<p>আমরা যাকে ডায়াবেটিস বলে জানি তা মূলত ডায়াবেটিস মেলাইটাস। ডায়াবেটিস মেলাইটাস দুই ধরনের- টাইপ-ওয়ান ও টাইপ-টু। আমরা সবাই জানি যে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অন্য সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো কিডনিও ধীরে ধীরে আক্রান্ত হতে পারে। দুনিয়াজুড়ে কিডনি ফেইলিউর বা কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম মূল কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষের কিডনি সমস্যা হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, পরিবারে কিডনি রোগ ইত্যাদি কারণে কিডনি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।</p> <p><strong>কিডনিতে যে ধরনের সমস্যা হয়</strong><br /> শরীরের ছাঁকনির কাজ করে কিডনি। এই ছাঁকনি রক্তের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। এই ছাঁকনি ডায়াবেটিস, প্রেসার ইত্যাদি কোনো  কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন-প্রোটিন, প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হতে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এটির চিকিৎসা করা সম্ভব হলেও ধীরে ধীরে এটি সম্পূর্ণ কিডনি বিকল করে ফেলতে পারে । কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে কিডনি ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে।</p> <p><strong>কিডনি ভালো রাখার উপায়</strong><br /> ডায়াবেটিস রোগীর কিডনি ভালো রাখার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। রক্তে শর্করার মাত্রা ও রক্তচাপ যেন কোনোভাবেই অনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে চলে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিডনি ভালো–মন্দ কী অবস্থায় আছে, তা জানতে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ও প্রস্রাবে প্রোটিনের পরিমাণ পরীক্ষা করা জরুরি। এসবের পাশাপাশি নিম্নোক্ত নির্দেশনা মেনে চলতে হবে- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যতালিকা, খাবারে লবণ ও প্রোটিনের পরিমাণ বিশেষত প্রাণিজ প্রোটিনের পরিমাণ কম রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান বর্জন করাসহ যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা।</p> <p><strong>কিডনি খারাপ হলে</strong><br /> কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। এগুলো যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং ক্ষেত্রবিশেষে ঝুঁকিপূর্ণ বটে। কাজেই কিডনি যাতে বিকল না হয় সেদিকেই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। কিডনি খারাপ হলে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে- সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে পরিশ্রম করা, কাঁচা/ভাজা লবণ না খাওয়া, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন থেকে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা, গরু খাসি চর্বিজাতীয় খাবার না খাওয়া, ব্যথার ওষুধ না খাওয়া, ধূমপান না করা। সে সাথে কিছু ওষুধ যা কিডনির জন্য উপকারী, ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক যার জন্য যেটা প্রযোজ্য সেটা গ্রহণ করতে হবে এবং অবশ্যই নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিজের কিডনির অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।</p> <p>লেখক: কনসালটেন্ট, নেফ্রলজি বিভাগ, এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা</p>