<p>ক্যারিয়ারের দুই দশকে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মডেল ও অভিনেত্রী রুনা খান। সিনেমায়ও তার অভিনয় সমালোচকদের কাছে প্রশংসা পেয়েছে। শুধু অভিনয়েই নয়, বয়স বাড়ার সঙ্গে নিজের রূপ-লাবণ্যও ধরে রেখেছেন এই অভিনেত্রী। চল্লিশ পেরিয়ে এখনও আবেদনময়ী রুনা খান। তবে বর্তমানে অভিনয় করেন বেছে বেছে। ফলে কম কাজ হলেও বরাবরই প্রশংসিত হন তিনি। সম্প্রতি সম্পন্ন করেছেন ‘লীলামন্থন’ ছবির শুটিং। হাতে রয়েছে আরো একাধিক কাজ। সেসব নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p><strong>কেমন যাচ্ছে দিনকাল?</strong></p> <p>ভালো। মেয়ে, মেয়ের বাবা, তিনজনের ছোট্ট একটি পরিবার। সবাই সুস্থ আছি। পারিবারিকভাবে খুব আরামে আছি।</p> <p><strong>‘লীলামন্থন’ ছবির কাজ কতদূর?</strong></p> <p>শুটিং শেষ। ৮ নভেম্বর থেকে টানা ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শুটিং হয়েছে। তবে আমার শুটিং ২২ নভেম্বরেই সম্পন্ন হয়ে গেছে। ঢাকার আশপাশে কিছু লোকেশনে শুটিং হয়েছে। শুটিং হওয়ার কথা ছিল আগস্টে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে একটু বিলম্ব হলো। যেহেতু ঢাকার বাইরে শুটিং, ৪০-৫০ জনের একটা টিম, নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হয়েছে। শেষমেশ এই নভেম্বরে আমাদের শুটিং পর্ব শেষ হলো।</p> <p><strong>কী কারণে এই ছবি করলেন? আপনার মুগ্ধতার জায়গাটা জানতে চাই...</strong></p> <p>এ বছর জানুয়ারিতে জাহিদ ভাই আমাকে দুটি ছবির চিত্রনাট্য পাঠিয়েছিলেন। দুটি গল্পই ভালো। তবে একটি গল্পে তিনি আমাকে যে চরিত্রে ভেবেছেন, সেটা আমি এখনই করতে চাই না। দ্বিতীয় গল্প ‘লীলামন্থন’-এর গল্প ও চরিত্র আমার খুব পছন্দ হয়েছে, তাই করেছি। এত চমৎকার গল্পে এত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আমাকে ভেবেছেন, এ জন্য জাহিদ ভাইয়ের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। একটা কথা বিশেষভাবে বলতে চাই, তার মতো এত চমৎকার মৌলিক গল্প ভাবার মতো মানুষ খুব কম আছেন।</p> <p><strong>আপনার সহশিল্পী শহীদুজ্জামান সেলিম। তার সঙ্গে দীর্ঘদিনের অভিনয়-অভিজ্ঞতা। এবারের কাজটি কেমন হলো?</strong></p> <p>সেলিম ভাইয়ের সঙ্গে এটা আমার প্রথম ছবি। এর আগে আমরা প্রচুর নাটক করেছি। ‘সিসিমপুর’-এর পর শমী কায়সার আপুর নির্মাণে একটি ধারাবাহিকে প্রথমবার সেলিম ভাইয়ের সঙ্গে অভিনয় করেছিলাম। এরপর অনেক একক ও ধারাবাহিকে একসঙ্গে কাজ করেছি। বাবা-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকা—প্রায় সব চরিত্রে অভিনয় করেছি আমরা। এর আগে আমি যে পাঁচটি ছবি করেছি, সেগুলোর নির্মাতা ও সহশিল্পীরা সবাই নাটক ও থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষ। এই ছবির পুরো টিমই মূলধারার সিনেমার। একেবারে নতুন একটা অভিজ্ঞতা হলো। আমি যত নাটক-সিনেমা করেছি, সেগুলোর জন্য বারবার চিত্রনাট্য নিয়ে বসেছি, অনুশীলন