<p>নজরুলসংগীত শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী। শৈশব থেকে সংগীত পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন। শৈশবে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন আয়োজিত আন্তজেলা সংগীত প্রতিযোগিতায় নজরুলসংগীত পরিবেশন করে চ্যাম্পিয়ন হন।  তার বাবা কবি তালিম হোসেন ছিলেন নজরুল গবেষক ও নজরুল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা। মা বেগম মাফরুহা চৌধুরী ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। বড় বোন শবনম মুশতারী আর মেঝো বোন পারভীন মুশতারীও নজরুলসংগীতের খ্যাতিমান শিল্পী। </p> <p>এ বছরের মে মাসে নজরুল পুরস্কার পেয়েছেন ইয়াসমিন মুশতারী। সংগীত সাধনা ও নানা প্রসঙ্গে শিল্পীর সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p><strong>গানের ব্যস্ততা কি ফিরেছে?</strong></p> <p>দেশে রদবদলের কারণে সবার কাজেই একটা বিরতি গেল। সেটা ক্রমে কাটছে, ব্যস্ত হচ্ছি। আমি বরাবরই একটু চুজি। বেছে বেছে খুব কম কাজই করি। দেওয়ার মতো খবর এখন নেই। সংস্কৃতি অঙ্গন আরেকটু ঝরঝরে হতে হবে। আয়োজকরা নানা কারণে ঝিমিয়ে পড়েছেন। তাঁরা এগিয়ে এলে আবারও সংগীতময় হয়ে উঠবে দেশ। দেখুন, সংস্কৃতির চর্চা না থাকলে কোনো দেশ এগোয় না। তবে অবশ্যই সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা হতে হবে, যেখানে কোনো বিভেদ, দলাদলি থাকবে না।</p> <p><strong>টিভি চ্যানেলগুলোতে গানের অনুষ্ঠান তো নিয়মিত হয়। কিন্তু নজরুলসংগীত নিয়ে আয়োজন দেখা যায় না বললেই চলে।</strong> এর<strong> কারণ কী?</strong></p> <p>কোনো কারণ তো থাকার কথা না। আমাদের বড় বড় কবি যাঁরা আছেন, তাঁদের সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখা উচিত। দেখা গেল, নজরুলকে নিয়ে কিছু দিন উন্মাদনা হলো, পরে আর খবর নেই; এটা তো কোনোভাবেই ঠিক না। তাঁরা আকাশের নক্ষত্র হয়ে আছেন, আমরাই বরং হতভাগা, তাঁদের নিয়ে যথেষ্ট চর্চা করতে পারি না। তাঁরা যে সমুদ্রসমান সৃষ্টি রেখে গেছেন, সেগুলো নিয়ে চর্চা হওয়া দরকার। আশা করছি, শিগগিরই এই সংকট কেটে যাবে। যদিও এখন হাল ধরার মানুষ কম। আমাদের বিজ্ঞ মানুষদের অনেকেই চলে গেছেন। তাঁদের জায়গা পূরণ হবে কিভাবে? তাঁদের মতো সময়, শ্রম, বুদ্ধি নিয়ে কাজ করার মতো মানুষ খুব কম।</p> <p><strong>আগে নজরুলসংগীতের অ্যালবাম নিয়মিত প্রকাশিত হতো। এখন সিঙ্গেল গানও সেভাবে আসে না। গানের আনুষ্ঠানিক</strong> প্রকাশনাও<strong> কমে গেছে... </strong></p> <p>করোনার সময় আমি কিছু লাইভ প্রগ্রাম করেছি। ঘরবন্দি থাকায় মানুষের সংগীতের তৃষ্ণা বেড়ে গিয়েছিল। পাগলের মতো গান শুনেছি। দুই ঘণ্টার লাইভে যোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু দর্শকের অনুরোধে চার ঘণ্টা গান করতে হয়েছিল। তখন মনে হয়েছে, ভালো গানের শ্রোতার অভাব নেই; বরং প্ল্যাটফরমের অভাব আছে। যুতসই প্ল্যাটফরম যদি গড়ে তোলা যায়, আবারও সুদিন ফিরবে। আমি কোনো কিছুর সাতে-পাঁচে না থেকে যতটুকু করা যায়, তাই করে যাচ্ছি। নজরুলসংগীতের অনুষ্ঠান কিংবা গান প্রকাশ কেন কমে গেছে, কারণটা জানতে চাই না; তবু কানে এসে পড়ে-পৃষ্ঠপোষক পায় না। এটা শুনলে অপমান বোধ হয়। স্পন্সর পাও না মানে! তোমরাই কবিকে ভালোভাবে জানো না। যারা স্পন্সর দেয়, তারাও হয়তো সব কিছুর জ্ঞান রাখে না।