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">Harmony</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এবং নাগরিক কোলাহল থেকে দূরে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিমণ্ডলে বসবাসকারী মানবসম্প্রদায়ের দিনযাপনের চিত্র। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপন্যাসটিতে কুন্তা, রাজু পাঁড়ে, ধাতুরিয়া, যুগলপ্রসাদ, মঞ্চী, সাঁওতাল রাজা দোবরু পান্না, ভানুমতী প্রভৃতি অরণ্য-মানবের প্রতিনিধি। যাদের কাছে ভাত পরমান্নসম। কেননা কলাই ও মকাইয়ের ছাতু, গুড়মী ফল, খেড়ীর দানা সিদ্ধ আর বাথুয়া শাক সিদ্ধ প্রভৃতিই তাদের ক্ষুন্নিবৃত্তির সামান্য উপায়; এর সঙ্গে রয়েছে চৈত্র-বৈশাখ মাসের তীব্র জলকষ্ট। ভারতবর্ষের নাম তাদের অজানা। তাদের রয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা একটি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। প্রভৃতির সঙ্গে নিত্য লড়া এই মানুষগুলো যেন জীবনসংগ্রামে হয়ে উঠেছে এক একজন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সত্য পুরুষ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপন্যাসে সত্যচরণের প্রধান দায়িত্ব জমিদারের আজ্ঞাবহরূপে প্রকৃতিরাজ্য ধ্বংস ও মনুষ্য বসবাসের উপযোগী করা। শেষ পর্যন্ত তার হাতে প্রকৃতির বিনাশ সাধিত হয়েছে, সেখানে গড়ে উঠেছে জনপদ; যাতে পরিপূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ক্ষমতাশালী মানবের তথা ভূস্বামীর। বিত্তশালী মাড়োয়ারিরা অর্থের বিনিময়ে পেয়েছে সেই ভূমির দখল। অরণ্য-নিধন কর্মের জন্য শেষ পর্যন্ত সত্যচরণের মধ্যে দেখা যায় অনুশোচনা। তাই তো আরণ্যক প্রতিবেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় তার কণ্ঠে নিঃসৃত হয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হে অরণ্যানীর আদিম দেবতারা, ক্ষমা করিও আমায়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রায় পনেরো-ষোলো বছর অতিক্রান্ত হলেও আপন কৃতকর্মের জন্য দগ্ধ হয় সে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রন্থনা : পিন্টু রঞ্জন অর্ক</span></span></span></span></p>