করেছি। দৃশ্য ছোট হোক বা বড়, সংলাপ মুখস্থ করেছি। ‘লীলামন্থন’-এ হলো বিপরীত। এখানে সংলাপ মুখস্থ করার বিষয় নেই, পাশ থেকে একজন সংলাপ বলে দেন, সেটা শুনেই শট দিয়েছি। ডিরেক্টর অ্যাকশন বলার পরও আশপাশে সবাই কথা বলতে থাকে, নানা শব্দ কানে আসে। প্রথম দুই দিন আমার এত অসুবিধা হয়েছিল, বলে বোঝাতে পারব না। ধরুন, ভীষণ ইমোশনাল দৃশ্য, আমি পাগলের মতো কাঁদছি, এর মধ্যে রান্নাঘরে কথা হচ্ছে, ফোন বাজছে! এসব নিয়ে নির্মাতার সঙ্গে রীতিমতো তর্ক করেছি। এই বিষয়গুলোতে তো আমি অভ্যস্ত নই। পরে সেলিম ভাইকে বললাম, আমি মানিয়ে নিতে পারছি না, মানসিকভাবে অস্বস্তির মধ্যে ছিলাম। সেলিম ভাই আমাকে বেশ উৎসাহ দিয়েছেন। জানিয়েছেন, তার কোনো অসুবিধা হয় না। তার উৎসাহ ও সহযোগিতায় ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। এ জন্য ভীষণভাবে তার প্রতি কৃতজ্ঞ। এই ছবিতে আমার নাম রাশিদা। পর্দায় যদি তাকে দেখে রাশিদা মনে হয়, বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়, এর কৃতিত্ব অনেকাংশেই শহীদুজ্জামান সেলিম ভাইয়ের। রাশিদাকে আমার কাছে দিয়েছেন জাহিদ ভাই, আর সেটাকে বিশ্বাসযোগ্য করেছেন সেলিম ভাই। এখানে আমার আরেকজন সহশিল্পী ইমতিয়াজ বর্ষণ। তিনিও আমার খুব পছন্দের অভিনেতা।</p> <p><strong>কোন কাজটি করবেন, কোনটি করবেন না, নিজের সঙ্গে এটা নিয়ে বোঝাপড়া কিভাবে করেন?</strong></p> <p>আমি যখন অভিনয় শুরু করি ২০০৫-এ সিসিমপুর দিয়ে, তখন আমার ভাবনা ছিল, আমি নতুন মানুষ। যত কাজ করব, তত আমাকে পর্দায় দেখা যাবে, মানুষ চিনবে। অভিনয়শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তখন মূল উদ্দেশ্য ছিল। ফলে শৈল্পিক কাজ যেমন করেছি, তেমনি অনেক হালকা-হাসির নাটকও করেছি। ২০০৯-এ আমি বিয়ে করি এবং এর পরপরই আমি সন্তান গ্রহণ করি। মাতৃত্বের জন্য তিন বছর বিরতিতে ছিলাম। পরে যখন ফিরলাম, এক বছর প্রচুর কাজ করেছি। কিন্তু হঠাৎ আমার উপলব্ধি হলো, শুধু কাজের জন্যই কাজ করতে চাই না। যে কাজে আমার অভিনয় সমৃদ্ধ হবে, সে সম্ভাবনা যে কাজগুলোতে দেখতে পাব, সেগুলোই করতে চাই। অভিনয় আমার আদতে ভালোবাসা, তারপর পেশা। হিসাব করলে দেখা যাবে, এক বছরে আমার একটি ছবি। পেশাদার অভিনয়শিল্পী হিসেবে এত অল্প কাজ দিয়ে তো টিকে থাকা সম্ভব না। এ ধরনের ছবিতে আসলে কতটুকু পারিশ্রমিকই বা পাই! এরপরও টিকে আছি, কারণ পারিবারিক জীবনে সংসারের দায়িত্ব নিয়ে আমাকে চিন্তা করতে হয় না। তাই সারা বছর কাজ করব, এই ভেবে আমি প্রজেক্ট বাছাই করি না; বরং যে কাজগুলোতে আমার অভিনয় সমৃদ্ধ হবে, সেগুলোই করি। দর্শক হিসেবে আমি সব ধরনের ছবিই দেখি। তবে নিজে অভিনয়ের ক্ষেত্রে সে ছবিই করতে চাই, যেখানে জীবন দেখতে পাওয়া যায়।</p> <figure class="image"><img alt="5" height="563" src="https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/378557404.jpg" width="450" /> <figcaption><sub><em>রুনা খান</em></sub></figcaption> </figure> <p><strong>‘লীলামন্থন’ ছাড়া আর কোনো ছবি করছেন?