</p> <p><strong>এখন তো শিল্পীদের অনেকে নিজ উদ্যোগে গান প্রকাশ করেন। আপনি সে পথে পা বাড়াচ্ছেন না কেন?</strong></p> <p>আমি গান শিখেছি, চর্চা করেছি, আমার মধ্যে যদি ভালো কিছু থাকে, তাহলে আয়োজক বা প্রযোজক নিজ থেকে এসেই গান করাবেন। এটাই একজন শিল্পীর মর্যাদা। নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে গান করা শিখিনি, এটা পারবও না। যারা আয়োজক, তাঁরা এগিয়ে এসে আমাদের মূল্যায়ন করবেন। আয়োজন করার জন্য তো আমরা গান শিখিনি।</p> <p><strong>নিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকেও তো গান প্রকাশ করা যায়...</strong></p> <p>শুনলে হাসবেন, আমি এখনো পর্যন্ত ইউটিউবে ব্যক্তিগত কোনো চ্যানেল করিনি। তবে ইদানীং অনেকের পরামর্শে ইচ্ছাটা জেগেছে। এটা যুগের চাহিদা। শুনেছি এখান থেকে টাকাও আয় করা যায়। আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করি, সেগুলো কিন্তু নামে-বেনামে অনেকেই ইউটিউবে আপলোড করেন। এ জন্য কাছের মানুষ বলছেন নিজে চ্যানেল করতে। যদিও এর পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। সংসার, পারিবারিক জীবন সামলে এসব করা আমাদের মতো মানুষের পক্ষে বেশ কঠিন। ইচ্ছা আছে, আমার বিভিন্ন অ্যালবামের গানগুলো নতুনভাবে ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করব। গজলসম্রাট মেহেদী হাসানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি গজল অ্যালবাম করেছিলাম আমি। সে গানগুলোও এক এক করে ছাড়ব।</p> <p><strong>আপনার বাবা নজরুলসংগীতের চর্চা বিকশিত করেছেন। আপনার দুই বোনও নজরুল সংগীতের গুণী শিল্পী। পরিবারে নজরুলচর্চার বিষয়টা নিয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই... </strong></p> <p>আব্বার কথা ভাবলে মনে হয়, মানুষ কেন বাঁচে না! আমার আব্বা কবি তালিম হোসেন একজন নজরুলকর্মী। সব বিষয়ে তাঁর অগাধ জ্ঞান ছিল। নজরুল একাডেমি গড়ে তুলেছিলেন। আঙুরবালা দেবীর মতো বিখ্যাত শিল্পী আব্বার আমন্ত্রণে এসে গান করেছিলেন। বিখ্যাত শিল্পী-সাহিত্যিকরা আমাদের বাড়িতে আসতেন। এ রকম পরিবেশে বড় হয়েছি। নজরুল একাডেমির যাবতীয় কার্যক্রম, নজরুলকে নিয়ে ম্যাগাজিন বের হতো, ঘরে বসে সেটার প্রুফ দেখতেন আব্বা। এসব নিয়ে সারাক্ষণ বাড়িতে নজরুলচর্চা হতো। সেখান থেকেই নজরুলের প্রতি মুগ্ধতা। আমার মা মাফরুহা চৌধুরীর কথাও বলতে চাই। গুণী সাংবাদিক ছিলেন তিনি। আব্বার কাজের পেছনে তাঁর অবদানও অসামান্য।</p> <p><strong>নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?</strong></p> <p>চর্চার বিকল্প নেই। যদিও এটা পুরনো কথা, তবে এটাই সত্য। ভালো গান শুনতে হবে। যাঁরা সুরে-তালে গেয়ে গেছেন, তাঁদের গান শুনতে হবে। আর কানের মধ্যে যদি সুরেলা গান বসে, তখন গলাও সেভাবে পরিণত হয়।</p>