<p>নারায়ণগঞ্জে গত দেড় দশকে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা নানা পন্থায় উপার্জন করেছেন কোটি কোটি টাকা। ছাত্র নয় এমন নেতাও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। গত জুলাই ও আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এসব নেতাদের হাতে দেখা গেছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। ৫ আগস্টের পর তারা আবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কেউ আছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, কেউ আছেন মালয়েশিয়ায়। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সেইসব ছবিও ভাইরাল হয়েছে।</p> <p>স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালের ১০ মে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন হয়। এতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আজিজুর রহমান আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আশরাফুল ইসমাইল রাফেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আহ্বায়ক পদে থাকা হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকা হাসনাত রহমান বিন্দুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটের আট দিন আগে ৮ জানুয়ারি মহানগরের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। আর চলতি বছরের ২২ মার্চ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।<br />  <br /> <strong>হাজী শাহ মুহাম্মদ সোহাগ রনি</strong></p> <p>২০১১ সালে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশের আগে সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া এলাকায় পুরান বাজারে মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতেন। পরে প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের বন্ধু হওয়ার সুবাদে তাকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি। তখন সোনারগাঁয়ে এলজিইডিসহ বিভিন্ন টেন্ডারের কাজ সে একাই বাগিয়ে নিত। ওসমান পরিবারের প্রভাব খাটিয়ে সেই থেকে টাকার সাম্রাজ্য গড়ে তোলা শুরু করেন তিনি। মোঘরাপাড়া পুরান বাজারে তার একটি তিনতলা বাড়ি, ফুলবাড়ি এলাকায় চারতলা বাড়ি, কামারগাঁও এলাকাতেই গড়েছেন ৭ তলা বাড়ি ও দোতলা নতুন ভবন। রূপায়ণ আবাসিক এলাকায় রয়েছে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার বাজারমূল্য প্রায় চার কোটি ৫০ লাখ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার মূল্যের জমি। কামারগাঁও এলাকায় তার আরো পাঁচ খণ্ড জমি রয়েছে। শহরের জামতলা আবাসিক এলাকায় এনএস টাওয়ারে দেড় কোটি টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। ব্যক্তিগতভাবে চলাচলের জন্য তার রয়েছে দুটি গাড়ি। এখানেই শেষ নয়। প্রভাব খাটিয়ে মেঘনা ইকোনমিকস জোনের কনস্ট্রাকশন ব্যবসা থেকে শুরু করে মেঘনা ইকোনমিকস জোনের সব ব্যবসায় ভাগ বসিয়ে তার একক নিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলেন। তার আলাদীনের চেরাগকে বৈধ করতে প্রতিষ্ঠা করেন তার নিজস্ব কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন- সোনারগাঁ রিসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি, সুলতান কনস্ট্রাকশন, সাফওয়ান ট্রান্সপোর্ট, ওভারসিজ কম্পানি, সৌদি আরবের জেদ্দা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠাসহ নদীপথে একাধিক ড্রেজার বাল্কহেডও রয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি নিখোঁজ।</p> <p><strong>আহমেদ কাউসার</strong></p> <p>স্কুলের গণ্ডি পার হননি, কিন্তু পরিচয় দিতেন ছাত্রলীগ নেতা। বাবা একসময় ডাব বিক্রি করতেন। শহরের নলুয়া এলাকার কাউসার নিজে শহরের রিভারভিউ মার্কেটে একটি দোকানে চাকরি করতেন। শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে তার উত্থান শুরু। ২০১৭ সালের দিকে অয়ন তাকে ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। বিভিন্ন স্থান থেকে অয়নের সব কালেকশন হতো কাউসারের মাধ্যমে। মুহূর্তে ঘুরে যায় জীবনচিত্র। নলুয়াতে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি দুই তলা ভবন নির্মাণ করেন। গত বছর পাশেই আরো একটি পাঁচ তলা ভবন কিনেন। শহীদনগর ও আশপাশ এলাকায় প্রচুর জমির মালিক তিনি। গত ৫ আগস্টের আগে নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রবাজির ঘটনায় তার একাধিক ছবি প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে অস্ত্র হাতে তাকে দেখা গেছে অসংখ্যকবার।</p> <p><strong>হাবিবুর রহমান রিয়াদ</strong></p> <p>অয়ন ওসমানের বন্ধু ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। সরকারি তোলারাম কলেজ ছিল তার দখলে। বনে যান স্বঘোষিত ভিপি। একই সঙ্গে ছিলেন কলেজ ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি। শহরের মাসদাইর এলাকার প্রধান বাড়ির ছেলে রিয়াদের ভাগ্য ঘুরে যায় গত এক দশকে। জালকুড়ি ও ভূইগড়ে ৫০ শতাংশ জমির মালিক হয়েছেন তিনি। ছাত্রলীগের প্রভাবে অয়নের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে কোটি টাকা কামিয়েছেন ঝুট ব্যবসা ও টেন্ডারবাজি করে। </p> <p>নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি জাহিদ সুজন জানান, হাবিবুর রহমান রিয়াদ ২০০৭-০৮ সেশনের অনার্স বর্ষের ছাত্র হয়েও তোলারাম কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করে রেখেছিল। সেখানে ভর্তি বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যুতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। রিয়াদের এক চাচা যার নাম হচ্ছে আশা। তাকে আশা ডাকাত নামে সবাই চেনে। রিয়াদের মেজো চাচা জুয়ার বোর্ড বসাতেন। নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় তিনি জুয়ার বোর্ড বসাতেন আগে।</p>