</strong></p> <p>আরো দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবির শুটিং সম্পন্ন। একটি মাসুদ পথিকের ‘বক’, এটি কবি জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘আট বছর আগের একদিন’-এর ছায়া অবলম্বনে নির্মিত। এখন সম্পাদনার কাজ চলছে। আরেকটি ছবি কৌশিক শংকর দাশের ‘দাফন’। এখানে আমি কুলসুম নামের এক মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ছবি এটি।</p> <p><strong>ওয়েবে সর্বশেষ কাজল আরেফিন অমির ‘অসময়’-এ ভূয়সী প্রশংসা পেলেন। নতুন কিছু করলেন? </strong></p> <p>শাহরিয়ার নাজিম জয়ের ওয়েব সিরিজ ‘পাপ কাহিনী’র শুটিং সম্পন্ন করেছি। এটা আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে। তৌফিক এলাহির স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘নীল পদ্ম’র কাজও শেষ। এখানে আমি এক যৌনকর্মী নীলার ভূমিকায় অভিনয় করেছি। নীলার মধ্য দিয়ে এই সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনের গল্প তুলে ধরা হচ্ছে। নাটকে আপাতত কোনো কাজের খবর দিতে পারছি না।</p> <p><strong>ইচ্ছা করেই নাটক কমিয়ে দিয়েছেন, নাকি ভালো গল্পের অপেক্ষা?</strong></p> <p>অভিনয়ে আমি মাধ্যমকে আলাদা করতে চাই না। আমার কাছে মঞ্চ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, ওটিটি ও বিজ্ঞাপনচিত্র, সব কিছুর গুরুত্ব সমান। চরিত্র ও গল্প পছন্দ হলে যেকোনো মাধ্যমেই আমি অভিনয় করব।</p> <p><strong>দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি কেমন দেখছেন? মাঝে কিছু দিন একদম চুপচাপ ছিলেন...</strong></p> <p>১৫ জুলাই যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আঘাত করা হয়, সে দিন আমি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। একটি আহত ছাত্রীর ছবি। শোবিজে সম্ভবত প্রথম পাঁচ-দশজনের মধ্যে আমি একজন, ওই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছি। দেখুন, যারা রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পান, মূলত তারাই রাষ্ট্রের বিভিন্ন আয়োজনে আমন্ত্রণ পান। কিন্তু গত দশ বছরে অনেককেই দেখেছি, যারা কোনো পুরস্কার পায়নি, অথচ আয়োজনে হাজির! কিভাবে গিয়েছিলেন? এসবকে আমি বলি মানহীন চর্চা। আমি ২০১৯ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। এরপর প্রত্যেক স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের চিঠি এসেছে আমার বাড়িতে, কখনো যাইনি। আমি অভিনয়কর্মী, অভিনয়ই করে যাব। রাজনীতি নিয়ে আগেও যেমন আলাদা মনোযোগ চাইনি, এখনো চাই না, ভবিষ্যতেও চাইব না। এর মানে কিন্তু এই না, আমার রাজনৈতিক চিন্তা-দর্শন নেই। অবশ্যই আছে। আমাকে যদি দেশের পাঁচজন মানুষ চেনেন, অভিনয়ের জন্যই। অভিনয় ও মডেলিং আমার কাজের ক্ষেত্র। আমি চাই আমাকে নিয়ে যত আলোচনা হবে, সেটা হবে শুধুই আমার কাজ নিয়ে।</p>